সচেতন নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলন
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেন চালু রাখতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারসহ (ট্রেনচালক) জনবল সংকটের অজুহাত দেখিয়ে চলতি বছরের মে মাসের শেষদিকে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনের চলাচল বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অথচ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন স্থায়ী করা এবং নতুন আরেকটি ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে যাত্রী কল্যাণ পরিষদ। কিন্তু এই দাবি পূরণ না করে উল্টো বিশেষ ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজসহ যাত্রীদের মধ্যে। যাত্রীবাহী এই ট্রেন বন্ধের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে করেছে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের সচেতন নাগরিক সমাজ। সংবাদ সম্মেলনে পুনরায় ট্রেন চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানানো হয়েছে।
রবিবার (২৩ জুন) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুনরায় ট্রেন চালুর আহবান জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সচেতন নাগরিকের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কক্সবাজারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৯৫৭ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেললাইনটির জন্য তৎকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন। ইতিহাসের সেই সূর্য সন্তানের পথেই আপনার সাহসী অগ্রযাত্রায় বনাঞ্চল, জমি, বাড়িঘর ভেদ করে মানুষের ক্ষতি পুষিয়ে প্রায়ই বিশ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আমাদের জন্য বিশাল এক পাওনা। ‘পর্যটন এক্সপ্রেস’ ও ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামক দুটি ট্রেন ঢাকা থেকে আগমন করছে যার ফলে মানুষ তার গন্তব্যে নিরাপদে ও নির্ভয়ে যাওয়া-আসা করছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুবিধা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় যে, একটি ট্রেন বহু অনুরোধে বিশেষ ট্রেন হিসেবে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার লাইনে চলাচল করছিল।’
নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, ‘রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপূর্ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানতে পারি এই বিশেষ ট্রেনটি ঈদে বাড়তি যাত্রী বহনে সুবিধা দিয়েছে মাত্র। গত ২৪ মে থেকে এই ট্রেনটি খুবই খোড়া যুক্তিতে বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে যার ফলে টিকেট বিক্রয় এরই মধ্যে বন্ধ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, দোহাজারী-কক্সবাজার ট্রেন চলাচলের ওয়ার্কিং টাইমটেবিল ৫৩ নম্বর অনুসারে এখানে তূর্ণা এক্সপ্রেস, মহানগর গৌধুলী এক্সপ্রেস ও মেঘনা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাত্রী সেবা দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। পরে জনস্বার্থ অনুসন্ধানে জানতে পারি যে, প্রায়ই এক লাখ যাত্রী প্রতিদিন ট্রেন টিকেট পেতে ইচ্ছুক হয়েও অনলাইনে ব্যর্থ হচ্ছেন। চট্টগ্রামে বসবাসরত কমজীবী, সাধারণ নাগরিক, মেডিকেল সেবায় আগত রোগী, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা রেলওয়ের এই সিদ্ধান্তে নির্বাক। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রেলওয়ে জনগণের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ মাধ্যম ও লাভজনক খাত, যেখানে ৭২ থেকে ১৫০ ঘণ্টা পর্যন্ত হাজার হাজার কিলোমিটার ট্রেন চলাচল হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা সচেতন মহল আমরা বুঝতে পারছি যে বাংলাদেশ রেলওয়েকে অর্থনৈতিক ‘লাভহীন’ প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করবার জন্য রেলওয়েতে অবস্থানরত একটি ঘাপটি মারা কুচক্রিমহল যারা দেশের উন্নয়ন ও নাগরিক স্বার্থের বিরুদ্ধে নিজ স্বার্থ হাসিলে কাজ করছে। তারা বিভিন্ন প্রাইভেট পরিবহন সংস্থার সাথে আঁতাত করে এডিবির সাড়ে আঠারো হাজার কোটি টাকার প্রকল্পকে অলাভজনক ও অকার্যকর করার কাজে মেতে আছে। অথচ ৫৩ নম্বর টাইম টেবিলের এই তিনটি ট্রেন চট্টগ্রামে নয় ঘণ্টা করে বিরতিতে রয়েছে এবং বিশেষ ট্রেনের টিকিট বিক্রি প্রতিদিন এক ট্রিপে তিন লাখ টাকা। এই চক্রান্তকারীদের হাত থেকে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে চুক্তি অনুসারে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের যাত্রীদের জন্য ট্রেন সেবা চালু করলে আমরা উপকৃত ও কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ হবো।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মিত নতুন রেললাইনের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত বছরের ১ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি পর্যটক এক্সপ্রেস নামের আরেকটি ট্রেন চালু করে রেল। শুধু ঢাকা-কক্সবাজার রুটের দুটি ট্রেনের প্রতিটিতে ১১৫টি করে আসন বরাদ্দ রাখা হয় চট্টগ্রাম স্টেশনের জন্য। ঢাকা থেকে পরপর দুটি ট্রেন চালু করলেও চট্টগ্রাম থেকে কোনো ট্রেন দেওয়া হয়নি। রেলওয়ের এমন সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ ক্ষুব্ধ ছিলেন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও নাগরিক সমাজ ট্রেন চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল। এই পরিস্থিতিতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বিশেষ ট্রেন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রেল। গত ৮ এপ্রিল এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। চালুর পর থেকে এই ট্রেন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যাত্রীদের চাপে এরপর দুই দফায় বিশেষ ট্রেনের সময় বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। কিন্তু ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকট থাকার কারণ জানিয়ে বন্ধ ঘোষণার প্রায় ১০ দিন (৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত) ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা, সিনিয়ন সহ সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক দেব দুলাল ভৌমিক, স্থপতি আশিক ইমরানসহ অনেকে।