‘শান্তিপূর্ণ’ মিছিল মুহূর্তেই সহিংস
রবিউল রবি, সিভয়েস২৪
শনিবার বেলা ৩টার দিকে ছাত্র-জনতার ঢল নামে নগরের নিউমার্কেট মোড়ে। পুরো এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। মিছিলসহ দলে দলে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন, সরকার পদত্যাগের দাবিতে দিতে থাকেন নানা স্লোগান। প্রায় আড়াইঘণ্টা ‘বাধাহীনভাবে’ সেখানে অবস্থানের পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মিছিল নিয়ে যান টাইগারপাসের দিকে। সেখানেই 'সমাপ্তি' ঘোষণা করা হয় কর্মসূচির।
তবে, টাইগারপাস পার হতেই ‘শান্তিপূর্ণ’ এই কর্মসূচি মুহূর্তেই হয়ে ওঠে সহিংস। ভাঙচুর করা হয় টাইগারপাস পুলিশ বক্স, আগুন দেওয়া হয় এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে, হামলা চালানো হয় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং মেয়র রেজাউল করিমের বাসভবনে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয় বহদ্দারহাট এলাকায়, গুলিবিদ্ধ হন কয়েকজন। শিক্ষার্থীদের মিছিল থেকে এসব হামলার অভিযোগ উঠলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে, এসব হামলার দায় ‘দুষ্কৃতিকারীদের’।
পুলিশ বলছে, হামলাকারীদের প্রত্যেকের ভিডিও এবং ছবি আছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে প্রত্যকটি ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিউমার্কেটে জনসমুদ্র, সাংবাদিকদের হেনস্থা
দুপুর দুইটা থেকে নিউমার্কেট সংলগ্ন কোতোয়ালী, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আমতল, জুবলি রোড, স্টেশন রোড, সিটি কলেজ অভিমুখী সড়কে আন্দোলনকারীরা একে একে জড়ো হতে থাকেন। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘বউত দিন হাইয়্যো আর ন হাইয়্যু’সহ নানা রকম স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে নিউমার্কেট মোড়। প্রায় দু’ঘণ্টা ব্যাপী অবস্থান করে নিউমার্কেট ‘দখলে’ রাখলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কিংবা তৎপরতা সেখানে লক্ষ্য করা যায়নি।
বেলা ৩টার পর থেকেই নিউমার্কেট এলাকায় দলে দলে স্লোগান নিয়ে জড়ো হতে থাকেন ছাত্র-জনতা। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল তরুণ। এছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যনীয়। এসময় পুরো এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। জনসমাগমের কারণে নিউমার্কেটের আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা আন্দোলনকারীদের দখলে চলে যায়।
বেলা সাড়ে ৩টার পর বিক্ষোভস্থল থেকে নিউমার্কেট ট্রাফিক পুলিশ বক্স এবং আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে নিউমার্কেট মোড়ের রাজস্থান শো-রুম এবং ওই ভবনের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোঁড়েন তারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীরাও। মিউনিসিপাল স্কুলের সামনে থেকে শাহ আমানত মার্কেট পর্যন্ত সাংবাদিকদের দেখে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে তাড়িয়ে দিতে শুরু করেন আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ। তবে সাংবাদিকরা এতে পাল্টা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
মিছিল নিয়ে টাইগারপাসে, এরপরেই সহিংস
বিকেল পাঁচটার দিকে নিউমার্কেট মোড়ে দাঁড়িয়ে মাইক দিয়ে বক্তব্য দেন কয়েকজন সমন্বয়ক। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, ‘আমি জানি না, আমি এখান থেকে যাওয়ার পর কি হয়। কিন্তু বলে রাখি, যদি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, আপনারা ঘরে ঘরে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় দুর্গ গড়ে তুলবেন। ’
তিনি বলেন, ‘রক্ত দিয়েছি, খুনিদের সঙ্গে কোন আপোষ নয়। খুনিদের সঙ্গে কোন বৈঠক নয়, কোন আলাপ নয়। আমাদের আলাপ পরিষ্কার; দফা এক, দাবি এক- শেখ হাসিনার পদত্যাগ।’
