Cvoice24.com


আড়াই কোটি তরুণ ভোটার নির্ধারণ করবে আগামীর সরকার!

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ৯ নভেম্বর ২০১৮
আড়াই কোটি তরুণ ভোটার নির্ধারণ করবে আগামীর সরকার!

চারিদিকে জোট-ভোট। সন্নিকটে ক্ষমতার অদল-বদল। নানা হিসাব-নিকাশ। চলছে আলাপ-সংলাপ। কারো ক্ষমতা ধরে রাখার স্পৃহা, কারো ক্ষমতায় যাওয়ার আকাঙ্খা। এতসব জল্পনা-কল্পণার মধ্যে, তবে কি ভাবছে তারুণ্য? কি ভাবছে আড়াই কোটি তরুণ ভোটার? কোন দিকে যাচ্ছে দেশ? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে, প্রয়োজনীয় হয়ে উঠে ভোটের সমীকরণ। সেই সমীকরণও দিবালোকের মত স্পষ্ট। ক্ষমতাধর দুই শিবিরে বিভক্ত দুই রাজনৈতিক সংগঠনের ভোট-জোটে ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে ১৮-২৮ বছর বয়সী আড়াই কোটি তরুণ ভোটার।

বলতে গেলে, তাদের হাতেই ক্ষমতার চাবিকাঠী। আগামীর সরকার নির্ধারণ করবে আড়াই কোটি তারুণ্য। ভাবনাটি আমার একান্ত নয়, বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারাও। ভাবনাটি আরো জোরালো করলো, গত কয়েকমাস আগের ছাত্র আন্দোলন। সেই আন্দোলনে তারুণ্যের স্ফুলিঙ্গ, জাগ্রত করেছে ঘুণেধরা রাজনৈতিক বিবেককে। দেখিয়ে দিয়েছে তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা। স্পষ্টত প্রমাণ করেছে, তারাই দিন বদেলের হাতিয়ার। এবার আসা যাক সমীকরণটা কি? গত ১০ বছরে ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সের ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন ২ কোটি ৩০ লাখ।

এরমধ্যে কিছু দিন আগে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন আরো প্রায় ২০ লাখ তরুণ ভোটার। দেশের একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত গত ১০ বছরে প্রতি বছর গড়ে ২৫ লাখের মতো ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তালিকায়। এই সময়ে ভোটার বেড়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৮ জন। এর মধ্যে ১ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার ২১৪ ভোটার আগে কখনোই জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়নি। তারা একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথম ভোট দেবেন। গত ১০ বছরের নতুন ভোটারদের মধ্যে ১৮ বছরের ভোটার রয়েছেন ৪৬ লাখ, ১৯ ও ২০ বছরের ২৭ লাখ, ২১ ও ২২ বছরের ৩৭ লাখ, ২৩ ও ২৪ বছরের ৭০ লাখ, ২৬ বছর বয়সের ভোটার রয়েছেন ৪৭ লাখ। এরমধ্যে আরো অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ২০ লাখ তরুণ ভোটার। অপর এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৯ ভোট।

আর বিএনপি পেয়েছিল ২ কোটি ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ১০০ ভোট। আর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল ২ কোটি ২৮ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭৮ ভোট। আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২ কোটি ২৩ লাখ ৬৫ হাজার ৫১৬ ভোট। সেই হিসেবে নবম থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া তরুণ ভোটাররাই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটার হালনাগাদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে ভোটার সংখ্যা এখন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। শুধু এবার ২০১৮ সালে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ জন নতুন ভোটার। ২০১৭ সালে ভোটার বেড়েছে ১১ লাখ ৪৪ হাজার, ২০১৫ সালে ভোটার বেড়েছে ১৬ লাখ ৮ হাজার, ২০১৪ সালে ভোটার বেড়েছে ১৯ লাখ ৬৮ হাজার, ২০১৩ সালে ভোটার বেড়েছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার, ২০১২-২০১৩ সালে ভোটার বেড়েছে ৭০ লাখ ৭৯ হাজার এবং ২০০৯-২০১০ সালে ভোটার বেড়েছে ৪৭ লাখ ৭৫ হাজার। এখন কথা হচ্ছে কি চাই তারুণ্য? মুক্তিযু্দ্ধের চেতনার একটি দেশ। নাকি ধর্মীয় অনুশাসনের স্বদেশ। নাকি জাতীয়তাবাদী চেতনার পুনরুজ্জীবন। নাকি আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা, কোন আধুনিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে, হিসেব মেলানো বড় দায়। কারণ বড় দু'টি দলই এখন তাদের স্বরূপ পরিবর্তন করেছেন। নিজস্ব কোন চেতনা নয়, ক্ষমতাই হচ্ছে নিজস্ব চেতনা, আদর্শ। এমনটি দেখা যাচ্ছে ভোট-জোটের সমীকরণে। ফলে দিকভ্রান্ত তরুণ ভোটাররা। কোন দিকে যাবে তাদের সমর্থন। এ নিয়ে চরম ধোঁয়াশা। জগা-খিচুড়ির মতো আদর্শচ্যুতির জোট-ভোটের হিসেবে এখনো অন্ধকারে তারুণ্য। তবে আশার কথা হচ্ছে, দুই শিবিরেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সুর। ব্যাকফুটে আছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। তাই তারুণ্যের চোখ এখন সেই দিকে, যেই দিকে স্বাধীনতা বিরোধীদের অদৃশ্য পদচারণা নেই। দৃশ্যমান পদচারণা তো কোন প্রকারই গ্রহণযোগ্য নই, এ সময়ের তারুণ্যের কাছে। অবশ্যই সেই হিসেবও মিলাচ্ছে দুই জোট। এখন ডিজিটাল, এনালগ, দিনবদল সব বুঝে তারুণ্য। তাদের হাতের মুঠোই এখন পুরো পৃথিবী। তারা বুঝে গেছে, দেশ এখন সমৃদ্ধির পথে। এখনইসময়, দেশ বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করার। উচ্ছিষ্ট উপড়ে ফেলার। তবে এতসব আশার সঞ্চারের মাঝে, নিরাশাও কিছু রয়েছে তারুণ্যকে ঘিরে।

এখনো দেশে রয়েছে হাজারো বখে যাওয়া তারুণ্য। বিপথগামী হাজারো তরুণ সমাজ। তাদেরকে মুক্ত করে আনতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে, ধর্মের নামে জঙ্গীবাদ চলে না, ধর্মের নামে ধোঁকাবাজী ঠিক না, মানুষ হত্যায় ধর্মের সমর্থন নেই, সঠিক ইসলামী জিহাদ না করে ইসলামের নাম দিয়ে ক্ষমতায় যেতে রগ কাটা কোন রকমই মেনে নেয়া যায় না।

তরুণ্যের অভাব, দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, ইসলামের নামে দেশ বিরোধী কার্যক্রম কখনো কারো কাম্য নয়। এ দায়িত্বটা নিতে হবে সুপথে থাকা যুব সমাজকে। বিপথগামীদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, দেশের হাল ধরতে হবে তারুণ্যকেই। জয়তু তারুণ্য। জয়তু আগামীর বাংলাদেশ।

সিভয়েস/এইচআর/এএইচ

মফিজুল ইসলাম চৌধুরী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়