কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সিভয়েস ডেস্ক
‘জননী সাহসিকা’ হিসেবে খ্যাত কবি সুফিয়া কামালের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ সোমবার (২০ নভেম্বর)। ১৯৯৯ সালের এই দিনে ৮৮ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান মহীয়সী এই নারী। ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সুফিয়া কামাল। তিনি ছিলেন মুক্ত চিন্তার অধিকারী। তাই আজীবন মুক্তবুদ্ধির চর্চার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে সংগ্রাম করে গেছেন। সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামেও বিশেষ ভূমিকা ছিল তার।
কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন বাংলাদেশের নারীসমাজের এক ও অনুকরণীয় উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। কারণ তিনি যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেন সে সময়ে নারীশিক্ষা অনেকটা নিষিদ্ধ ছিল।
ওই সময় শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে তিনি নিজেকে শুধু শিক্ষিত করে গড়ে তোলেননি পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকেও সুপ্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুলতে চেয়েছেন।
নারীসমাজকে কুসংস্কার আর অবরোধের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন সুফিয়া কামাল। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পাশাপাশি ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও ছিলেন তিনি।
ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়া কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। নারীদের সংগঠিত করে মানবতা, অসাম্প্রদায়িকতা, দেশাত্মবোধ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে তিনি ছিলেন পথিকৃৎ।
বাংলার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সুফিয়া কামালের ছিল আপসহীন এবং দৃপ্ত পদচারণা। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর সুফিয়া কামাল পরিবারসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন ও নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন।
পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করলে তার প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন।
তাই ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রামসহ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে কবির প্রত্যক্ষ উপস্থিতি তাকে অভিষিক্ত করেছে জনগণের ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে। তার স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ‘বেগম সুফিয়া কামাল হল’।
কবি সুফিয়া কামালের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং আত্মার মাগফেরাত কামনার উদ্দেশে আজ সোমবার ( ২০ নভেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটায় ধানমন্ডিতে কবির বাড়ি ‘সাঁঝের মায়া’য় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন এ আয়োজন করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করবে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এ কবির প্রয়াণ দিবস।
উল্লেখ্য, সাঁঝের মায়া, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী ইত্যাদি কবি সুফিয়া কামালের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। এছাড়া সোভিয়েতের দিনগুলো এবং একাত্তরের ডায়েরি তার অন্যতম ভ্রমণ ও স্মৃতিগ্রন্থ। জীবদ্দশায় সুফিয়া কামাল দেশ-বিদেশের ৫০টিরও বেশি পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সোভিয়েত লেনিন পদক, একুশে পদক, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও স্বাধীনতা দিবস পদক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।