Cvoice24.com

কুমার বিশ্বজিৎ এর সাক্ষাৎকার
‘গান গাইলে বাড়ির জানালায় পাথর মারতো’

প্রকাশিত: ১১:৩০, ২০ জানুয়ারি ২০১৯
‘গান গাইলে বাড়ির জানালায় পাথর মারতো’

কুমার বিশ্বজিৎ জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পীর জন্ম চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। কুমার বিশ্বজিৎ কথা বলেছেন সিভয়েসের সাথে, তুলে ধরেছেন প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর জীবনযুদ্ধ এবং সংগীত সাধনার কথা। বলেছেন নিজের সংগীত সাধনা ও স্বকীয়তার কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিভয়েস প্রতিবদক তানভিরুল মিরাজ রিপন। সাক্ষাৎকারটির প্রথম অংশ সিভয়েস পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

সিভয়েস: প্রয়াত কিংবদন্তী গায়ক আইয়ুব বাচ্চুর কোন বিষয়টা বন্ধু হিসেবে এখনো নাড়া দেয়?

কুমার বিশ্বজিৎ: বাচ্চুর গান, বাচ্চুর সৃষ্টির কারণে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, ভক্ত অনুরাগীদের মনে আজীবন বেঁচে থাকবে। আমার সাথে তার হাজার স্মৃতি। দিন যত যাচ্ছে ততই আমি তার অনুপস্থিত অনুভব করি। বেঁচে থাকলে যোগাযোগ না থাকলেও চলতো, কিন্তু এখন শূন্য। সবসময় তার শূন্যতা আমাকে ভোগাচ্ছে-ভোগাবে। ফিলিংসে কাজ করার সময় বাচ্চু আর আমি একসাথে প্র্যাকটিস করেছি। সে দিনের বেশির ভাগ সময় আমার বাসায় থাকতো। আমি পরবর্তীতে ঢাকায় চলে আসি। পরে ও চলে আসলো ঢাকায়। কঠিন সময়ে আমরা শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। যখন গান গাওয়াটাকে পেশা হিসেবে নেওয়াটা সহজ ছিলো না। সেখানে আমরা অনিশ্চিত একটা ভবিষ্যৎকে সাথে নিয়ে স্ট্রাগল করেছি। যেখানে পারিবারিক, সামাজিক অনেকগুলো বাধা ছিলই।  বাচ্চুকে যদি ধরি ঐ ঘরানার শিল্পী হিসেবে আমি বলবো বাচ্চু একজন যোদ্ধা।

সিভয়েস: আড্ডায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণদের যে গীটারের প্রতি ভালোবাসা, সেটাতে আইয়ুব বাচ্চুর অবদান অনেকাংশে বেশি।

কুমার বিশ্বজিৎ: হ্যাঁ। অবশ্যই বাচ্চুর অবদান ছিল। একটা দেশের সাধারণ মানুষদের কাছে হার্ড রক, সফট রক জনপ্রিয় করে তোলা একেবারেই সহজ নয়। রক গানকে শ্রোতাদের জন্য শ্রোতাদের মতো করে তৈরী করে দেওয়া আমি বলবো এটাও একটা যুদ্ধ। আমার মনে আছে বাচ্চু যখন আমাদের আল করনের বাসায় আসতো এনায়েত বাজার থেকে। সে আমার ডিসকো গীটারটা বাজাত, শামীম বললো আমাকে মেরোন কালারের গীটারটা সাদা রঙের করেছিলো। আমরা যখন গাওয়ার জন্য ঠিক সময়ে পৌঁছার তাগাদা থাকতো, আমাদের গাড়ির ব্যবস্থা থাকলেও গানের জন্য সে সুবিধা আমরা ভোগ করতে পারতাম না। রিক্সা দিয়ে চলাচল করতে হতো। ওর মায়ের সাথে আমার মায়ের সাথে আমার আর ওর চেয়ে বেশি ফ্রেন্ডশিপ ছিল। দুজন আমাদের খবর নিতো ছেলেরা যাতে বিপথে না যায়৷ আমার মা তাকে দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে জানত, কারণ কিছু সময় গেছে যে পরিবার থেকে লুকিয়ে কাজ করতে হত। তন আমার মা লুকিয়ে দরজা খুলে দেওয়া, গরম করে খাওয়ানো। এই ধরনের সাহায্য আমাদের মায়েদের শুধু সন্তান হিসেবে কৃতজ্ঞ না। একজন মানুষ হিসেবেও কৃতজ্ঞ।   