এরপরেই শিক্ষার্থীরা কয়েকটি অংশে ভাগ হয়ে যান। এরমধ্যে একটি অংশ আমতলের দিকে চলে যায় এবং অপর একটি অংশ মিছিল নিয়ে চলে যায় টাইগারপাসের দিকে। টাইগারপাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এরপরেই ভাঙচুর করা হয় টাইগারপাস ট্রাফিক পুলিশ বক্স।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাইগারপাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইটপাটকেল। ট্রাফিক পুলিশ বক্সের কাঁচ দিয়ে ঘেরা অংশ ভাঙার ফলে কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রাস্তায়। যদিও এসময় বক্সে কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না।
সিভয়েস২৪’এর হাতে আসা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, লাঠিসোঁটা হাতে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন হঠাৎ করেই হামলা চালাতে থাকে পুলিশ বক্সে। এদের মধ্যে অনেকের মাথায় ছিল হেলমেট। আবার কয়েকজন আন্দোলনকারী তাদেরকে সরিয়ে নিয়ে আসে।
এমপির কার্যালয়ে আগুন, শিক্ষামন্ত্রী-মেয়রের বাসভবনে হামলা
সন্ধ্যা ৬টার দিকে টাইগারপাস মোড়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণার পরে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মিছিল-স্লোগান নিয়ে লালখানবাজার হয়ে জিইসি-বহদ্দারহাটের দিকে যায়। যাওয়ার সময় মিছিল থেকে লালখানবাজারে বিশ্ববিখ্যাত বহুজাতিক কোম্পানি চট্টগ্রামের একমাত্র আউটলেট পুমা’র আউটলেটের সাইনবোর্ডে থাকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ছবি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
এরপরে ওয়াসা যাওয়ার পথে তারা চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে আগুন দেয় এবং দেওয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। আন্দোলনকারীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা পাশে থাকা সিএনজি ফিলিং স্টেশন থেকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (এক্সটিংগুইসার) এনে আগুন নেভায়।
সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কার্যালয়ের দুটি কক্ষের একটি আগুনে পুড়ে গেছে। পুড়েছে চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র। এছাড়া আরেকটি কক্ষের দুই জানালার থাই গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। সেখানে থাকা প্লাস্টিকের চেয়ার এবং কক্ষের দরজায়ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
এ ঘটনার প্রায় আধঘণ্টা পর সেখানে যান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু। এসময় তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে আ জ ম নাছির উদ্দিন সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে তথাকথিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেপথ্যে জামায়াত-বিএনপি আছে। আজকে আমাদের নেতাকর্মীদের বিশাল জমায়েত ছিল। প্রশাসনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা রাস্তা থেকে সরে গেছি। কিন্তু তারা আমাদের এমপির কার্যালয়ে হামলা-অগ্নিসংযোগ এবং শিক্ষামন্ত্রীর বাসভবনে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দীর্ঘসময় ধরে রাজপথে অবস্থান করে তারা একের পর এক হামলা-ভাঙচুর চালাচ্ছে, দেশের সম্পদ নষ্ট করছে, নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা করছে। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এটা এখন সরকার উৎখাত করার তথাকথিত একটি আন্দোলনে রুপ নিয়েছে।’
এরপরেও আন্দোলন চলমান থাকলে নগর আওয়ামী লীগ রাজপথে নামবে—এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে সাবেক মেয়র বলেন, ‘আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ রাজপথে অবস্থান করে তাদেরকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করবো এবং তাদেরকে চট্টগ্রামের মাটি থেকে উৎখাত করবো।’
এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চু সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আজ বেশ কয়েকদিন ধরে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি কোমলমতি ছাত্রদের আন্দোলনের ভিতরে ঢুকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করেছে গাড়ি-ঘোড়া ভাঙচুর করেছে। আজকে নগরের ১৪টি পয়েন্টে মহানগর আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচি ছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল বিষয়টি তারা তাদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করবে। যেন কোনোপ্রকার সংঘর্ষ না হয়। আমরা প্রশাসনকে সম্মান জানিয়ে তাই করেছি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমাদের নেতাকর্মীদের বাসায়-অফিসে হামলা করবে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করবে আর আমরা চুপচাপ বসে থাকবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি। এখন আমাদের নেতৃবৃন্দদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো। আমরা যদি আমাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করে রাজপথে নামি...