চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে নিয়ে সংঘর্ষ
এক সেকেন্ডে একই হাতে চার কোপ!
শারমিন রিমা, সিভয়েস২৪
# চমেক হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন পিকআপচালক আল আমিন, খবর নিচ্ছেন না কেউ
‘গাড়িটা পার্কিংয়ে রেখে আমি বের হয়েছি মাত্র। এর মধ্যে একটা মিছিল গেছে। ১০-১২ জন এসে কিরিচ নিয়ে দৌড়ানি দিয়েছে আমি খেয়াল করিনি। চোখের পলক পড়তেই আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। তখন আমি হাতটা সামনে এনে বলতে থাকি ভাইরে আমারে মারিস না। কিন্তু ওরা কিরিচ নিয়ে সেই হাতেই কোপের পর কোপ দিতে থাকে। মনে হয় এক সেকেন্ডের ভেতর চারটা কোপ পড়েছে।’
— চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন পিকআপচালক আল আমিন এভাবে বহিস্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোকে ঘিরে ‘সংঘর্ষ’ তাঁকে কোপানোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন।
ঘটনার দিন মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর, সময় বিকেল আনুমানিক ৫টা। গাড়ি পার্কিংয়ে রেখে কোর্ট বিল্ডিং চত্বরের সামনে দিয়ে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন আল আমিন।
সেদিনের ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে আল আমিন বলছিলেন, ‘আমি সাধারণভাবে হাঁটছিলাম। আমার সামনে দিয়ে একটা মিছিল গেছে। ওরা ভেবেছে আমি মিছিলে ছিলাম। ওদের হাত থেকে বাঁচতে যে হাত আগলে দিয়েছিলাম সেই হাতে কোপের পর কোপ দিয়েও ওরা আমাকে ছাড়েনি। হাতের পরে পায়েও কোপ দিতে শুরু করে। কিছু কোপ মাটিতে পড়ে, পেটেও কোপ পড়ছে। জিন্স প্যান্ট আর বেল্ট থাকায় অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। জিন্স প্যান্ট না থাকলে ভুড়ি বের হয়ে যেত।’
জীবিকার তাগিদে ভোলার চরফ্যাশন থেকে ২০১০ সালে চট্টগ্রামে আসেন আল আমিন। সেই থেকে পিকআপ চালিয়ে চলে তাঁর সংসার। নগরের কোতোয়ালী থানার ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় একা থাকেন তিনি। বরিশালের ভোলায় তাঁর স্ত্রী, ৮ বছরের এক ছেলে আর ৩ বছরের এক মেয়ে থাকে। কোনো মাসে আয় ৭ হাজার, আবার কোনোমাসে ১৫ হাজার, আবার কোনো কোনো মাসে ২০ হাজার টাকাও আয় করেন তিনি। যার সিংহভাগই স্ত্রী-সন্তানের জন্য পাঠান।
গত ৬ দিন ধরে হাসপাতালের বিছানায়। বাড়িতে কানাকড়িও পাঠাতে পারছেন না, উল্টো কর্জ করে চিকিৎসা ব্যয় আনাতে হচ্ছে। এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরছে আল আমিনের। বলছিলেন, ‘চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার ভালোমন্দ কিছু বলছেন না। আমার কাজকর্মও নাই। আমার ডায়বেটিসও আছে। এজন্য এতোদিনেও কোপানোর জায়গা শুকাচ্ছে না। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। সামনের দিন কীভাবে চলবে জানি না।’
আল আমিনের বড়ভাই মো. ফারুক সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘আমি সীতাকুণ্ডে থাকি। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে দেখি ভাইয়ের এই অবস্থা। আরেকটু হলে তো ভাইটারে ওরা মাইরাই ফেলতো। অল্পের জন্য রক্ষা পাইছে। ও আরেকটু সুস্থ হোক। আমরা মামলা করবো। আমরা এর বিচার চাই।’
আল আমিন ছাড়াও সংঘর্ষের ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৪ জন। তাদের মধ্যে ৫ জন আল আমিনের সঙ্গে অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে আল আমিন ও এক পুলিশ সদস্য ছাড়া বাকিরা বাড়ি ফিরে গেছেন। পেশাগত কারণে ওই পুলিশ সদস্য কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে, গত ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময় অনুসারীরা প্রিজনভ্যান আটকে দেন। তাঁরা এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে এবং সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে সেটি ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষে রূপ নেয়।