Cvoice24.com

চট্টগ্রামে আজ, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

সময় ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড

মুস্তাকিমের শরীরে চুতরা পাতা লাগিয়ে সাজানো নাটক চলছে— পাঁচলাইশের ওসির ফেসবুক পোস্ট

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:০২, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩
মুস্তাকিমের শরীরে চুতরা পাতা লাগিয়ে সাজানো নাটক চলছে— পাঁচলাইশের ওসির ফেসবুক পোস্ট

ওসি নাজিম উদ্দীন, নির্যাতিত মুস্তাকিম ও চুতরা পাতা।

দুই কিডনি নষ্টওয়ালা মায়ের ডায়ালাইসিসের খরচ বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামা মুস্তাকিম নামে এক যুবককে গ্রেপ্তারের পর থানা হাজতে নির্যাতনের অভিযোগকে ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করেছেন অভিযুক্ত পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দীন মজুমদার। 

রবিবার জামিনে বের হয়ে সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের বর্ণনা দেন নির্যাতিত মুস্তাকিম। এরপর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মুস্তাকিমের অভিযোগকে নাটক অভিহিত করে তার শরীরে আঘাতের চিহ্নকে ‘চুতরা পাতা’ লাগিয়ে সাজানো দাগ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ওসি। এ নিয়ে নিজের ফেসবুক পোস্টে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন পাঁচলাইশের ওসি; তবে মঙ্গলবার সকালে ‘nazim zim’ নামে এই আইডি থেকে করা পোস্টটি বেশিক্ষণ রাখেন নি তিনি। দুপুরের পর থেকে ওসির পোস্টটি আর দেখা যাচ্ছে না। 

কারামুক্ত মুস্তাকিমের দাবি— মঙ্গলবার দুপুরে মুস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর ওই দিন রাত আটটার দিকে হাজতখানা থেকে তাকে পার্শ্ববর্তী একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় নেমপ্লেটহীন এক পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে ‘ওসি স্যারের সঙ্গে আর বেয়াদবি করবি?’— বলে বলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এতে মুস্তাকিমের কোমরের নিচ থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত লাল হয়ে যায়। ছয় দিনেও তার শরীরে রয়ে গেছে লাঠির আঘাতের সেই লাল চিহ্ন। 

যদিও পাঁচলাইশের ওসি নাজিম উদ্দীন মজুমদার ‘সত্য চিরন্তন, মিথ্যা ক্ষণস্থায়ী...’ শিরোনামে তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘যে ছেলেটি জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শুধু আমার সাথে দেখা করার জন্য অফিসে আসে...আমার পা ধরে সালাম করতে চায়... ভেবেছিলাম অনুশোচনা বোধ থেকে হয়তো...ছেলেটির মাকে নিজেই মা বলে সম্বোধন করলাম...ডায়ালাইসিসের জন্য ছেলে হিসেবে আর্থিক সহযোগিতা করলাম...অথচ কিনা সেই ছেলেটিরই এতো নাটক... তোমাকে যদি থানা হেফাজতে এতোই নির্যাতন করা হয়... আদালতেতো একটি বারও সে কথা বললে না...জামিনে আসার পর একটি বারও কাউকে বললে না...পুলিশ যদি লাঠি দিয়ে পিটায় তার দাগ কি এমন হয়...? ছোট বেলায় আমরা গাছের একটা পাতাকে খুব ভয় পেতাম...নোয়াখালীর ভাষায় এটাকে ছোত্তা পাতা (চুতরা পাতা) বলে...যেখানেই লাগে ছুলকাবে আর লালবর্ণের হয়ে যায়...১০ তারিখে পুলিশি নির্যাতনের আঘাত ১৬ তারিখ পর্যন্ত কিভাবে এতো সতেজ থাকে???’

ওসি আরও লিখেন, ‘আর এখনতো মেডিসিন দিয়েও এসব দাগ বানানো যায়...সবচেয়ে বড় কথা এই বিষয়টাকে ইস্যু তৈরি করার একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে...এই ছেলেটা যদিও ইসলামী ছাত্র সেনার সদস্য...কিন্তু জামাত শিবিরের সাথে তার সখ্যতা আছে...এর প্রমাণ তার আশেপাশে যারা তাকে সহযোগিতা করছে সবাই সরকার বিরোধী উস্কানিদাতা এবং পুলিশ বিদ্বেষী...মোট কথা এখন আর বিষয়টা ডায়ালাইসিস রোগী, মুস্তাকিমের মাঝে সীমাবদ্ধ নাই...এটাকে একটা জাতীয় ইস্যু তৈরি করে কিছু সুবিধাবাদী তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ নিচ্ছে...’

পোস্টের শেষাংশে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা নাজিম লিখেন, ‘মোট কথা এখন আর বিষয়টা ডায়ালাইসিস রোগী, মুস্তাকিমে মাঝে সীমাবদ্ধ নাই...এটাকে একটা জাতীয় ইস্যু তৈরি করে কিছু সুবিধাবাদী তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার সুযোগ নিচ্ছে...
সবশেষে...পুলিশি হেফাজতে ছেলেটিকে নির্যাতন করা হয়নি...এটা একটা সাজানো ড্রামা...এই ড্রামা আরও কিছুদিন চলবে...তবে সবকিছুরই শেষ আছে...দিনশেষে সত্যেরই জয় হয়...আল্লাহ ভরসা।’ 

এ প্রসঙ্গে জানতে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দীন মজুমদারের বক্তব্য জানতে কল করা হলে থানার ওসি (তদন্ত) সাদেকুর রহমান কল রিসিভ করেন। এসময় ওসি নাজিম অসুস্থতা জনিত কারণে ছুটিতে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়