আমাদেরই কিন্তু পূর্ব ইতিহাস রয়েছে জনগণকে সাথে নিয়ে সকল আন্দোলনে বিজয় অর্জন করার।’
এদিকে, মিছিল থেকে সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের চট্টগ্রামের চশমা হিলের বাসায় হামলা চালানো হয়। তবে হামলার সময় শিক্ষামন্ত্রী বাসায় না থাকলেও তাঁর মা হাসিনা মহিউদ্দিন অবস্থান করছিলেন।
হামলার সময় বাড়ির দোতলার জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে হামলাকারীরা গেট ভেঙে ঢুকে নিচে রাখা দুটি গাড়িও ভাঙচুর করে।
এর পরপরই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা চশমা হিলের বাসভবনে যান। এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরাও সেখানে জড়ো হন। এ সময় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শিক্ষামন্ত্রীর মা হাসিনা মহিউদ্দিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘হামলাকারীরা ভবনের জানালা, দুটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তবে প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় ভবনে উঠতে পারেনি।’
নগরের দুই নম্বর গেট চশমা হিলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনের পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনেও হামলা চালানো হয়। ঘটনার সময়ে মেয়র বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন। তবে তিনি নিরাপদেই আছেন বলে জানা গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল বহদ্দারহাট পৌঁছলে সেখান থেকে একটি অংশ বহদ্দারবাড়ির মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
চসিক মেয়রের এপিএস মো. দুলাল চৌধুরী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘ঘটনার সময়ে মেয়র বাসভবনে ছিলেন। হামলাকারীরা বাইরে থেকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে চলে গেছে। এতে প্রধান ফটকের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেয়র মহোদয় নিরাপদে আছেন।’
সন্ধ্যার পর রণক্ষেত্র বহদ্দারহাট, সংঘর্ষ-গুলি
মিছিলটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর বহদ্দারহাট এলাকায় পৌঁছলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ এসময় রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে বহদ্দারহাটের দিকে আসলে পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে মাঠে নামে। এ সময় আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সরকারদলীয় নেতাকর্মীরাও সেখানে অবস্থান নিয়েছিলেন।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আবদুস সাত্তার নামে এক যুবককে নিয়ে আসা হয়েছে। তার পিঠে গুলি লেগেছে। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। এছাড়াও আরও কয়েকজন এসেছেন আহত অবস্থায়।’
চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোমিনুল হাসান রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিভয়েস২৪’কে মুঠোফোনে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী এবং মেয়র মহোদয়ের বাসভবনে হামলার পর তারা বহদ্দারহাটের দিকে আসলে আমরা তাদেরকে শান্তি বজায় রাখতে বলি। কিন্তু তারা আমাদের কথা না শুনেই বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় ওসি স্যারসহ আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আমার বাহুতেও আঘাত লেগেছে।’
‘পরে আমরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দিই। তবে আমরা কাউকে গুলি করিনি। কেউ গুলিবিদ্ধ হলে কিভাবে হয়েছে তা জানা নেই।’ যোগ করেন তিনি।
দায়ভার নেবে না ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি শেষে এসব হামলা অগ্নিসংযোগের দায়ভার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ।
