Cvoice24.com

ইসকন নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট
‘দুর্বৃত্তদের’ ধরতে হাজারি গলিতে যৌথবাহিনীর অভিযান

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:৫৯, ৬ নভেম্বর ২০২৪
‘দুর্বৃত্তদের’ ধরতে হাজারি গলিতে যৌথবাহিনীর অভিযান

চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার হাজারি গলি এলাকায় ধর্মীয় সংগঠনকে নিয়ে ফেসবুক পোস্ট ঘিরে বিক্ষোভ সামাল দিতে যান পুলিশ ও সেনাসদস্যরা। এ সময় তাদের ওপর 'এসিড' এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পাঁচ শতাধিক 'দুর্বৃত্ত'। হামলায় সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, সেনা ও পুলিশ সদস্য মিলে আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। এর পরপরই হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী।

তবে অভিযান চালিয়ে মোট কতজনকে আটক করা হয়েছে সেটি নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এটি কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠির ওপর পরিচালিত অভিযান নয়। বরং এটি ছিল দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অভিযান। দুর্বৃত্তদের জাতি, ধর্ম কিংবা বর্ণ নেই।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দিবাগত রাত দুইওটার দিকে টাস্কফোর্স-৪ এর যৌথবাহিনীর একজন প্রতিনিধি এমনটি জানান। 

তিনি সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘এটি কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠির ওপর পরিচালিত যৌথ অভিযান নয়। এটি ছিল দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অভিযান। যারা একটি ব্যক্তিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলো। আর দুর্বৃত্তদের সংখ্যা ছিল পাঁচ শতাধিক। ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারেই মূলত যৌথ বাহিনী গিয়েছিলো। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে এসিড এবং ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারা হয়। এতে পুলিশের ৭ জন এবং সেনাবাহিনীর ৬ জন সদস্য আহত হয়। যাদের মধ্যে একাধিক জন এসিডদগ্ধ। এছাড়া সেনাবাহিনীর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।’

সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘যে এসিড নিক্ষেপ করা হয় এটি একেবারে বাহিনীর সামনে এসে পড়ে। এটি আসলে অত্যন্ত দুঃখজনক। এর পরিপ্রেক্ষিতে দোষী ব্যক্তিদের সনাক্তকরণে এই যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। এই অভিযান দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। তাদের কোনো জাতি, ধর্ম কিংবা বর্ণ নেই। আমাদের অভিযান শেষ। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সম্পৃক্ততা পেলে থানায় হস্তান্তর করা হবে।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের দাবিটা ছিল তাদের হাতে ওই ব্যক্তিকে তুলে দেওয়া। এটা আসলে হয় না। গত ৫ আগস্টও কারো হাতে কাউকে আমরা তুলে দিইনি।'

'কেউ অন্যায় করলে প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী মামলা হবে বা বিচার হবে।’ যোগ করেন তিনি। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার প্রোফাইলে একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন। সেখানে ইসকন নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য ছিল। ফটোকার্ড সম্বলিত সেই পোস্ট মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেন হাজারী গলির মিয়া শপিং সেন্টারের মোল্লা স্টোর নামে দোকান মালিক ওসমান গণি। আর সেই পোস্টে ক্ষুব্ধ হয়ে একইদিন বিকেল ৪টার দিকে স্থানীয়দের একাংশ সেই দোকান ভাঙচুর করে এবং ওই ব্যবসায়ীর ওপর আক্রমণ চালায়। 

একপর্যায়ে তাকে অবরুদ্ধ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা পোস্টদাতা ওই ব্যক্তিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেন। কিন্তু পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হেফাজতে নিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চড়াও হয় বিক্ষুব্ধরা। এরপর তারা পুলিশ ও সেনাসদস্যদের ওপর 'এসিড' ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে হামলাকারী দুর্বৃত্তরা সংঘর্ষে জড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে। এরপরই জড়িতদের গ্রেপ্তারে রাত আনুমানিক ১১টা পর্যন্ত অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। 

এ বিষয়ে নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘হাজারি গলির ওসমান গণি নামে এক ব্যবসায়ী একটি ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। পোস্টটি ইসকন সম্পৃক্ত। যা নিয়ে কিছু লোকজন সংক্ষুব্ধ ছিল। একপর্যায়ে ওই ব্যবসায়ীকে আক্রমণ করার চেষ্টা করা হলে পুলিশ গিয়ে আক্রমণকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে যারা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছিল তাদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। তাদের আক্রমণে সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) মাহফুজুর রহমানসহ সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। এর মধ্যে একজন এসিডদগ্ধ আছেন এবং বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে আটকের জন্য অভিযান চলছে। আর যে ব্যবসায়ীকে আক্রমণের চেষ্টা চালিয়েছিল তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিসের প্রেক্ষিতে কি হলো— পুরো বিষয়টি তদন্ত করে এবং যারা এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: