সংরক্ষিত নারী আসন
এমপি হতে অভিনেত্রী লেখক সমাজকর্মীদের দৌড়
সিভয়েস ডেস্ক
৫০টি সংরক্ষিত সংসদীয় আসন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অভিনেত্রী থেকে লেখক অ্যাকটিভিস্ট ও সমাজকর্মীরা। এ ৫০ আসনের নারীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনের মধ্যে ২০টিতে জিতেছেন নারী প্রার্থীরা। এখন দলগুলোর প্রাপ্য অনুযায়ী, নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী ঠিক করা হবে। এসব আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে এরইমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, শরিক দল ও জাতীয় পার্টির অনেকে।
রীতি অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের মধ্যে হাতে গোণা দুই-তিনজন ছাড়া সবাই বাদ পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য। তিনি বলেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী, জেলা পর্যায়ে ত্যাগী নেত্রী এবং সরাসরি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েও জোটগত সমঝোতার কারণে যাঁরা সরে দাঁড়িয়েছেন; কিংবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নানা হিসাব-নিকাশে যাঁরা মনোনয়ন পাননি, তাঁদের এবার বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।
জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি গতকাল শনিবার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালে যাঁরা আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন, এক-এগারোর সময় দলের সভাপতি শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে যাঁরা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন, দল তাঁদের মূল্যায়ন করবে বলে আমরা আশা করি।’
সংবিধানের বিধান
রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি ছয়জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের বিপরীতে একজন মহিলা সদস্য পাবে। সেই হিসাবে আওয়ামী লীগ এবার ২২৩টি সাধারণ আসনের জন্য পাবে ৩৭টি সংরক্ষিত আসন। জাতীয় পার্টি বিজয়ী ১১ আসনের বিপরীতে পাবে ২টি। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে তিনটি আসন জিতেছে। আওয়ামী লীগের এই শরিকেরা যৌথভাবে এলে তিনটির বিপরীতে একটি পাবে। আর স্বতন্ত্র ৬২ জন জোটবদ্ধ হলে পাবে ১০ আসন। স্বতন্ত্ররা জোটবদ্ধ না হয়ে ছয়জন করে আবেদন করলে ১টি করে আসন পাবে।
২০১৪ ও ২০১৮ সালে সাধারণ আসনের স্বতন্ত্র এমপিরা সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন। এবারও স্বতন্ত্ররা সেই ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকে দিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে হাতে গোণা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ আসনে তৃণমূলের মানুষ ও কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। তবে সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নারীদের মূল্যায়ন করা হতে পারে। একই সঙ্গে সমাজের বিশিষ্টজন যাঁরা বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেন, তাঁদেরও সংরক্ষিত আসনে এমপি বানিয়ে স্বীকৃতি দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে নেত্রী ছাড়াও অভিনেত্রী, সমাজকর্মী, লেখক, আওয়ামী লীগের জন্য অবদান রেখেছে, এমন পরিবারগুলোকে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকেই তদবির শুরু করেছেন। দলীয় নেত্রীর পাশাপাশি চিত্রনায়িকা ও অভিনেত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে গণভবনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। নির্বাচনসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁরা যে ছিলেন, সে বিষয়টিও জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে ধরনাও দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনাই বাছাই করবেন।
একাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপি আরমা দত্ত বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যে ধারাবাহিক উন্নয়ন হয়েছে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে যে অসাধারণ মাত্রা সৃষ্টি হয়েছে, সে জায়গায় আমি কাজ করতে চাই। আমাকে সুযোগ দেওয়া হলে তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে অভিজ্ঞতা রয়েছে, এখানে সে অবদানটা রাখতে চাই।’
দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে তফসিল
সাধারণ নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার প্রয়োজন পড়লেও ভোটার ও আসন বণ্টনসহ কমিশনকে এই নির্বাচনের নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন করতে হয়। ৯ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। এসব আসনে সাধারণ আসনের চেয়ে বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় দল বা জোট মনোনীত প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আগামী সপ্তাহ বা তার পরের সপ্তাহে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সাধারণত এসব আসনে ভোট হয় না। দলগুলো আগে থেকেই ঠিক করে রাখে বা তারা যাঁকে মনোনয়ন দেয়, তিনিই নির্বাচিত হন। এবার স্বতন্ত্ররা জোটবদ্ধ প্রার্থী দিলে তাঁরা স্বতন্ত্র সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হবেন।
দিকে চট্টগ্রাম থেকে এবার সংরক্ষিত নারী আসনের আলোচনায় নাম এসেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খানের।
এছাড়াও দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, সাবেক সভাপতি হাসিনা মান্নান, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা, অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাজেদা সুরাত, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিতও আছেন সংরক্ষিত আসনের দৌঁড়ে।