তিনি সন্ধ্যায় সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি টাইগারপাসেই সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর আমরা সবাইকে নিজ দায়িত্বে নিরাপদে চলে যেতে বলেছি। এরপরে যা যা হয়েছে তার কোনো কিছুরই দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ নেবে না।’
আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কিছু দুষ্কৃতকারীরা এসব করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটা কর্মসূচিতে কিছু দুষ্কৃতকারী ঢুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে এবং এসব চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সবসময় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছিলাম। কিন্তু আমরা সেই দুষ্কৃতকারীদেরকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আপনারা জানেন তারা কারা হতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যারা আছে তারা খুবই সজাগ এবং সোচ্চার। তারা কোন ধরনের সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে না।’
গণমাধ্যমকর্মীদের হেনস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বের এবং দেশের সকল গণমাধ্যম সত্য এবং ন্যায়ের পক্ষে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমাধ্যমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গণমাধ্যমকারীদের হেনস্থাও ওই দুষ্কৃতিকারী চক্রের কাজ। তারাই আমাদের মিডিয়ার ভাইদেরকে আমাদের মধ্যে ঢুকে অসম্মান করেছে। এটা আমরা কখনোই চাইনি এবং চাইবো না। তারা দুষ্কৃতিকারী হলেও তাদের পক্ষ থেকে আমরা গণমাধ্যম কর্মী ভাই-বোনদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’
পুলিশ বলছে...
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে অত্যন্ত ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। তবু তারা পুলিশ বক্সে হামলা, পুলিশকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি-উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়েছে যেন অ্যাকশনে যেতে হয়। কিন্তু পুলিশ তাও যথেষ্ট ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা যখন নিউমার্কেট থেকে মিছিল নিয়ে টাইগারপাস এলাকায় আসে তখন পুলিশ কোন প্রকার উস্কানি এবং বাধা না দেওয়া সত্ত্বেও তারা টাইগারপাস ট্রাফিক পুলিশবক্সে ভাঙচুর চালায়। এছাড়া লালখান বাজার থেকে ওয়াসা যাওয়ার পথে তারা দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের সামনে পুলিশকে কটুক্তি করে নানা ধরনের উস্কানিমূলক স্লোগান দেয় যেন পুলিশ অ্যাকশনে যায়। কিন্তু তাও পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।’
‘এরপরে তারা যখন দুই নম্বর গেট এবং বহদ্দারহাটের দিকে যায় সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসভবনে হামলা এবং ভাঙচুর চালায়। তখন পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
প্রত্যেকটি ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। বহদ্দারহাটে তারা পুলিশের ওপরেও হামলা করেছে। এসময় পাঁচলাইশের সহকারী কমিশনার, চান্দগাঁও থানার ওসি এবং আরেকজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন। তারা যেখানে যেখানে হামলা করেছে প্রত্যেকটি ঘটনাতেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং মামলা হবে। আমাদের কাছে হামলাকারীদের প্রত্যেকের ভিডিও এবং ছবি আছে। আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।’
সিভয়েস/
আরও পড়ুন
- কোটা সংস্কার আন্দোলন : নিউমার্কেট এলাকা ‘ব্লকড’
- সাংবাদিক দেখে আন্দোলনকারীদের ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান
- মিছিল নিয়ে এগুচ্ছেন আন্দোলনকারীরা
- পুলিশ বক্স ভাঙচুর, এমপি বাচ্চুর অফিসে আগুন
- শিক্ষামন্ত্রীর পর চসিক মেয়রের বাড়িতে হামলা
- শিক্ষামন্ত্রীর পর চসিক মেয়রের বাড়িতে হামলা
- সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি সিইউজের
- চট্টগ্রামে আমির খসরুসহ বিএনপির চার নেতার বাসায় হামলা-অগ্নিসংযোগ
- আন্দোলনকারীদের একাংশ জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে : আ জ ম নাছির