Cvoice24.com

মাদকবিরোধী অভিযান
জেলকেই নিরাপদ ভাবছে আসামিরা

প্রকাশিত: ১২:২৭, ৩ জুন ২০১৮
জেলকেই নিরাপদ ভাবছে আসামিরা

-ফাইল ছবি

দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে একশ’র বেশি মানুষ নিহতের পাশাপাশি আটক হয়েছে কয়েক হাজার ব্যক্তি। গত মাসের মাঝামাঝি এ অভিযান শুরুর পর সরকারের তরফ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযান বিশেষ করে ইয়াবার জন্য আলোচিত কক্সবাজার এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে কাউন্সিলর মো. একরামুল হক হত্যার ঘটনায়। এ ঘটনার পর ভয় আর আতঙ্কে মাদক মামলায় আটক থাকা আসামিরা এখন আর জামিনের আবেদনই করতে রাজি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

কক্সবাজারের জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দ বলেছেন, অভিযান শুরুর পর আসামিদের জামিন আবেদন বা মুক্তির জন্য চেষ্টা কমেই গেছে। পাবলিক প্রসিকিউটর মমতাজ আহমেদ জানিয়েছেন, ব্যাপক অভিযানের কারণে আদালতে জামিন আবেদন প্রায় নেই বললেই চলে।

একজন আইনজীবী বলেছেন, আসামিদের জামিনের জন্য তাদের পক্ষে যারা আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করছিলেন তাদেরই এখন পাওয়া যাচ্ছে না। জেল সুপার বজলুর রশিদ আখন্দ বলছেন, আজ রোববার (৩ জুন) পর্যন্ত কক্সবাজার কারাগারে মোট বন্দির সংখ্যা তিন হাজার ১৭৩ জন এবং এর মধ্যে বেশিরভাগ অর্থাৎ ৬৫ ভাগই মাদক বিশেষ করে ইয়াবা মামলার আসামি। তিনি জানান, মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর আগে গড়ে প্রতিদিন ১৫/২০ জন জামিনের আবেদন জানাতো আদালতে। বা তারা মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতো। কিন্তু এখন আসামিদের পক্ষে এ ধরনের তৎপরতা একেবারেই কমে গেছে। অভিযান শুরুর পর থেকে প্রতিদিন মাত্র ১/২ জন আসামির মধ্যে এ ধরনের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর মমতাজ আহমেদ জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে আদালতে আসামিপক্ষের আবেদন অনেকখানিই কমে গেছে। যদিও তিনি মনে করেন মামলাগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তারা সক্রিয় ও উদ্যোগী হলে এমন পরিস্থিতি হতো না। তিনি জানান, অভিযানের আগে প্রতিদিন ২০/২২টি জামিন আবেদনের শুনানি হতো জেলা দায়রা জজ আদালতে, যা এখন কয়েকটিতে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, সাধারণত এই আদালতে মাদক মামলার আসামিদের জামিন হয় না। এখানে নামঞ্জুর হওয়ার পর আসামিরা উচ্চ আদালতে যায়। আর আমাদের এখানে শিশু-কিশোর কিংবা নারী আসামিরা হয়তো জামিন পেয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, তারপরেও এখন যারা আটক আছে তাদের দিক থেকে আইনজীবীদের তৎপরতা কম দেখা যাচ্ছে। যদিও কক্সবাজারে উল্লেখযোগ্য কোন মাদক ব্যবসায়ীই গ্রেফতার হয়নি।

কক্সবাজারের আইনজীবী আব্দুর রহিম বলেছেন, মাদকের বিশেষ করে ইয়াবা মামলার অনেক আসামি এখন জেলখানাকেই নিরাপদ জায়গা বলে মনে করছে। বাইরে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। তাই অনেকেই মনে করছে, এ সময়টা জেলেই থাকি। তবে তার অভিযোগ মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশের যোগসাজশ আছে। তারাও এ বিষয়ে অনেক অভিযুক্তকে সহায়তা করছে।

তিনি জানান, উখিয়াতে চিহ্নিত একজন মাদক কারবারি অভিযানের আগে পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরছিলো। যখন অভিযান শুরু হলো তখনি তাকে আটক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আব্দুর রহিম আরো বলেন, এখন জেলখানাকেই নিরাপদ মনে করছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। আর সে কারণেই জামিন আবেদন নেই বললেই চলে।

আরেকজন আইনজীবী মোহাম্মদ ইউছুফ জানান, তার হাতে এমন দু’একটি মামলা আছে যাতে আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু অভিযান শুরুর পর আসামিদের তরফ থেকে কেউ তার সাথে যোগাযোগই করছে না।

কিন্তু কেন আসামিরা এমন আচরণ করছেন- এ প্রশ্নের জবাবে ইউছুফ বলেন, আসলে পরিস্থিতি খারাপ। তাই মাদকের সাথে জড়িত হোক বা না হোক এ ধরনের মামলায় যারা আটক হয়েছে তারা জেলখানাকেই নিরাপদ মনে করছে।-বিবিসি বাংলা

সিভয়েস/আরসি/কেএম

সিভয়েস ডেস্ক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়