স্বাভাবিক সব ‘সুবিধা’ পাচ্ছেন কারাগারে
চিন্ময়ের ডিভিশন আদেশ পৌঁছেনি পাঁচ দিনেও
সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক
# থাকছেন আলাদা সেলে। দেওয়া হয়েছে বাটি-ঘঁটি সবই। রয়েছেন আলাদা পাচক। রান্না হচ্ছে বিশেষ খাবার। নিয়মিত পাচ্ছেন ওষুধপথ্য।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় কারাগারে থাকা সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ডিভিশন পাননি। কারাগার থেকে আদালতের আদেশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। কিন্তু এখনো সেটি হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।
ডিভিশন না পেলেও আদালতের আদেশ অনুযায়ী ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে কারাভ্যন্তরে ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। তাকে রাখা হয়েছে আলাদা একটি সেলে। দেওয়া হয়েছে বাটি-ঘঁটি সবই। রয়েছেন আলাদা পাচক (রাঁধুনি)। রান্না হচ্ছে বিশেষ নিরামিষ খাবার। ওষুধপথ্যও সরবরাহ করা হচ্ছে নিয়মিত।
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, আদালতের আদেশ পেলেও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ‘অনুমতি’ পাওয়া যায়নি। তাই তাকে এখনো ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। যেহেতু চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এই মুহূর্তে আলোচিত, তাকে ‘টপ প্রায়োরিটি’র ভিত্তিতে ‘হ্যান্ডেল’ করছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইনজীবী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আদালতের আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর সেই আদেশ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠালে তিনি ডিভিশন সুবিধা দেওয়ার অনুমতি প্রদান করেন। অনুমতিপত্রটি জেল সুপারকে পাঠালে তিনি সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ডিভিশন দেওয়া সংক্রান্ত আদালতের একটি আদেশ আছে। কিন্তু এর জন্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (জেলা প্রশাসক) অনুমতিও লাগে। কোর্টের অর্ডারটি পাঠিয়েছি। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্বাক্ষর করে আমাদের কাছে পাঠালে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবাইকে সব ভাবে রাখা যায় না। একেকজনকে একেকভাবে হ্যান্ডেল করতে হয়। এই মুহূর্তে উনি (চিন্ময় কৃষ্ণ) তো আলোচিত। সুতরাং ওনাকে একটু টপ প্রায়োরিটি দিয়ে হ্যান্ডেল করা লাগছে।'
তিনি বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে এই কারা কর্মকর্তা বলেন, ‘বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। স্বাভাবিক সবকিছু পাচ্ছেন তিনি। তবে ডিভিশনের সুযোগ সুবিধাগুলো দেওয়া হচ্ছে না।’
ডিভিশন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম শনিবার সন্ধ্যায় সিভয়েস২৪’কে বলেন,‘ডিভিশনের ব্যাপারে কেউ এখনো আবেদন করেননি।’
‘ডিভিশনের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার মতো কেউই নেই এখন’
এদিকে চট্টগ্রাম ইসকন প্রবর্তক মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমাদের সব আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাঁর পক্ষে আগামী জামিন শুনানিতে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারবেন কিনা—তা নিয়েই আমরা সন্দিহান। আর ডিভিশনের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার মতো কেউই নেই এখন। সবাই এখন প্রাণভয়ে এবং মামলা আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’
কোতোয়ালী থানায় বিএনপির সাবেক এক নেতার দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। একইসঙ্গে সামাজিক মর্যাদা ও ধর্মগুরু বিবেচনায় তাকে ডিভিশনের ব্যবস্থা করতে কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন আদালত। এছাড়া তাঁর আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে চিকিৎসা ও ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়—কারাবিধি অনুযায়ী সে ব্যবস্থা নিতে জেল সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। প্রায় হাজারখানেক অনুসারী প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়।
চট্টগ্রাম আদালত ভবনে প্রবেশপথের বিপরীতে রঙ্গম সিনেমা হল গলিতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাতে তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন কোতোয়ালী থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। একইদিনে, খুনের শিকার আইনজীবি আলিফের ভাই আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ ১১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪শ থেকে ৫শ জনের বিরুদ্ধে একই থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন।
এর আগে, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কোতোয়ালী থানায় ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও প্রায় ১৪০০ জনকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।