Cvoice24.com

চমেকে ৪১৬ টাকায় মিলবে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:৫০, ১১ জানুয়ারি ২০২৩
চমেকে ৪১৬ টাকায় মিলবে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা 

গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চলেছে কিডনি রোগীদের বিক্ষোভ-আন্দোলন। পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় স্থাপন করা স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদেই সড়কে নামেন তারা। রোগীদের প্রথম দিনের আন্দোলনের পরেই মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সরকারিভাবে ডায়ালাইসিস সেবা বাড়াতে নতুন করে ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেয় চমেক কর্তৃপক্ষ। আর এ মেশিনগুলো স্থাপন করা হলে সরকারিভাবে চমেকেই ৪১৬ টাকায় ডায়ালাইসিস সেবা পাবে কিডনি রোগীরা। বুধবার (১১ জানুয়ারি) নতুন এ দশটি মেশিন চমেকে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

চমেক সূত্রে জানা যায়, ডায়ালাইসিস সেবায় বর্তমানে হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে চারটি মেশিন চালু আছে। এছাড়াও হাসপাতালের কোভিড জোনে (করোনা ইউনিটে) তিনটি মেশিন রয়েছে। এই সাতটি মেশিনসহ নতুন দশটি মেশিন নিয়ে মোট ১৭টি মেশিনের মাধ্যমে কিডনি রোগীদের সেবা দেওয়া হবে চমেকে। কয়েকদিনের ভেতরেই চমেকের নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে ঢাকা থেকে আসা নতুন মেশিনগুলো বসানো হবে। এরমধ্যে তিন থেকে চারটি মেশিন হাসপাতালের ভর্তি মুমূর্ষ রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দিতে আলাদা করে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

চমেক সূত্রে আরও জানা যায়, চমেকে সরকারিভাবে ডায়ালাইসিস সেবা চালু হলে একজন রোগীর ছয় মাসের জন্য একেবারে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে দুই সেশনে ৪১৬ টাকায় এ ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হবে। তবে মেশিন চালু হওয়ার পরে তিন শিফটে ১৭ জন করে মোট ৫১ জন রোগীকে ডায়ালাইসিস করানো যাবে। আর প্রতি সপ্তাহে ডায়ালাইসিস সেবার সুযোগ পাবেন ১২০ জন রোগী।

এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান সিভয়েসকে বলেন, ‘আজ বুধবার আমাদের ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিন আসবে। তারপরই এ মেশিনগুলো স্থাপনের কাজ শুরু হবে। আশা করছি কয়েকদিনের ভেতরে আমরা রোগীদেরকে নিজেদের সক্ষমতায় সরকারিভাবে ব্যয়বহুল এ ডায়ালাইসিস সেবাটা দিতে পারবো। সবমিলিয়ে ১৭টি মেশিনের মাধ্যেমে গরিব রোগীরা এ সেবা পাবেন। রোগীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে জরুরিভাবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডায়ালাইসিসের সরকারি এই ফি স্যান্ডরের তুলনায় কিছুটা কম। ইতিমধ্যেই আমরা গরিব রোগীদের চিহ্নিত করে ফেলেছি। শুরুতেই তাদেরকেই সেবাটা দেওয়া হবে। নির্ধারিত সরকারি ফি’তেই তারা এ সেবাটা পাবে। এরমধ্যে আমরা চারজন ভিক্ষুককেও পেয়েছি যাদেরকে আমাদের রোগী কল্যাণ তহবিলের থেকেই পুরো সেবাটা ফ্রিতে দেওয়া হবে। প্রতিনিয়তই আমাদের রোগী বাড়ছে। তাই যারা গরিব রোগী আছেন তারা যাতে সেবা থেকে বঞ্চিত না হন সেটা বিবেচনায় রাখবো।’

প্রসঙ্গত, গতবছর স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারে বেসরকারিভাবে ডায়ালাইসিস ফি প্রতি সেশনে ছিল ২ হাজার ৭৯০ টাকা। আর সরকারি ভর্তুকি সুবিধায় সেশন প্রতি ৫১০ টাকায় সেবা পেতেন গরিব ও অসহায় রোগীরা। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ও দরিদ্র কিছু রোগী ফ্রিতে ডায়ালাইসিসের সেবা পেতেন। যদিও ফ্রি সেশনের সংখ্যা ছিল খুবই কম। সারা বছরে সাড়ে ছয়শ সেশন ফ্রির সুবিধা প্রদানের সুযোগ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তবে পিপিপির আওতায় সরকার ও স্যান্ডরের করা চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর এ ফি ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। ফি বৃদ্ধির পর সরকারিভাবে সেশন প্রতি ফি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৫ টাকায় এবং বেসরকারিভাবে ২৯৩০ টাকায়। এরপরেই গত ৭ জানুয়ারি থেকে কিডনি রোগী ও স্বজনরা ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। 

এদিকে, ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আবার মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) হাসপাতালের প্রধান গেটের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন রোগী ও রোগীর স্বজনরা। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও সংঘর্ষ হলে কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগে তৌহিদ হোসেন (৩০) নামে রোগীর এক স্বজনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

যদিও এ প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান সিভয়েসকে বলেন, আসলে রোগীদের নামে বহিরাগত লোকজনরা এ আন্দোলনে নেমেছে। পেছন থেকে কেউ তাদের উস্কানি দিচ্ছে। কারণ তাদেরকে আগেরদিনই বলা হয়েছে আপাতত সরকারি রেটেই ডায়ালাইসিস সেবাটা তারা পাবে। এরমধ্যে একশোর বেশি রোগীকে সেবা দিতে বলা হয়েছে। এরপরও কেন তারা সড়ক অবরোধে নামে এ ব্যাপারটা বুঝে আসে না। যদিও রোগীরা আমাকে জানিয়েছে তারা আন্দোলনে নামেনি।’
 
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বহিরাগত এটা জানি। কিন্তু কারা তা বলতে পারবো না। হয়তো পলিটিক্যালি হতে পারে। তবে আমাদের রোগীরা বিক্ষোভ করেনি।’

উল্লেখ্য, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও চমেক হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের দুটি সেন্টার স্থাপন করে। এর মধ্যে চমেক হাসপাতালে ৩১টি মেশিনে এ ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী কিডনি রোগীদের ২৯ হাজার সেশন সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও স্যান্ডর কর্তৃপক্ষ ৭০ হাজার সেশন সেবা দেয়। এরমধ্যে গতবছরে ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে ৩৩ হাজার বেশি এবং চমেকে ৩৭ হাজার সেশন বাড়তি সেবা দেয় স্যান্ডর। আর এ বাড়তি সেশনের বকেয়া নিয়েই স্যান্ডর কর্তৃপক্ষের ঝামেলা তৈরি হয়েছে স্বাস্থ বিভাগের। এ কারণে স্যান্ডরের কাছে প্রায় ২০ কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে সরকারের।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়