Cvoice24.com

স্ত্রী মিতু হত্যায় বাদি থেকে আসামি হচ্ছেন বাবুল আক্তার

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১২ মে ২০২১
স্ত্রী মিতু হত্যায় বাদি থেকে আসামি হচ্ছেন বাবুল আক্তার

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার পাঁচ বছরের মাথায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। সেই সঙ্গে আগের মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিবে পুলিশ। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করবেন। এজাহার প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ বুধবার (১২ মে) এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।

পিবিআই প্রধান বলেন, ‘মিতু হত্যায় আজ আগের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে, যে মামলার বাদী ছিলেন বাবুল আক্তার নিজেই। এরপর আজ পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা হবে। বাবুল আক্তার গ্রেফতার না। নতুন মামলা হলে বাবুল আক্তার এক নম্বর আসামি হবেন। তারপর তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে, মঙ্গলবার (১১ মে) আগের মামলার বাদী হিসাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আইন অনুযায়ী বাদীকে গ্রেফতার করা যায় না।’

বনজ কুমার বলেন, ‘চৌকস পুলিশ অফিসার ছিলেন বাবুল আক্তার। অনেক কাজ করেছেন। তার স্ত্রীকে গুলি করে ও কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে এটি পরিগণিত। বাবুল আক্তার বাদি হয়েছিলেন। প্রথমে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা আসেনি। মহামান্য হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন কতদিন মামলা ঝুলে থাকবে। সে উত্তর খুঁজতে গিয়ে মামলা অন্যদিকে মোড় নেয়।’  

তিনি আরও বলেন, ‘মামলার বাদিকে ইচ্ছে করলেই গ্রেপ্তার করা যায় না। বাদিকে গ্রেপ্তার করতে হলে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে হবে। খুলশি থেকে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিতে আজই কোর্টে যাচ্ছে পুলিশ। এটি দাখিলের পর নতুন মামলা হবে। মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হতে পারেন। কথা হয়েছে তার সঙ্গে। তাকে পিবিআই চট্টগ্রাম নিয়ে গেছেন। নতুন মামলায় এক নম্বর আসামি হবেন বাবুল আক্তার ‘

পিবিআই প্রধান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে মুসাকে দেখা যায়। মুসা নিয়মিত বাবুল আক্তারের বাসায় যেতেন। তার অনুপস্থিতিতে মুসা বাজারও করে দিতেন। পিবিআই জানার চেষ্টা করেছে মুসা সোর্স ছিল কিনা।  এটাই পিবিআই প্রমাণের চেষ্টা করেছে। মিতু হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে জঙ্গি হামলায় আহত হন বলে দাবি করেন বাবুল। মৃত্যুর পর যে আচরণ ছিল, তা ছিল সবচেয়ে আপনজন হারানোর মতো। তাই তার কথা সবাই বিশ্বাস করেছিলেন।’

পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক বলেন, ‘নড়াইলে একটা লোককে আমরা পর্যবেক্ষণে নিই। তার নাম গাজী আল মামুন। অপর বন্ধু সাইফুল হককেও পিবিআই ডাকে। দুজন ই বাবুলের বন্ধু। তারা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪  ধারায় জবাববন্দি দিয়েছেন।  এর ভিত্তিতে পুরনো মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। পিবিআই বাবুল আকতারকে ঢাকায় ডেকেছিল। গত বৃহস্পতিবার বাবুল বলেন উনি সোমবার ৯ টায় আসবেন। বাবুল পিবিআইকে কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বিষয়গুলো আইজিপিকে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকেও  জানানো হয়। এ অবস্থায় ব্যাক করার সুযোগ নেই।’ 

বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সম্পৃক্ততা মেলায় গতকাল রাতেই হেফাজতে নিয়েছে পিবিআই। তবে আইনিভাবে বাদিকে গ্রেপ্তারের সুযোগ না থাকায় আদালতে তাকে হাজির করার পর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। 
 
এর আগে বাদি হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোমবার রাতে তাকে চট্টগ্রামে ডেকে আনা হয়। মঙ্গলবার তাকে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মিতু হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে, বাদি পুলিশ কমকর্তা বাবুল আক্তারের সঙ্গে পিবিআইয়ের লাগাতার আলোচনা হচ্ছে। কয়েকদিন ধরেই তার সঙ্গে কথা হচ্ছে। এটা তারই অংশ।’ 

১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের সড়কে প্রকাশ্যে গুলিতে ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা আক্তার মিতু। ওই দিনই স্বামী তৎকালীন পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

আলোচিত এ মামলার অনেকবার চার্জশিট দেওয়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও কোনো অগ্রগতিই চোখে পড়েনি এতোদিন। তবে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বাবুল আক্তারকেই দায়ী করে আসছিলেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন ও শাশুড়ি সাহেদা মোশাররফ। পুলিশের পক্ষ থেকে যদিও কখনোই এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। 

গোয়েন্দা পুলিশ এর আগেও বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। শুরু থেকে চট্টগ্রামের ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটি তদন্তের ভার পিবিআইকে দেন আদালত। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়