Cvoice24.com

মাদককারবারি ভাইকে ছিনিয়ে নিলেও গুলিতে জীবন গেল বোনের, ফের পুলিশের সাড়াশি অভিযান হানিফের ডেরায়

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৪০, ২০ নভেম্বর ২০২২
মাদককারবারি ভাইকে ছিনিয়ে নিলেও গুলিতে জীবন গেল বোনের, ফের পুলিশের সাড়াশি অভিযান হানিফের ডেরায়

নিহত হানিফের বোন নাজমা আক্তার নাজু।

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার মোহরার রেললাইন কেন্দ্রিক মাদকের আস্তানা থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক সম্রাট হানিফকে আটক করেছিল পুলিশ। তবে ভাইকে ছিনিয়ে নিতে বিশাল হিজড়া বাহিনী নিয়ে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় বোন নাজমা আক্তার নাজু (২২)। ফাঁড়ি ভাঙচুর করে মাদককারবারি হানিফ ও সহযোগী শরীফকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারলেও দিতে হয়েছে নিজের জীবন বিসর্জন। আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে হানিফ বাহিনীর সংঘর্ষে গুলিতে গুরুতর আহত হয় নাজমা আক্তার নাজু।  তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এবং পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করা হয়নি। 

অন্যদিকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার পর শনিবার রাত ১১টার দিকে মৌলভী বাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় হানিফের ডেরায় ব্লক রেইড দেয় পুলিশ। সিএমপির উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মোখলেসুর রহমানের নেতৃত্বে চান্দগাঁও থানা ও সিএমপির দাঙ্গা পুলিশের বিশাল বহর সেখানে অভিযানে নামে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সাঁড়াশি অভিযানে তিন হিজড়াসহ সাতজনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন নারী, তিনজন হিজড়া ও তিনজন ছেলে রয়েছে। এছাড়া পলাতক হানিফকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপির উপ কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘হানিফের আস্তানায় আমরা রাতে তিন প্লাটুন পুলিশ নিয়ে অভিযান চালিয়েছি। সেখান থেকে মোট সাতজনকে আটক করে ফাঁড়িতে এনেছি। হানিফকেও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ 

এদিকে ফাঁড়িতে হামলা করে ইয়াবা কারবারি ভাই হানিফকে ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ হানিফের বোন নাজমা আক্তার নাজুর নিহতের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও ডিসি মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘উনি মারা গেলেও যেতে পারে। আমি অভিযান নিয়ে বিজি আছি, তাই বলতে পারছি না।’ 

যদিও চমেক পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কালুরঘাট থেকে আনা গুলিবিদ্ধ নাজমা আক্তার নাজুকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ তার মরদেহ চমেক হাসপাতালের মর্গে রেখেছে।’ বিষয়টি নিয়ে চান্দগাঁও থানা পুলিশ থেকে বক্তব্য নিতে অনুরোধ করেন ওই কর্মকর্তা। 

এরআগে শনিবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার মোহরার রেললাইন কেন্দ্রিক মাদক সম্রাট হানিফের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। যদিও হানিফকে ডেরা থেকে আটকের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ছিনিয়ে নেয় তার সহযোগিরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে হানিফের হিজড়াবাহিনীরও সংঘর্ষ হয়। এরআগে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ইয়াবাসহ হানিফকে র‌্যাব আটক করলেও তার হিজড়াবাহিনী সড়ক অবরোধ করে তাকে ছিনিয়ে নেয়। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জের বাসিন্দা হানিফ মোহরার ৯ নম্বর ও ৮ নম্বর রেল লাইন কেন্দ্রিক ইয়াবা-মদসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। এই কাজে হিজড়া নামধারী বিশাল বাহিনী রয়েছে তার। সরকারদলীয় কতিপয় নেতাদের ভাগ বাটোয়ারা দিয়ে দেদারসে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল হানিফ। তার নামে মাদক-খুনসহ একাধিক মামলা থাকার পরও পুলিশের একাধিক অভিযানে সে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশি অভিযানে তার সহযোগীরা আটক হলেও সে সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় রহস্যজনক কারণে। 

তবে শনিবার সন্ধ্যায় ৯ নম্বর পুলের গোড়ায় হানিফের বাসা থেকে চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রোকনুজ্জামান মাদক কারবারি হানিফ ও শরীফকে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। আটকের কিছুক্ষণ পরই কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে হানিফ ও শরীফকে ছিনিয়ে নেয় তার সহযোগীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হানিফ বাহিনীর সংঘর্ষ হলে হানিফের বোন নাজমা গুলিবিদ্ধ হন এবং দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। এমনকি চান্দগাঁও থানার ওসিসহ সিএমপি থেকে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ সেখানে গেলেও হানিফকে নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারেনি পুলিশ। 

এদিকে স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবরের দিকে মৌলভী বাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় মাদক ব্যবসার অভিযোগ পেয়ে হানিফকে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা। এ খবর পেয়ে সড়ক অবরোধ করে সিনেমাটিক স্টাইলে তাকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নেন হিজড়াদের একটি দল। হানিফের বাবা লোকমান, ভাই ইয়াছিন ও বোন নাজমা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। মৌলভীবাজারের পোল-বস্তিসহ মোহরা এলাকায় মাদককারবার নিয়ন্ত্রণ করতে ইয়াছিন আরাফাতকে সুকৌশলে হিজড়া বানিয়েছে তার পরিবার। প্রতিদিন হিজড়া রূপ নিয়ে এলাকায় জোর করে টাকা তোলে ইয়াছিন। কেউ কিছু বললে সবার সামনে উলঙ্গ হয়ে মারধর করে। মানুষ বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দেয়।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়