বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ
জামালখানে মাত্র ১ টাকায় পুজোর বাজার
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন বিপন্ন। আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে অনেকের কষ্ট হয়; আর ধারদেনা করে দোকান থেকে পণ্য না পেলে অভুক্ত থাকতে হয় তাদের অনেককেই। এমন অবস্থায় প্রধান উৎসবগুলোতে এসব বঞ্চিত মানুষের অংশগ্রহণ একপ্রকার বিলাসিতা ও অসম্ভব ব্যাপার। তাই আসন্ন শারদীয় দূর্গাপূজা উৎসবকে সামনে রেখে ‘বঞ্চিত’ মানুষদের জন্য ‘১ টাকায় পুজোর বাজারের’ আয়োজন করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। তাদের অনুষ্ঠানের স্লোগান ছিল— ‘সবাই মিলে উৎসব সবাই মিলে বাংলাদেশ’।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম জামালখানের এক্সক্লুসিভ কনভেনশন হলে এ আয়োজন করা হয়। এতে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন নিম্নআয়ের এলাকা থেকে সহস্রাধিক শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এক টাকার বিনিময়ে নতুন কাপড় কিনেছেন ও পরিবারের জন্য বাজার করেছেন। এসব মানুষের আসা যাওয়ার জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ফ্রি বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা ছিল। এছাড়া, সবার জন্য ছিল নানা আনন্দ আয়োজন ও মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চাল, ডাল, চিনি, নারকেল, সুজি, ডিম, তেলসহ প্রায় ২১ রকমের পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছিল একটা ‘সুপারশপ’। যার প্রতিটি আইটেমের দাম মাত্র ১ টাকা! সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই সুপারশপে প্রতি পরিবারের দুই জনের জন্য এক টাকা দিয়ে নতুন কাপড় কেনার ব্যবস্থা যেমন ছিল; তেমনি ১ টাকা দিয়ে আরো ৫টি যেকোনো আইটেম বাছাইয়ের সুযোগ ছিল।
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ওমেন ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, আইআইইউসি, চট্টগ্রাম কলেজসহ বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশি-বিদেশি ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক বিক্রেতার দায়িত্ব পালন করেন এই বাজারে।
বিদ্যানন্দের বোর্ড ডিরেক্টর জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রতিটি উৎসবে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করে চাই সম্প্রীতি বন্ধন গড়তে। সে সাথে নিশ্চিত করতে চাই উৎসবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অংশগ্রহণ।’
উৎসবে অংশ নেয়া বালা রানী বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি দুর্গাপূজার আগে আমাদের দরিদ্র সমাজের জন্য কেউ এত আনন্দ আয়োজন করবে! আজ আমরা খুব খুশি বিদ্যানন্দ এই আয়োজন করেছে। তাঁরা নতুন কাপড় দিয়েছে, এক টাকা দিয়ে সংসারের পূজার বাজার করতে পেরেছি।’
দেশ-বিদেশে ভিন্নতর ও অভিনব সব আইডিয়া নিয়ে সেবামূলক কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদ্যানন্দ। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কেউ যখন ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা তখন জীবনবাজি রেখে করোনা মহামারি মোকাবেলায় সম্মুখসমরে যুদ্ধ করে সাধারণ মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবায় তাদের অসামান্য সব অবদানের জন্য ২০২৩ সালে সরকার তাদের একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও ২০২২ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় মানবকল্যাণ পদক ও ২০২১ সালে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কতৃক ‘কমনওয়েলথ পয়েন্টস অফ লাইট’ পদকে ভূষিত হয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।