হাজারি গলির ঘটনায় যা বললো ইসকন
সিভয়েস২৪ ডেস্ক
চট্টগ্রাম নগরের হাজারি গলিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। একইসাথে সংগঠনটির পক্ষ থেকে হাজারি গলিতে হামলা-ভাঙচুরসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দাও জানানো হয়েছে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) রাতে ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী সাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশকে নানাভাবে জড়িয়ে আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। আমরা এ ধরনের অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাই এবং স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে, ইসকন বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংগঠন, যা সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সহনশীলতা ও মানবকল্যাণে নিবেদিত।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সর্বজীবে দয়া, প্রেম, সেবা ও অহিংস নীতির বাণী অবলম্বন করে ইসকন বাংলাদেশ কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনই আমাদের নীতি। এজন্য ইসকন দুর্যোগকালে আতর্জনের মধ্যে উদারতার সহিত ত্রাণকার্য ও সামাজিক সহায়তা পরিচালনা করে আসছে যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানাধীন হাজারী গলি এলাকায় সংঘটিত হামলা-ভাঙচুরসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এসকল ঘটনার সাথে ইসকনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
‘এ ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনা রোধে পর্যাপ্ত সময় পূর্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকার ও প্রশাসনকে সবিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি এবং সেইসঙ্গে নিরীহ জনসাধারণ যেন কোনো হয়রানির সম্মুখীন না হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি। সরকারের প্রতি আমাদের বিশেষ আহ্বান, তারা যেন যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করেন এবং যেকোনো ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রবাহ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ইসকন বাংলাদেশের সমুজ্জ্বল ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার ক্ষেত্রে সরকারসহ সর্বমহলের ঐকান্তিক সহযোগিতা আমরা প্রার্থনা করছি’ —বলা হয় বিবৃতিতে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার প্রোফাইলে একটি ফটোকার্ড শেয়ার করেন। সেখানে ইসকন নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য ছিল। ফটোকার্ড সম্বলিত সেই পোস্ট মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেন হাজারী গলির মিয়া শপিং সেন্টারের মোল্লা স্টোর নামে দোকান মালিক ওসমান গণি। আর সেই পোস্টে ক্ষুব্ধ হয়ে একইদিন বিকেল ৪টার দিকে স্থানীয়দের একাংশ সেই দোকান ভাঙচুর করে এবং ওই ব্যবসায়ীর ওপর আক্রমণ চালায়।
একপর্যায়ে তাকে অবরুদ্ধ করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় বিক্ষুব্ধরা পোস্টদাতা ওই ব্যক্তিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেন। কিন্তু পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হেফাজতে নিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চড়াও হয় বিক্ষুব্ধরা। এরপর তারা পুলিশ ও সেনাসদস্যদের ওপর ‘এসিড’ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে হামলাকারী দুর্বৃত্তরা সংঘর্ষে জড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে। এরপরই জড়িতদের গ্রেপ্তারে রাত আনুমানিক ১১টা পর্যন্ত অভিযান চালায় যৌথবাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে, নগর পুলিশ গতকাল (বুধবার) সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছে— হাজারি গলিতে যৌথ অভিযানে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় ইসকন সমর্থকরাই জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বুধবার রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দ করেছে।