সিভয়েস: অনেক অভিভাবক তখনেরও, এখনেরও, শুধু স্কুল যাও,পড়,কোচিং যাও এমন আচরণ করে।

কুমার বিশ্বজিৎ:  গীটার নিয়ে অনেক সময় অনেক খানে যেতে হচ্ছে। আমার বাসা ক্রস করে একটা ছোট্ট মাঠ ছিল সেটা ক্রস করে যাওয়ার সময় বাচ্চু গীটার কাঁধে নিতে লজ্জা পেতো আমিও লজ্জা পেতাম। পেছনে ৪০-৫০ জন ছেলে পোলে চিল্লাত বেলা পপ বেলা পপ বলে।  আমাদের দেখতো পুরা এলাকার লোকজন জানালা খুলে দেখতে একেবারে নতুন পাগল দেখার মত করে পুরো পাড়া খবর হত। বেলা মানে গীটারটাকে বেলা,পপ মানে পপ গান। এইসব প্রতিকূলতার মাঝখানেও আমরা গানটা ছাড়ি নাই।  জানালা দিয়ে পাথর মারতো এমনও অবস্থা ফেইস করেছি। ১৯৭৭ সাল থেকে ব্যান্ড করি, ঢাকায় এসে একটা কঠিন যুদ্ধ যা এখনকার যারা আছে তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে বাচ্চুর অবদান অনেক বেশি।

সিভয়েস: সবকিছু মিলিয়ে দেখলে দেখা যায় আপনি প্লে ব্যাক নয়, অ্যালবামে সময় দিয়েছেন বেশি,কেনো?

কুমার বিশ্বজিৎ: অ্যালবামে নিজের ইচ্ছামত কাজ করা যেত৷ ফিল্মে যখন আমাকে ব্যবহার করা হচ্ছিল এবং আমি মনে করলাম আমি ব্যবহার হচ্ছিলাম তেমন কোনো কাব্যিক গানের সংখ্যাটা আমার হচ্ছে না। পয়সা এমন কিছু না, সম্মানি পেতাম ৫০০/৫৫০। এখনকার অনেকে কল্পনাও করতে পারবে না। অনেকে বলবে তখন ৫০০ টাকা অনেক। তখনকার একটা বাসার ভাড়াও ছিল তিনহাজার টাকা,পাঁচ হাজার টাকা। সময় বিবেচনা করতে গেলেও এটা খুব কঠিন। চলচ্চিত্রে আমরা এমনও গান গেয়েছি একশো দেড়শো বারও টেক দিয়েছি।  তখনতো ওয়ান টেক ছিলো। চলচ্চিত্রে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন  করেছি, এমনকি আমি আগে যাদের সাথে কাজ করেছিলাম তাদের সন্তানদের সাথেও কাজ করেছি আমি অনেকগুলো জিনিস শিখেছি।

সিভয়েস: তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে গানট দিয়েই আপনার জনপ্রিয়তা।

কুমার বিশ্বজিৎ: হ্যাঁ এই গান আমাকে নতুন ভাবে একটা বাঁক তৈরী করে দিয়েছে। এরপরে আমার কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।  এর আগেও আমার অনেক অ্যালবামের গান ছিল। কিন্তু এটা আমার এক ধরনের ভিত্তি। এই গান এখনও চলছে, তখনকার সময়ের গানগুলো কত টুকু কাব্যিক। এটা একটা কবিতা ছিল, কবিতা থেকে গান।

সিভয়েস: গানের কথা না কম্পোজিশন, কোনটা আগে ভাববেন?

কুমার বিশ্বজিৎ: কথা টাচ করতে হবে, শ্রোতা তার জীবনের সাথে মিল খোজে পাবে। এটা আসলে সাধনা। তবে সবকিছু মিলিয়েইতো একটা গান হয়। রেকর্ড, সুর,কম্পোজিশন এসব মিলিয়েই গান হয়।

-সিভয়েস/এস

তানভিরুল মিরাজ রিপন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়