কোটা সংস্কার আন্দোলন
পরিবর্তন আসছে চট্টগ্রামের সমন্বয়ক টিমে
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক টিম স্থগিত করা হয়েছে। শিগগিরই ঘোষণা করা হচ্ছে নতুন টিম। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সম্প্রতি মুরাদপুরের সহিংসতার ঘটনায় আদনান শরীফ ওরফে আসিফ শরীফ নামে একজন ‘সমন্বয়ক’কে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এর পরপরই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ নতুন টিম গঠনের বিষয়টি জানালেন সিভয়েস২৪’কে।
আসিফ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের তালিকায় তার নাম রয়েছে। পুলিশও বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দারুল উলুম মাদ্রাসার সমন্বয়ক আসিফ। তবে চবি সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। আর পরিবার বলছে, সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবেই দুয়েকদিন আন্দোলনে গিয়েছিলেন আসিফ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বৃহস্পতিবার রাতে সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমাদের সমন্বয়ক টিম প্রকাশে কিছু ত্রুটি ছিল। তাই যোজন-বিয়োজন করার জন্য সমন্বয়ক টিম স্থগিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই নতুন টিম ঘোষণা করা হবে। তবে গ্রেপ্তার আসিফ শরীফ আমাদের সমন্বয়ক নন।’
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে সহিংসতার ঘটনায় আসিফ শরীফকে গত বুধবার রাত ২টার দিকে চকবাজার বাকলিয়া ডিসি রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, সহিংসতার ভিডিও ফুটেজ দেখে আসিফকে শনাক্ত করেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও আসিফের পরিবারের দাবি, ‘যে ভিডিও ফুটেজ দেখানো হচ্ছে তাতে আসিফের উপস্থিতি নেই। ঘটনার সময় অসুস্থ থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় বিশ্রামে ছিলেন।’
আসিফ শরীফকে ‘অন্যায়ভাবে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে তার ছোট ভাই নাফিজ শরীফ সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমার ভাই ১৫ জুলাই ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। যার প্রেসক্রিপশন আছে আমাদের কাছে। তাকে ডাক্তার ৭ দিনের বেড রেস্ট দিয়েছেন। পুলিশ যেদিনের ঘটনায় অভিযোগ এনে তাকে চালান দিয়েছে সেদিন আসিফ ঘরে শুয়েই বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করছিলেন। তিনি সেদিন বের হননি।'
পুলিশ ওই দিনের সহিংসতার ঘটনার ভিডিও ফুটেজে আসিফের সম্পৃক্ততা দেখেছে বলে দাবি করেছে—এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাফিজ বলেন, ‘পুলিশ যে ভিডিওটায় আমার ভাইয়ের উপস্থিতি আছে দাবি করেছে; সেটি যদি আমার ভাই হয় তাইলে আমি নিজেই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াব।’
সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'তাকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কিনা জানা নেই। তবে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবেই দুয়েকদিন আন্দোলনে গিয়েছিল।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ ন ম আব্দুল মাবুদ বলেন, ‘আমার প্রথম বর্ষের চারজন ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভের মধ্যে আসিফ একজন। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। একজন হাফেজে কোরআনও। নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতো। সে গত ১৫ জুলাই অসুস্থ ছিল। তার পায়ে ব্যাথা। ডাক্তার বলেছে, পায়ে ভর দিয়ে না হাঁটতে। অথচ তাকে ১৬ জুলাইয়ের গণ্ডগোলের মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে।’
গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমাকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের মুখপাত্র এবং অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই মুরাদপুরে সংঘটিত সহিংসতায় আসিফ শরীফের উপস্থিতি ছিল। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ শতভাগ নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তার পরিবার ভিন্ন কিছু দাবি করতেই পারে। আমরা এর আগে ওই ঘটনায় যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি তাদেরকেও ভিডিও ফুটেজটি দেখানো হয়েছে। তারাও আসিফকে শনাক্ত করেছে।