Cvoice24.com

লাখ টাকার চুক্তিতে চার জেলেকে সাগরে ফেলে হত্যা, নির্দেশদাতা বাকলিয়ার আড়তদার

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ২৩ জুলাই ২০২১
লাখ টাকার চুক্তিতে চার জেলেকে সাগরে ফেলে হত্যা, নির্দেশদাতা বাকলিয়ার আড়তদার

নির্দেশদাতা ইউসুফসহ গ্রেপ্তার তিন খুনি।

চট্টগ্রামের বাকলিয়ার আড়তদার ইউসুফ সওদাগর থেকে তিন লাখ টাকা দাদন (ঋণ) নেন ভোলার রামগতির নাসির উদ্দীন মাঝি। অভাবে পড়ে আরও টাকার প্রয়োজনে আরেক আড়তদার থেকেও দাদন নেন নাসির। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন ইউসুফ সওদাগর। পরিকল্পনা করেন নাসিরকে হত্যার। খুনের জন্য ভাড়া করেন রাসেল নামে অপর এক মাঝিকে। বিনিময়ে তাকে দেওয়া হয় লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত পরিকল্পিকভাবে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নাম করে কুতুবদিয়া নিয়ে চায়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে সমুদ্রে ফেলে হত্যা করা হয় নাসির মাঝিসহ চারজনকে। 

মাঝ সমুদ্রে এমন একটি ঘটনা ঘটলেও অবশেষে তিন মাসের চেষ্টায় এ খুনের রহস্য উদঘাটন করে নৌপুলিশ। একে একে গ্রেপ্তার করে তিন খুনিকেও। এরই মধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। 

রামগতির বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান জানান, চলতি বছরের ২০ মে চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া এলাকার অদূরে বঙ্গোপসাগরে ট্রলার থেকে চার জেলেকে ফেলে হত্যা করা হয়। এর আগে হত্যাকারীরা কৌশলে চায়ের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে দেয়। চা পান করে তারা ঘুমিয়ে পড়লে তাদেরকে সাগরে ফেলে দেয়। হত্যাকারীরা প্রথমে ঘটনাটি জলদস্যুতা বলে প্রচার করলেও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এসময় ঘটনার সাথে জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

খুনের শিকার হওয়া চার জেলে হলেন, রামগতি উপজেলার চরআলেকজান্ডার ইউনিয়নের সোনালী গ্রাম এলাকার মৃত রুহুল আমিনের ছেলে নাসির উদ্দিন , তার শিশু ছেলে মো. রিয়াজ , নোয়াখালীর চরজব্বর এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে মো. করিম এবং একই এলাকার আমির হোসেনের ছেলে মো. মিরাজ। 

এ ঘটনায় ১৩ জুন নাসির মাঝির স্ত্রী মীরজান বেগম বাদি হয়ে রাসেলের নাম উল্লে করে আরো অজ্ঞাত ২-৩জনকে অভিযুক্ত করে রামগতি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

অন্যদিকে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চট্টগ্রামের বাকলিয়া নতুন ফিশারিঘাট এলাকার আড়ৎদার কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার আবুল কাশেমের ছেলে মো. ইউছুফ মিয়া, যশোরের চৌগাছা উপজেলার দক্ষিণ কয়ারপাড়া এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে মো. রাসেল ও লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার পূর্ব চরফলকন এলাকার আবি আব্দুল্লার ছেলে আল-আমিন। এদের মধ্যে আল-আমিন এবং রাসেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। 

নৌ পুলিশ পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান জানান, নাসির উদ্দিন মাঝী নিজের ট্রলার দিয়ে সহযোগী জেলেদের নিয়ে নদী ও গভীর সাগরে মাছ ধরে বিভিন্ন ঘাট এলাকায় আড়তে বিক্রি করে করত। এরই মধ্যে প্রায় ১০ মাস আগে তিনি চট্টগ্রামের বাকলিয়া নতুন ফিশারিঘাটের আড়তদার মো. ইউছুফ মিয়ার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা দাদন নেন। 

নিয়মিত ওই আড়তে মাছ বিক্রি করে আসছিলেন তিনি। ঘটনার কিছুদিন আগে অভাব-অনটনে পড়ে নাসির ওই মাছ ঘাটের অপর এক আড়তদারের কাছ থেকে কিছু টাকা দাদন নিয়েছেন। এতে ইউছুফ ক্ষুব্ধ হয়ে গত ১২ মে ট্রলারসহ নাসির মাঝীকে ঘাট এলাকায় আটক করে রাখে। নাসির কৌশলে ট্রলার নিয়ে পালিয়ে এলাকায় চলে আসেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ইউছুফ ট্রলারটি নিজের কব্জায় নেওয়াসহ নাসির মাঝিকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী নাসির মাঝীর ট্রলারের সহযোগী জেলে রাসেল, সুমন, সোহাগ ও আল-আমিনের সঙ্গে তিনি এক লাখ টাকায় চুক্তি করেন। তার পরিকল্পনা ও চুক্তি অনুযায়ী ১৬ মে ওই চার জেলে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডারের স্লাইসগেট বাজারের একটি ওষুধের দোকান থেকে ঘুমের ১০টি ট্যাবলেট কিনেন। পরদিন নাসির মাঝি ও অপর তিন জেলেসহ ওই চারজন মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যান। নদীতে মাছ কম ধরা পড়ার অজুহাত দেখিয়ে কৌশলে নাসির মাঝিকে হত্যাকারীরা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এলাকায় সাগরে মাছ ধরার জন্য নিয়ে যান। হত্যাকারীরা ইউছুফের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলতি বছরের ২০ মে সেখানে তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী চায়ের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে নাসির মাঝি, রিয়াজ, করিম ও মিরাজকে খেতে দেয়। চা খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়লে ওই চারজন মিলে তাদেরকে সাগরে ফেলে হত্যা করে। এদের তিনজন গ্রেপ্তার হলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত সুমন ও সোহাগকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়