সেই সামশুলের বাড়িতে সম্প্রতি রাতযাপন করেন সমন্বয়ক হাসনাত
শ্রমিক লীগ নেতাকে বাঁচানোর দায়িত্বে বিএনপি!
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের পটিয়া থানায় সম্প্রতি বিএনপির দায়ের করা একটি মামলার আসামি করা হয় উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি সামশুল ইসলামকে। তবে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম মামলায় শীর্ষস্থানীয় ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম থাকাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন। একইসাথে ওই নেতাকে গ্রেপ্তার এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় ‘আসামি না করার’ গ্যারান্টিও দিয়েছেন তিনি!
মামলা-পরবর্তীতে শ্রমিক লীগ নেতা সামশুল ইসলাম এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলমের মুঠোফোনে কথোপকথনের ৪ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড সিভয়েস২৪’এর হাতে এসেছে। ওই কথোপকথনে ওঠে এসেছে এসব বিষয়।
রেকর্ডটিতে শুরুতেই দুজনকে সালাম বিনিময় করতে শোনা যায়। এরপর খোরশেদ আলমকে উদ্দেশ্য করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সামশুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল এটা কি হয়ে গেল? আমিতো গত ৬ মাসেও পটিয়া যাইনি।’
উত্তরে খোরশেদ আলম বলেন, ‘বুঝেছি বুঝেছি, এটা হলো যে ইন্টেনশন। আমি বলেছিলাম না? এরপর সামশুল বলেন, ‘এখন আপনি যাদের সন্দেহ করেছেন আমিও করছি, ওরা ৫০ লাখ টাকার চ্যালেঞ্জ করেছে মামলা ওরা দেয়নি। মামলা-টামলা সব করার দায়িত্ব খোরশেদ ভাইয়ের।’
ওই শ্রমিক লীগ নেতার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি আল্লাহর ঘর ঘুরে এসেছি, আমি দুই নম্বর কথা বলি না। আমি আপনাকে বলেছি না? এটার দায়িত্ব আমি নিয়ে নিলাম। আপনি একটু করে এটিকে কন্ট্রোল করেন যেহেতু একটা বৈঠক হয়েছে আপনার সাথে। এনাম ভাই বলেছে এটা টেকনিক্যালি কভার করবেন। আপনি আপাতত চুপ করে থাকেন।’
আশঙ্কা প্রকাশ করে সামশুল ইসলাম আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘এখন মামলা তো আরো হচ্ছে, ওখানেও ঢুকিয়ে দিবেন নাকি।’ জবাবে খোরশেদ বলেন, ‘না না, এটা নিশ্চিত থাকেন। বাকিগুলোর গ্যারান্টি আমি দিলাম। লোকালি প্লাস গ্রুপিং বিভিন্ন জায়গায় আছে।’
সামশুল বলেন, ‘লোকালি তো ওভাবে আমি দেখছি না। এনাম-গিয়াস ছাড়াতো আমার বিরোধী আর মানুষ নেই। এনাম গিয়াস এখন ব্যবসা খুঁজে। ১২ জনের সিন্ডিকেট একটা করেছে। ওরা প্রতিদিন ব্যবসা আলাদা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
ফের দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে খোরশেদ বলেন, ‘এখন আমি যেটা বুঝাতে চাচ্ছি আপনাকে, এ বিষয় নিয়ে আমি পুরোপুরি দায়িত্ব নিয়েছি।’
অডিও রেকর্ডের একপর্যায়ে শোনা যায়, খোরশেদ আলমের কাছে পরামর্শ চেয়ে সামসুল জিজ্ঞেস করেছেন তিনি ঘরে থাকবেন নাকি সরে যাবেন। উত্তরে খোরশেদ বলেন, ‘আপনাকে সরতে কে বলেছে? কোন ..... (প্রকাশ অযোগ্য) বলেছে সরতে? ভাই আমি দায়িত্ব নিয়েছি। পুরোপুরি আমার নিয়ন্ত্রণে বলেছি না? এটা আমি বলবো। আপনি স্বাভাবিক থাকেন, এখানে কোনো ঝামেলা নাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম সিভয়েস২৪’কে বলেন, 'যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা স্বাভাবিক নিয়মেই মামলা করেছে। একটি অপরিচিত নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে বললো আমি অমুক। তার সঙ্গে আমার শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। আমি কথা বলেছি, এখানে আপত্তিকর কী আছে আমি বুঝতে পারছি না। আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো শব্দ আমি ব্যবহার করিনি।'
‘গ্রেপ্তার থেকে’ নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় ‘আসামি না করার’ গ্যারান্টির বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশেদ বলেন, ‘এটা ভুল। ফোনে উনি আমাকে বলেছে, আমিতো মামলার ৩৩ নম্বর আসামি। সামনেও মামলা হবে। মামলায় আমার নাম আসবে কি-না।’ তো আমি বলছি, আমি দেখবো। এখন এটাতো আমার বিষয় না। যে ক্ষতিগ্রস্ত, সে মামলা করবে। আমিতো মামলায় ঢুকিয়ে দিব বলতে পারি না। আমি একটা দায়িত্বশীল পদে আছি। তার নম্বরটা আমার এখানে সেইভ ছিল না। রিসিভ করার পরে কেটে দেওয়াটা অসৌজন্যতাবোধ। সেইভ থাকলে আমি রিসিভ করতাম না। যেহেতু পটিয়ার মানুষ, উনি দুঃখের কথা বলেছে আমি শুনেছি।’
এদিকে, এ বিষয়ে জানতে পটিয়া উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি সামশুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
গত ২০ আগস্ট মোহাম্মদ আলী আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে পটিয়া থানায় ১৮ জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সময় পটিয়া উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৭৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় ২০০ থেকে ৩০০ জনকে। মামলার ৩৩ নম্বরে রয়েছে উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সামশুল ইসলামের নাম। ওই শ্রমিক লীগ নেতার বাড়িতে সম্প্রতি রাতযাপন করে ‘বিতর্কিত’ হয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
প্রসঙ্গত, ৮ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বড় একটি বহর নিয়ে পটিয়ার কোলাগাঁও ইউনিয়নে উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সামশুল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে যান। সেখানে রাতযাপন করে ৯ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সামশুল আলমের বড় ছেলে হাবিবুল ইসলাম সাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসনাত আবদুল্লাহর সহপাঠী বলে জানা গেছে।