Cvoice24.com

`ডট গ্যাং` সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রাফি-রিজাউরের বিরুদ্ধে
সমন্বয়ক রাসেল-রাফির দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেল অবশেষে

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১১ জানুয়ারি ২০২৫
সমন্বয়ক রাসেল-রাফির দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেল অবশেষে

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফাটল এখন প্রকাশ্যে। এরই মধ্যে প্ল্যাটফর্মটির মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ এবং আরেক শীর্ষ সমন্বয়ক রাসেল আহমেদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠেছে। আর এই অভিযোগের তীর—শীর্ষ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা রিজাউর রহমানের বিরুদ্ধে। 

এদিকে, হামলার ঘটনায় শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে রাসেল আহমেদসহ কয়েকজন সমন্বয়ক চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। একপর্যায়ে সেখানেই রাফি-রিজাউর দলবলসহ উপস্থিত হন। এরপর উভয়পক্ষ জড়ায় হাতাহাতি-বিতণ্ডায়। 

মাসউদ-রাসেলের ওপর হামলা, নেতৃত্বে রিজাউর

সংবাদ সম্মেলনে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিকেল ৩টায় নগরের বিপ্লব উদ্যানে পথসভা করে লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এবং সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ। সেই কর্মসূচি শেষে নগরের ওয়াসা মোড়ের একটি ভবনের পাঁচতলায় যান মাসউদ-রাসেলসহ অন্যান্যরা। সেখানে তারা একটি সভা করেন।

ওই সভায় উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘মিটিং চলাকালীন সময়ে হঠাৎ রিজাউর ডট গ্যাং সদস্যদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। এসেই মাসউদকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা প্রোগ্রাম করেছেন কাকে জানিয়েছেন’। উনি উত্তর দিলেন, ‘ফেসবুকেই তো এটা প্রচার করা হয়েছে এরকম একটা প্রোগ্রাম হবে’। রিজাউর তখন জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি আমাকে জানাননি কেন’। তখন মাসউদ জবাব দেন, ‘চট্টগ্রামের রাসেল-রাফিসহ যাদেরকে বলা দরকার তাদের বলেছি। আমি আপনাকে চিনি না। আপনি কে’। এরপরই রিজাউরকে ঘিরে অন্যরা ‘সমন্বয়ক-সমন্বয়ক’ স্লোগান দিতে থাকে।’

‘একপর্যায়ে রিজাউরের সাথে থাকা ডট গ্যাং সদস্যরা রাসেল এবং মাসউদকে ঘিরে ধরে। এরপর ওদেরই একজন কাকে যেন কল দিয়ে পোলাপান ডেকেছে। এ সময় ভাইদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং হামলা চালায়। একপর্যায়ে আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওমর ফারুক সাগর এসে আমাদের উদ্ধার করেন।’-বলেন তিনি।

যে অভিযোগ করলেন রাসেল 

এদিকে, হামলার অভিযোগ এনে রাতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আজকের কর্মসূচি জিইসি মোড়ে এসে শেষ করি। পরবর্তীতে আমরা আগামী কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে আলাপের জন্য একটি অফিসে বসি। সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর রাফিকে ফোন দিয়ে পাচ্ছিলাম না। প্রায় ৩০ মিনিট পর সে দলবল নিয়ে আসে। সেখানে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা সমন্বয়ক রিজাউর তার নিয়ন্ত্রণে থাকা ডট গ্যাংকে নিয়ে আসে। এসে আবদুল হান্নান মাসউদকে প্রশ্ন করেন তাকে কেন জানানো হয়নি। তিনি বলেছেন, হু আর ইউ? যেহেতু তিনি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তিনি সবাইকে চেনেন না এটাই স্বাভাবিক।’

রাসেল বলেন, ‘এরপর সমন্বয়ক রিজাউর র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ডট গ্যাং সদস্য সাদিক আরমান, নিজামুদ্দিনসহ আরও অনেক উগ্র ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মাসউদ ভাই এবং আমাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। আমরা একটা রুমে আশ্রয় নিই। প্রায় একঘণ্টা সেখানে আমরা অবরুদ্ধ ছিলাম। তারা বারবার সেখানে উস্কানিমূলক স্লোগান দিচ্ছিল। একপর্যায়ে তারা সেখানে ভাঙচুরও করে। যার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে।’

‘জুলাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা আবদুল হান্নান মাসউদ, মাহিন সরকার, রিফাত রশীদকে চট্টগ্রামে অবরুদ্ধ করে রাখা অনেক বড় ধৃষ্টতা। যে সাদিক আরমানসহ ডট গ্যাং-কিশোর গ্যাং এর যারা আছেন—তারা তানভীর শরীফ, ওমর ফারুক সাগর, নাছির উদ্দিন, নওশাদ, ইফতি, মাহমুদ আলম, শফিকুল ইসলামসহ আমাদের অনেক সহযোদ্ধাকে আঘাত করে। পরবর্তীতে আমরা ছাত্রদলের সহযোগিতায় বের হয়ে যাই।’-বলেন রাসেল।

