মোড়ে মোড়ে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের অবস্থান
ছত্রভঙ্গের চারঘণ্টা পর কর্মসূচি ‘সমাপ্ত’ ঘোষণা
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে ছত্রভঙ্গ হওয়ার চারঘণ্টা পর সরকার পদত্যাগের দাবিতে ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ রবিবারের কর্মসূচি ‘সমাপ্ত’ ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে এখনো নগরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন সরকারদলীয় নেতাকর্মীরাও।
রবিবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি তার ফেসবুক পোস্টে কর্মসূচি সমাপ্তির ঘোষণা দেন।
এর আগে আন্দোলনকারীরা সকাল ১০টার পর থেকে নিউমার্কেট চত্ত্বরে অবস্থান নিলে পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো নিউমার্কেট ও তার আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হামলায় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তাদের একটি অংশ রেলওয়ে স্টেশন-টাইগারপাস হয়ে ওয়াসা মোড়ের দিকে আসে এবং আরেকটি অংশ আমতল-রাইফেল ক্লাব হয়ে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় চলে যায়। সেখান থেকে তারা ফের নিউমার্কেটে জড়ো হতে চাইলেও সম্ভব হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘চট্টগ্রামের কর্মসূচি বিকেল ৪টায় সমাপ্ত ঘোষণা করা হলো। বীর চট্টলাবাসী আজকে শেষ পর্যন্ত রাজপথ দখলে রেখে বীরত্বের প্রমাণ দিয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টগুলো ছাত্র-জনতার দখলে ছিলো। একটা পয়েন্টে হামলা করলে দশটা পয়েন্ট দখল নিয়েছে ছাত্র-জনতা।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘যে যেখানে আছেন প্রত্যেকটা পয়েন্ট থেকে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজ নিজ অবস্থানে নিরাপদে মুভ করার অনুরোধ করছি। কেউ খালি হাতে মুভ করবেন না। যদি কেউ হামলা করতে আসে উপযুক্ত জবাব দেবেন। আগামীকাল আবারও দেখা হবে। ইনশাআল্লাহ। আর হ্যাঁ, ৬ আগস্ট লং মার্চ টু ঢাকা।’
এদিকে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, নিউমার্কেট ছাড়াও নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। কদমতলী এলাকায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের অনেকের হাতেই লাঠিসোঁটা, রড, স্টিলের পাইপ, ছুরি, রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখা গিয়েছে। তারা আন্দোলনকারী সন্দেহ হলেই থামাচ্ছেন এবং তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন।
এদিকে, সংঘর্ষের পর ছত্রভঙ্গ হয়ে অনেক শিক্ষার্থী নগরের রেলওয়ে স্টেশন, কদমতলি, ওয়াসা, জিইসি, রাইফেল ক্লাব, কাজির দেউড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় আটকা পড়েছেন। তাদের অধিকাংশই বাসা-বাড়ি এবং মার্কেটে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখান থেকে তারা ফেসবুক পোস্টে উদ্ধারের আহ্বান জানাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাসপাতালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে হওয়া সংঘর্ষে আহত অন্তত ৮০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। চারজনের মধ্যে দুজনকে ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড এবং বাকি দুইজনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আহতরা হলেন—কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মো. আলাউদ্দিন (২৬), নোয়াখালীর কবিরহাটের সোহরাব হোসেন (২২), ফয়সাল (২৫), আশরাফুল (৩০), জাহাঙ্গীর (২৬), সৌরভ (২২), মনির (২২), চিশতী (২৮), তাহমিন (১৯), শান্ত ইসলাম (২২), মাঈনউদ্দিন (২৪), কাওছার হোসেন (২৪), মাহবুব হোসেন (২৪), মো. মারফ (২৭), এহসান উল্যাহ (২৮), শাহীন (২৪), মো. শাহীন (২৬), শাকিব উদ্দিন (২০), আদিল (২৫), রিদোয়ান (২৪), সাকিব উদ্দিন (২৩), ফারুক (২০), কাঞ্চন চক্রবর্তী (৪৭) ও মো. সাজ্জাদ হোসেন (২৮)।
এছাড়া চমেক হাসপাতালে আহত অবস্থায় এসেছেন সীতাকুণ্ডে থেকে ফারহান (২৩), শুকুর (২০), অনিক (২৫), আবু তাহের (২৭), সুজন (৩৫), সাজ্জাদুল হক (২৭), জয়নাল আবেদিন (৩০), মো. কালাম উদ্দিন (২৭), রিমন (২২), নয়ন (৩২), রিমন (২২), নয়ন (৩২), বাবু (২০), মো. হাসান (১৯), মো. আসিফ (১৭), তাহমিদুল ইসলাম (২৩), আরিফ আহমেদ (৩৩), তপু (২৬), মো. কফিল (২৫), রবিউল আউয়াল (২৯), বাদশা (২৪), নাম-সাইফুল (৩৫), মো. ইমরান (১৯), পটিয়ায় আহত সাহেদ (২৩), মিন্টু চৌধুরী (৩৮), সুমন বিশ্বাস (২৬) ও মো. হাসান (২০)।