বহদ্দারহাট-চান্দগাঁও
চোখজ্বলা অন্ধকার, গোলাগুলি
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
চারদিকে চোখজ্বলা অন্ধকার। দোকানপাট বন্ধ, গাড়িও নেই সড়কে। কিছুক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে হৈ-হুল্লোড়। থেমে থেমে শোনা যাচ্ছে গুলির শব্দ, চোখে পড়ছে আলোর ঝলকানি।
রবিবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরের বহদ্দারহাট-চান্দগাঁও এলাকায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
যদিও পুলিশ বলছে, কোথাও কোনো সংঘর্ষ এখন হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
স্থানীয় এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিকেলের পর আন্দোলনকারীরা জিইসি-দুই নম্বর গেইট দিয়ে বহদ্দারহাট চলে যায়। এসময় তারা চারপাশে ভাঙচুর চালালে পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের পেছনে অবস্থান নেয় সরকার দলীয় নেতাকর্মীরাও।
স্থানীয়রা সন্ধ্যার পর থেকেই অনেক গোলাগুলির আওয়াজ পাচ্ছেন। সংঘর্ষে পুরো এলাকা পরিণত হয়েছে রণক্ষেত্রে। চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা জুনায়েদ বলেন, 'এখন পর্যন্ত গুলির আওয়াজ হচ্ছে। চারদিকে অন্ধকার। কি হচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। বাইরে অনেক ছেলেদের ভিড় দেখেছি। আমার মনে হচ্ছে না এরা কেউ ছাত্র।'
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা ফাইজা বলেন, 'আমার বাসা থেকে এক কিলোমিটার দূরে অনেক গুলির আওয়াজ পাচ্ছি। এছাড়া মাঝেমধ্যে আলোর ঝলকানি দেখতে পাচ্ছি শব্দের সঙ্গে। প্রায় তিন ঘণ্টা যাবত এরকম পরিস্থিতি চলছে। মাঝেমধ্যে হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজ পাচ্ছি।'
এদিকে, নগরের চৌমুহনী এবং আগ্রাবাদ এলাকায়ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ছোঁড়ে। বিক্ষুব্ধরা আগ্রাবাদে ভবন, জয়বাংলা টাওয়ার, টাওয়ার ৭১, সেনা কল্যাণ ভবন, পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংকসহ আশপাশের বিভিন্ন ভবনে হামলা ও ভাঙচুর করে বলে জানা গেছে। জয়বাংলা টাওয়ার ও টাওয়ার ৭১ এর মালিক মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট।
এছাড়া পুলিশ অফিসার্স মেসে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নগর পুলিশের কমিশনারের বাসভবনের কাছাকাছি অবস্থান ভবনটির।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘অফিসার্স মেস ও কমিউনিটি ব্যাংকে হামলার খবর সত্য নয় বলে জানতে পেরেছি। আর সংঘর্ষ কোথাও নেই এখন।’
এর আগে, আন্দোলনকারীরা সকাল ১০টার পর থেকে নিউমার্কেট চত্ত্বরে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে তাদের সাথে সংঘর্ষ হয় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের। এ সময় পুরো নিউমার্কেট এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। একপর্যায়ে পুলিশ গিয়ে টিয়ারশেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে বলেও জানা যায়। নিউমার্কেটের আশপাশের বিল্ডিং থেকে ছবি তোলার চেষ্টা করলেই তাদের দিকে তাক করা হয়েছে অস্ত্র।
সংঘর্ষের পর সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নিলে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের একটি অংশ রেলওয়ে স্টেশন-টাইগারপাস হয়ে ওয়াসা মোড়ের দিকে আসে এবং আরেকটি অংশ আমতল-রাইফেল ক্লাব হয়ে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় চলে যায়।
এরপর বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের নিউমার্কেট চত্বরে ফের আন্দোলনকারীদের একাংশ অবস্থান নেয়। এর আগে সেখানে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতার মুখে অবস্থান নেওয়া সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
এদিকে, নগরের বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৮৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আহতদের মধ্যে আইসিইউতে আছেন তিনজন। তারা হলেন—মিনহাজ রনি, মো. আদনান ও মো. শাহেদ। তবে এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া অনেকে আহত হয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এবং আন্দরকিল্লার জেনারেল হাসপাতালেও চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।