Cvoice24.com

মোহরার মাদক সম্রাট হানিফের আরও তিন সহযোগি গ্রেপ্তার

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:২১, ২৩ নভেম্বর ২০২২
মোহরার মাদক সম্রাট হানিফের আরও তিন সহযোগি গ্রেপ্তার

মাদক ব্যবসায়ী হানিফ ও তার ভাই ইয়াসিনসহ গ্রেপ্তার ৫।

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট ফাঁড়িতে হামলা করে মাদক ব্যবসায়ী হানিফকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আরও তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে, মাদক ব্যবসায়ী হানিফ ও তার ভাই কথিত হিজড়া ইয়াসিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে ভাটিয়ারি এলাকায় ঢাকামুখী একটি বাস থেকে প্রথমে হানিফ ও তার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে হানিফের দেওয়া তথ্যমতে তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিন সহযোগী হলো— মহিউদ্দিন শরীফ (২৩), রেজাউল করিম (২০) এবং হৃদয় (২১)।

সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (দক্ষিণ) এসআই রবিউল ইসলাম জানান, ‘প্রথমে ভাটিয়ারি থেকে হানিফ ও ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও তিন সহযোগিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা সকলেই পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা মামলার আসামি।’

এর আগে, গতকাল সোমবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মৌলভীবাজার রেললাইন সংলগ্ন এলাকা থেকে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শরীফ রোকনুজ্জামানের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া ওয়ারলেস সেটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। 

উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় ৯ নম্বর পুলের গোড়ায় হানিফের বাসা থেকে চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রোকনুজ্জামান মাদক কারবারি হানিফ ও শরীফকে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। আটকের কিছুক্ষণ পরই কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে হানিফ ও শরীফকে ছিনিয়ে নেয় তার সহযোগিরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে হানিফ বাহিনীর সংঘর্ষ হলে হানিফের বোন নাজমা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। এমনকি চান্দগাঁও থানার ওসিসহ সিএমপি থেকে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ সেখানে গেলেও হানিফকে নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারেনি পুলিশ।

এরপর মৌলভী বাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় হানিফের ডেরায় ব্লক রেইড দিয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা হলেন— রাব্বি ইসলাম রবিন প্রকাশ মনি হিজড়া (২২), ফরিদুল ইসলাম প্রকাশ সুন্দরী হিজড়া (২০),  বাদশা প্রকাশ ববিতা হিজড়া (১৮), আব্দুল জলিল (২০),  দিল মোহাম্মদ (১৮), আব্দুর রহমান (১৮), আকলিমা আক্তার আঁখি (৩৫) ও মো. ইব্রাহিম (২৮)। 

চান্দগাঁও থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পুলিশের ওপর হামলা, ফাঁড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি এবং ইয়াবাসহ আটকের ঘটনায় আরেকটিসহ মোট দুটি মামলা করে পুলিশ। হামলা মামলায় এজহার নামীয় ১৪জন ও অজ্ঞাত ২১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে মাদক মামলায় হানিফ ও শরীফকে আসামি করা হয়েছে। আটক আটজনকে ইতোমধ্যে হামলা ও ভাঙচুর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। 

এদিকে স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবরের দিকে মৌলভী বাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় মাদক ব্যবসার অভিযোগ পেয়ে হানিফকে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা। এ খবর পেয়ে সড়ক অবরোধ করে সিনেমাটিক স্টাইলে তাকে সেখান থেকে ছাড়িয়ে নেন হিজড়াদের একটি দল। হানিফের বাবা লোকমান, ভাই ইয়াছিন ও বোন নাজমা সবাই মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। মৌলভী বাজারের পোল বস্তিসহ মোহরা এলাকা মাদককারবার নিয়ন্ত্রণ করতে ইয়াছিন আরাফাতকে সুকৌশলে হিজড়া বানিয়েছে তার পরিবার। প্রতিদিন হিজড়া রুপ নিয়ে এলাকায় জোর করে টাকা তোলে ইয়াছিন। কেউ কিছু বললে সবার সামনে উলঙ্গ হয়ে মারধর করে। মানুষ বাধ্য হয়ে তাকে টাকা দেয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীর মীর্জাগঞ্জের বাসিন্দা হানিফ মোহরার ৯ নম্বর ও ৮ নম্বর রেল লাইন কেন্দ্রিক ইয়াবা-মদসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। এই কাজে হিজড়া নামধারী বিশাল বাহিনী রয়েছে তার। সরকারদলীয় কতিপয় নেতাদের ভাগ বাটোয়ারা দিয়ে দেদারসে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছিল হানিফ। তার নামে মাদক-খুনসহ একাধিক মামলা থাকার পরও পুলিশের একাধিক অভিযানে সে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশি অভিযানে তার সহযোগীরা আটক হলেও সে সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় রহস্যজনক কারণে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়