Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় দুই মামলা, এখনো অধরা হানিফ 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ২০ নভেম্বর ২০২২
কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলায় দুই মামলা, এখনো অধরা হানিফ 

চট্টগ্রামের কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় শনিবার গভীর রাতে দুটি মামলা করেছে পুলিশ। এরআগে রাতে সাড়াশি অভিযানে চালিয়ে শনিবার রাত ১১টার দিকে মৌলভী বাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় হানিফের ডেরায় ব্লক রেইড দিয়ে তিন হিজড়াসহ আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। যদিও হানিফ ও তার সহযোগি শরীফকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপি উপ কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলা, ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি এবং ইয়াবাসহ আটকের ঘটনায় আরেকটি মামলা করা হয়েছে। থানার দুজন এস আই মামলা দুটি দায়ের করেছেন। হামলা মামলায় এজহার নামীয় ১৪জন ও অজ্ঞাত ২১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে মাদক মামলায় হানিফ ও শরীফকে আসামি করা হয়েছে। আটক আটজনকে ইতোমধ্যে হামলা ও ভাঙচুর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’ 

পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মাদক কারবারি হানিফ ও শরীফকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে বলেও জানান ডিসি মোখলেসুর রহমান। 

চান্দগাঁও থানা পুলিশ জানিয়েছে, মৌলভী বাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় হানিফের ডেরায় ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন— রাব্বি ইসলাম রবিন প্রকাশ মনি হিজড়া (২২), ফরিদুল ইসলাম প্রকাশ সুন্দরী হিজড়া (২০),  বাদশা প্রকাশ ববিতা হিজড়া (১৮), আব্দুল জলিল (২০),  দিল মোহাম্মদ (১৮), আব্দুর রহমান (১৮), আকলিমা আক্তার আঁখি (৩৫) ও মো. ইব্রাহিম (২৮)। 

এরআগে শনিবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে চান্দগাঁও থানার মোহরার রেললাইন কেন্দ্রিক মাদক সম্রাট হানিফের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। যদিও হানিফকে ডেরা থেকে আটকের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ছিনিয়ে নেয় তার সহযোগিরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে হানিফের হিজড়াবাহিনীরও সংঘর্ষ হয়। ভাইকে ছিনিয়ে নিতে বিশাল হিজড়া বাহিনী নিয়ে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় বোন নাজমা আক্তার নাজু (২২)। ফাঁড়ি ভাঙচুর করে মাদককারবারি হানিফ ও সহযোগী শরীফকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারলেও দিতে হয়েছে নিজের জীবন বিসর্জন। আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে হানিফ বাহিনীর সংঘর্ষে গুলিতে গুরুতর আহত হয় নাজমা আক্তার নাজু। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এবং পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। 

এরআগেও ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ইয়াবাসহ হানিফকে র‌্যাব আটক করলেও তার হিজড়াবাহিনী সড়ক অবরোধ করে তাকে ছিনিয়ে নেয়। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জের বাসিন্দা হানিফ মোহরার ৯ নম্বর ও ৮ নম্বর রেল লাইন কেন্দ্রিক ইয়াবা-মদসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। এই কাজে হিজড়া নামধারী বিশাল বাহিনী রয়েছে তার। সরকারদলীয় কতিপয় নেতাদের ভাগ বাটোয়ারা দিয়ে দেদারসে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল হানিফ। তার নামে মাদক-খুনসহ একাধিক মামলা থাকার পরও পুলিশের একাধিক অভিযানে সে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশি অভিযানে তার সহযোগীরা আটক হলেও সে সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় রহস্যজনক কারণে। 

তবে শনিবার সন্ধ্যায় ৯ নম্বর পুলের গোড়ায় হানিফের বাসা থেকে চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রোকনুজ্জামান মাদক কারবারি হানিফ ও শরীফকে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। আটকের কিছুক্ষণ পরই কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে হানিফ ও শরীফকে ছিনিয়ে নেয় তার সহযোগীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হানিফ বাহিনীর সংঘর্ষ হলে হানিফের বোন নাজমা গুলিবিদ্ধ হন এবং দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। এমনকি চান্দগাঁও থানার ওসিসহ সিএমপি থেকে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ সেখানে গেলেও হানিফকে নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারেনি পুলিশ। 

এদিকে স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবরের দিকে মৌলভী বাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় মাদক ব্যবসার অভিযোগ পেয়ে হানিফকে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা। এ খবর পেয়ে সড়ক অবরোধ করে সিনেমাটিক স্টাইলে তাকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নেন হিজড়াদের একটি দল। হানিফের বাবা লোকমান, ভাই ইয়াছিন ও বোন নাজমা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। মৌলভীবাজারের পোল-বস্তিসহ মোহরা এলাকায় মাদককারবার নিয়ন্ত্রণ করতে ইয়াছিন আরাফাতকে সুকৌশলে হিজড়া বানিয়েছে তার পরিবার। প্রতিদিন হিজড়া রূপ নিয়ে এলাকায় জোর করে টাকা তোলে ইয়াছিন। কেউ কিছু বললে সবার সামনে উলঙ্গ হয়ে মারধর করে। মানুষ বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দেয়।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়