সন্ধ্যায় নিউমার্কেট থেকে আন্দোলনকারীরা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে
বিক্ষিপ্ত হামলা সংঘর্ষ গোলাগুলি
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রবিবারের কর্মসূচি সমাপ্তির ঘোষণা দেওয়া হলেও সড়ক ছাড়েনি আন্দোলনকারীদের একাংশ। কারফিউ চলাকালীন সময়েই নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দু্ই নম্বর গেট, আগ্রাবাদ চৌমুহনীসহ বিভিন্ন এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ এবং গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে।
রবিবার (৪ আগস্ট) সকাল থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে নগরীতে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পরে নগরের দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর এবং আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকায় আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এসব এলাকা গুলির আওয়াজে প্রকম্পিত হচ্ছে। আশেপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী এক যুবক সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমি মোটরসাইকেলে করে পতেঙ্গার দিকে আমার বাসায় যাচ্ছিলাম কাজির দেউড়ি থেকে। এসময় দেওয়ানহাটে অনেক পুলিশ সদস্যদের দেখতে পাই। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি আনুমানিক পাঁচশতাধিক আন্দোলনকারী রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। পরে আমি অন্য পথে বাসার উদ্দেশে রওয়ানা হই।’
জানা গেছে, সন্ধ্যার দিকে নিউমার্কেট এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের একাংশ বহদ্দারহাট এবং আরেক অংশ আগ্রাবাদের দিকে চলে গেছে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে সরে যায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। এরপর শিক্ষার্থীরা মিছিল করতে করতে বহদ্দারহাট এলাকায় অবস্থান নেয়।
নগরের বহদ্দারহাট-মুরাদপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বিকেল থেকে বহদ্দারহাট মোড়ে পুলিশ অবস্থান করছে। এ সময় লাঠিসোঁটাসহ ১০০ থেকে ১৫০ জনের মত কিছু লোক দাঁড়িয়ে ছিল। সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক গোলাগুলির আওয়াজ পান তারা। অনেক হৈ-হুল্লোরের আওয়াজও শোনা যায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের সেখানে দেখা গেছে।
এর আগে, আন্দোলনকারীরা সকাল ১০টার পর থেকে নিউমার্কেট চত্ত্বরে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে তাদের সাথে সংঘর্ষ হয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের। এ সময় পুরো নিউমার্কেট এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। একপর্যায়ে পুলিশ গিয়ে টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে বলেও জানা যায়। নিউমার্কেটের আশপাশের বিল্ডিং থেকে ছবি তোলার চেষ্টা করলেই তাদের দিকে তাক করা হয়েছে অস্ত্র।
সংঘর্ষের পর সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নিলে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের একটি অংশ রেলওয়ে স্টেশন-টাইগারপাস হয়ে ওয়াসা মোড়ের দিকে আসে এবং আরেকটি অংশ আমতল-রাইফেল ক্লাব হয়ে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় চলে যায়।
এরপর বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের নিউমার্কেট চত্বরে ফের আন্দোলনকারীদের একাংশ অবস্থান নেয়। এর আগে সেখানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতার মুখে অবস্থান নেওয়া সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘গোলাগুলির শব্দের পরেই সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান এবং বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করতে থাকেন। ওই সময় সাজোয়া যানসহ সেখানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়। একপর্যায়ে সেখানে জমায়েত হতে থাকে আন্দোলনকারীদের একাংশ।’
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা আগ্রাবাদ ও বহদ্দারহাটের দিকে অবস্থান নিয়েছে। সেখানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।’
সিভয়েস/
- পুলিশের টিয়ারশেল, আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ
- লালদিঘী-টাইগারপাসে আন্দোলনকারীরা
- নিউমার্কেট মোড়ে সংঘর্ষ, ‘গুলিবিদ্ধ’ ২০ জন চমেক হাসপাতালে
- আহতদের ভিড় বাড়ছে চমেক হাসপাতালে
- কারো বুকে কারো মাথায় কোপ, কারো গায়ে গুলি
- ছত্রভঙ্গের চারঘণ্টা পর কর্মসূচি ‘সমাপ্ত’ ঘোষণা
- কাজীর দেউড়িতে বিএনপির কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর
- পটিয়ায় সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক আহত
- চট্টগ্রামে আহতের সংখ্যা ছাড়ালো শতাধিক, অধিকাংশ গুলিবিদ্ধ
- একইস্থানে কর্মসূচি : থমথমে নগর, সতর্ক পুলিশ