পরিচ্ছন্নকর্মীর চোখের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন মেয়র
হাজিরায় কঠোর মেয়রের ‘নরম সুর’
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রতিটি ওয়ার্ড পরিদর্শনে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গিয়েই বরাবরের মতো পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাজিরা নিচ্ছিলেন তিনি। তাদের নামে নানান অভিযোগ ও কাজের সুনাম শুনে জানান প্রতিক্রিয়াও। তবে এ সময় দুই পরিচ্ছন্নকর্মীর শারীরিক সমস্যা দেখতে পেয়ে ‘নরম সুরে’ তাদের সঙ্গে কথা বলে দায়িত্ব নিলেন চিকিৎসার।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে চসিকের ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডে পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়গুলো জানতে পারেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ সময় শ্রবণশক্তিহীন জসিম উদ্দিনের সমস্যার কথা শোনেন এবং আরেক পরিচ্ছন্নকর্মী রহিম বাদশার চোখের সমস্যায় দেখতে পেয়ে চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরিদর্শনে মেয়রকে কাছে পেয়ে পরিচ্ছন্নকর্মীরা তাদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। পরিচ্ছন্নকর্মীদের অভিযোগ- তারা তাদের নিরাপত্তা সরঞ্জামের কিছুই পান না। পাশাপাশি ভ্যান নষ্ট হলে সেটিও তাদের পকেটের টাকা দিয়ে মেরামত করতে হয়। এছাড়াও, তাদের বেতনও মিলে দেরিতে।
রহিম বাদশার চোখের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন মেয়র
একে একে পরিচ্ছন্নকর্মীদের হাজিরা নিচ্ছিলেন মেয়র। নাম শুনে পরিচ্ছন্নকর্মীরাও উপস্থিত হচ্ছিলেন মেয়রের সামনে। হাজির হওয়া পরিচ্ছন্নকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগে কেউ বলছেন কাজ করেন আবার কেউ বলছেন তারা কাজ করেন না।
এমন সময় তালিকায় হঠাৎ নাম আসে রহিম বাদশা নামে এক পরিচ্ছন্নকর্মীর। মেয়র তার নাম ধরে ডাকতেই উপস্থিত একজন মজার সুরে বলেন, কিরে তুকে ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে দেখা যায় না। তবে অনেকে আবার তিনি ভালো মানুষ- কাজ করেন নিয়মিত এমন কথাও বলেন।
যদিও এসবের কিছুই কর্ণপাত করেননি সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। পরিচ্ছন্নকর্মী রহিম বাদশা সামনে আসতেই তার চোখের দিকে নজর পড়ে মেয়রের। সঙ্গে সঙ্গে মেয়র জিজ্ঞেস করেন চোখের কি সমস্যা? পরিচ্ছন্নকর্মীও তার চোখের সমস্যার কথা মেয়রকে জানান। আর মেয়র ‘নরম সুরে’ জানিয়ে দেন ‘রহিম বাদশার চিকিৎসার দায়িত্ব চসিকের’।
তবে এর আগেই মেয়র তার চোখের পরীক্ষা নিয়েছেন। উপস্থিত জনগণের সামনে আঙ্গুল উঁচিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করেছেন এখানে কতটি আঙ্গুল। যদিও কর্মীর স্বাভাবিক চোখে না দেখার কারণে তিনি ভুল বলেছেন। তখন মেয়র পুরোপুরি নিশ্চিত হন ওই পরিচ্ছন্নকর্মী আসলেই চোখের সমস্যায় ভুগছেন। তাই যেহেতু সে দিনের বেলায় কম দেখতে পান তার জন্য রাতে কাজ করা সমস্যার।
এ সময় মেয়রের কাছে ওই পরিচ্ছন্নকর্মী আবদার করেন যাতে তাকে রাতের বেলায় বাদ দিয়ে দিনের কাজ করার সুযোগ দেন। পরে মেয়র বিষয়টি অফিসিয়াল জানাবেন বলে জানান। তবে আগে চিকিৎসা করানোর কথা জানান মেয়র।
মেয়রের চিকিৎসার আশ্বাসে খুশি রহিম বাদশা
চোখের চিকিৎসার বিষয়ে মেয়রের দেওয়া আশ্বাসে খুশি বলে জানিয়েছেন পরিচ্ছন্নকর্মী রহিম বাদশা। তিনি সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘১০ বছর ধরে সিটি করপোরেশনে কাজ করছি। আর এ চোখের সমস্যাও ১০-১৫ বছর ধরে। মেয়র মহোদয় আজ আমার চোখের অবস্থা দেখতে পেয়ে চিকিৎসা করানোর কথা বলেছেন। এতে আমি অনেক খুশি।’
তিনি আরো বলেন, ‘মেয়র মহোদয়কে এটিও বলেছি, যাতে আমাকে দিনের বেলায় কাজ করার সুযোগ দেন। তাহলে আমার জন্য উপকার হবে।’
পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দ্রুতই দেওয়া হবে
চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এসব তো আসলে আগে থেকে হয়ে আসছে। আমি মাত্র কিছুদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। আশা করি আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। শ্রমিকদের সেফটি মেজারমেন্টের জন্য যেটা যেটা দরকার, সেগুলো দেওয়া হবে। আগে কেন দেওয়া হয়নি; সেটা জানি না। তবে এখন থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরিচ্ছন্নকর্মীরা যেহেতু বেতন পান। তাই তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো কাজ করা। আর আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সেফটি মেজারমেন্টের বিষয়গুলো দেখা। ছোট ছোট ভ্যানের কথা বলছে সেগুলো আমরা দেখছি।’
পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও মেয়রের একটি অংশ জানিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি আশা করব আমি যেহেতু জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি; তারাও (পরিচ্ছন্নকর্মী) আমার একটা অংশ। আমার অংশ হিসেবে জনগণের যাতে কোন দুর্ভোগ না হয়; সে হিসেবে তারা কাজ করবে। এক্ষেত্রে কোন ধরনের ফাঁকিবাজি, কোন ধরনের গাফিলতি; আমি বরদাস্ত করব না। মানুষ যাতে কোনো ধরনের অভিযোগ না করে।’