সংবাদ সম্মেলনে হাতাহাতি-বাকবিতণ্ডা

সরেজমিনে দেখা যায়, রাসেলের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের একপর্যায়ে সেখানে হাজির হন সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, রিজাউর রহমান এবং ছাত্র আন্দোলনে আহত এক শিক্ষার্থী। এরপর রাফি গিয়ে রাসেলের পাশে বসেন এবং রিজাউর চেয়ারে বসার চেষ্টা করেন। 

ওই সময় রাসেলের সাথে থাকা উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ‘হামলাকারীদের সাথে বসব না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এরই মধ্যে সেখানে রাফির পক্ষে থাকা আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। এ সময় উভয়পক্ষ একে অপরকে কটাক্ষ করে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে সেখানে উভয়পক্ষের কয়েকজন হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ মাইক্রোফোন বন্ধ করে দিলে উভয়পক্ষ ক্লাবের সামনে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। সেখানেও তারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে থাকেন। 

রাফি-রিজাউর যা বললেন

প্রেসক্লাবের সামনে খান তালাত মাহমুদ রাফি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের পূর্বঘোষিত কোনো কর্মসূচি ছিল না।  হান্নান ভাই গতকাল রাতে আমাকে কল দিয়ে বলেন, তিনি আজ চট্টগ্রামে আসবেন। সেজন্য এ লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি করা হয়েছে। তিনটায় যেহেতু কর্মসূচি,  সেহেতু আমার ক্যাম্পাস থেকে আসতে দেরি হয়েছে। আমার ওখানে যেতে চারটা বেজে গেছে। যে হামলার কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমি জড়িত ছিলাম না। যে বা যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’

এরপরই তার হাত থেকে মাইক কেড়ে নেন রাসেলের অনুসারীরা। তিনি সেখান থেকে প্রেস ক্লাবের নিচে নেমে আসেন।  

পরে রাফি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ও রিজাউরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সেগুলো কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আমরা কেউ থাকবো না। কিন্তু প্রমাণ করতে হবে। যে নোংরা রাজনীতি চলছে সেটার বন্ধ চাই।’

সম্প্রতি চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ওঠা সমন্বয়ক রিজাউর রহমান বলেন, ‘জিইসি মোড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। এই হামলা কারা করেছে? যারাই করছে সে ফুটেজগুলো আমাদের কাছে আসতেছে। আমরা এটা দিব আপনাদের। তারা যে ডট গ্যাং বলে বলে আন্দোলনকারীদের মারার কালচার তৈরি করতেছে; আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘চট্টগ্রামের সমন্বয়কদের দুপক্ষে ঝামেলা হয়েছে। প্রথমে খুলশী থানা এলাকায় তাদের মধ্যে মারামারি হয়। এরপর রাসেল প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে রাফির পক্ষ আসলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’

ডট গ্যাংকারা?

মূলত নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের অনুসারীদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘ডট গ্যাং’। যার সদস্য নানা অপকর্মে জড়িত কিশোর অপরাধীরা। জুলাই অভ্যুত্থানের আগে এই গ্যাং এর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাস সুমনের নাম উঠে এসেছিল৷ ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নগরের চকবাজার থানার নবাব সিরাজউদৌলা রোড বালি আর্কেড শপিং সেন্টারের সামনে থেকে কিশোর গ্যাং ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপের প্রধানসহ ৭ সদস্যকে আটক করেছিল র‌্যাব।

আটককৃতরা ছিলেন—গ্রুপের প্রধান হোসাইনুল আমিন মিম (১৬), সামিউল ইসলাম (১৬), আহনাফ শাহরিয়ার (১৬), মো. শরিফুল ইসলাম (১৬),  শানিপ শাহীদ (১৬), মাশহাদ সিদ্দিকী (১৬) ও আবু তারেক (১৬)।  

এদিকে, গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যূত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ও তার ঘনিষ্ঠ আরেক সমন্বয়ক রিজাউর রহমানের বিরুদ্ধে ‘ডট গ্যাং’ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। যার তথ্যপ্রমাণও সিভয়েস২৪'র হাতে এসেছে। 

চট্টগ্রামের সমন্বয়কদের একাংশের অভিযোগ, নির্দিষ্ট গ্রুপের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করলেই তাদের বিরুদ্ধে ডট গ্যাং নামে একটি কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যদের লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সিভয়েস২৪/রর

ভিডিও

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

: