Cvoice24.com

দুষ্টুমি ‘সহ্য’ না হওয়ায় মায়ের প্রেমিকের হাতে চার বছরের শিশু খুন

সিভয়েস প্রতিবেদক
২১:২৮, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

চার বছরের শিশু ওমর ফারুক। থাকতো মায়ের কথিত স্বামীর সঙ্গে ইপিজেডের একটি ভাড়া বাসায়। পোশাক শ্রমিক রওশানারা বেগমের দ্বিতীয় ঘরের সন্তান ওমর ফারুক। আর তাতেই কথিত স্বামী মো. ইয়ামিনের অসহ্য লাগতো চার বছরের এই শিশুর দুষ্টুমি! কখনো সিগারেটের ছ্যাকা, কখনো মারধর করতেন শিশুটিকে। 

আর এসব পাশবিক নির্যাতন দিনেরপর দিন চললেও প্রেমের নেশায় মত্ত মা টু-শব্দটুকুও করেননি। শুক্রবার রাতেও শিশুটির মুখের চোয়াল ধরে সজোরে ধাক্কা দেন। এরপর দেয়ালে বাড়ি খেয়ে মাথার পেছনে আঘাত পায় শিশুটি। এদিন রাতেই নগরের বেসরকারি হলি হেলথ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

ঘটনার পর পালাতে চেয়েছিলেন ঘাতক মো. ইয়ামিন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাকে। ইয়ামিন গাইবান্ধা জেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের আবছার আলীর ছেলে। পেশায় রঙ মিস্ত্রি। 

রওশনরা বেগম এবং তিনি স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নিহত শিশুটিকে নিয়ে ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডে পকেট গেইট এলাকায় বাসা ভাড়ায় থাকতেন।

পুলিশ জানায়, একটু দুষ্ট প্রকৃতিরই ছিল শিশু ওমর ফারুক। তার দুষ্টমি সহ্য করতে পারতো না সৎ বাবা ইয়ামিন। বাসায় রেখে মা কাজে গেলেই তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতো। আর নির্যাতনের কথা টেরই পেতো না শিশুটির মা। গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) মা রওশন কাজে যাওয়ার পর সৎ বাবা ইয়ামিন শিশুটির গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছিলেন। পরদিন শিশুটিকে ধাক্কা দিলে সে দেয়ালের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে মাথায় আঘাত পায়। 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)  উপ পুলিশ কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সুলতানা সিভয়েসকে বলেন, ‘শিশুটির মা রওশনারা আমাদের যে তথ্য দিয়েছেন সেই অনুযায়ী, সে এবং তার প্রেমিক ইয়ামিন একটি বাসা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতো। যা কেউই জানতো না। মূলত তারা স্বামী-স্ত্রী নয়। রওশনারার আগে একটি বিয়ে হয়েছিলো সেখানে তার ৪ বছরের একটি সন্তান আছে। ওই সন্তানটিকে তারা পার্শ্ববর্তী একটি খালার বাসায় রাখতো। ওই শিশুর মা দিনের বেলায় গার্মেন্টস এ কাজ করতো। যার সাথে সে থাকতো স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সে মাঝে মধ্যে দিনের বেলায় বাচ্চাটিকে তাদের বাসায় নিয়ে যেতো। সে নিয়ে গিয়ে বিভিন্নভাবে টর্চার করতো।’ 

খুনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাটি মারা যাওয়ার দুইদিন আগে তার চোয়াল ধরে দেয়ালে ধাক্কা দেয় মায়ের কথিত স্বামী ইয়ামিন। এরপর বাচ্চাটি কোমায় ছিলো। বাচ্চাটিকে মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে আইসিইউ না থাকায় সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে আবার বাচ্চাটিকে বেসরকারি হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে যান। বাচ্চাটি আইসিউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় যখন মারা যায় তখন অভিযুক্ত জানতে পেরে তার কাপড়-চোপড় গুছিয়ে বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলো। তৎক্ষনাৎ আমাদের কাছে ৯৯৯-এ ফোন আসলে আমরা পালানোর আগেই মূল আসামি ইয়ামিনকে গ্রেপ্তার করি।’ 

‘চোয়াল ধরে ধাক্কা মারার দুইদিন আগেও বাচ্চাটিকে আসামি ইয়ামিন সিগারেটের আগুন দিয়ে ছ্যাকা দিয়েছে শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। বাচ্চাটির মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমরা এ বিষয়ে। বাচ্চাটির মা আমাদের জানায়, তাকে বলা হয়েছিলো সিগারেট খাওয়ার সময় ভুলবশত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লেগে গেছে। কিন্তু যতটুকু আমরা দেখেছি বিষয়টি এমন নয়। সে বিভিন্ন সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাচ্চাটিকে টর্চার করতো।’ যোগ করেন ডিসি।

বাচ্চাটিকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্য কি—এমন প্রশ্নের জবাবে শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে আমরা মনে করে থাকি, বাচ্চাটি যেহেতু তার আগের ঘরের সন্তান তাকে মেরে ফেললে পথের কাটা দূর হয়। আসলে বিষয়টি এটা বললে হাল্কা হয়ে যায়। আমি দেখলাম লোকটা হলো খুব দুষ্ট প্রকৃতির। সে এতটুকু ছোট বাচ্চাকে যেভাবে মেরেছে বা বিভিন্ন সময় টর্চার করেছে এটা তার স্বভাব। সে স্বভাবতই অপরাধী।’