Cvoice24.com


‘আমরাও ছিলাম মেঘ পাহাড়ের রাজ্যে’

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
‘আমরাও ছিলাম মেঘ পাহাড়ের রাজ্যে’

বার্ষিক শিক্ষা সফরে পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা

উঁচু পাহাড় আর সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝরনা, পাশাপাশি মেঘেদের অবিরাম ছোটাছুটি । কেউ যেন তাদের কানে কানে শুনিয়ে দিচ্ছে ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’। কখনো মেঘের শীতল স্পর্শ মনে জাগিয়ে তুলছে অন্য রকম আনন্দ। বলছি প্রিয় খাঁগড়াছড়ি মেঘ পাহাড়ের কথা। পাহাড়, ঝরনা, বৃষ্টিস্নাত সবুজ প্রকৃতি সবই মিলে প্রকৃতি যেন আরেক স্বর্গ রচনা করেছে। মেঘেদের খেলাঘর এই রাজ্যটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিবছর ছুটে আসে লাখ লাখ মানুষ। আমরা যারা পাহাড় ও ঝরণা দেখতে খুব ভালোবাসি তাদের জন্য এই রাজ্যটি হতে পারে একটি পরিতৃপ্তির জায়গা। মন বারবার ছুটে যেতে চায় এসব পাহাড়ের চূড়ায়, জানতে চায় এ রাজ্যটির সম্পর্কে। পাহাড়ি রাজ্য এবং এখানে রয়েছে মন হরণকারী অনেক দর্শনীয় স্থান। নিজের ভ্রমণপিপাসু মনের তৃষ্ণা মেটাতে বেশ কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারি এই মেঘের রাজ্য থেকে।

বছরের শুরুতে শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয় প্রতিবছর। কথাটা শুনে বেশ ভালো লাগল। এসব আয়োজনের সব দায়িত্ব থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের উপর। বড় ভাইদের উপর থাকার কথা কারণ আমরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন এসেছি মাত্র। এত কিছু সর্ম্পকে আমাদেরও জানার কথা না। প্রথম সফরটা ভাইয়ারা আমাদের নিয়ে অনেক মজা করেছে। গত এক বছরের কথা বাদই দিলাম। আমরা যখন বড় ভাইদের কাতারে আসলাম সে নিয়ে কথা বলি। আসলে দেখতে দেখতে একটি বছর কোন দিক দিয়ে যে কেটে গেল তা বুঝে উঠতে পারলাম না। দীর্ঘ এক বছর পর আবারো শুনতে পেলাম আমাদের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে নাকি শিক্ষা সফরে যাচ্ছে। হঠাৎ করে একদিন ক্লাসের সময় স্যার থেকে জিজ্ঞেস করলাম, স্যার আমাদের নতুন ব্যাচে কতজন ভর্তি হয়ছে? স্যার বলল, ৪০ জন ভর্তি হয়েছে। তখন সে কথা শুনে তো আমরা অনেক খুশি হলাম। এরপর আবার জিজ্ঞেস করলাম স্যার কতজন মেয়ে ভর্তি হয়েছে।  

স্যার একটু বকা দিয়ে বললেন, তোমরা মেয়েদর কথা কেন বল? স্যার এই কথা কেন বলেছে তা আর বুঝতে পারলাম না। স্যারের সাথে এই নিয়ে আর কোন কথা হয়নি। তবুও অন্য বড় ভাইয়ারা কিন্তু খবর রাখে কোথায় কতজন ভর্তি হয়েছে। মেয়ে কতজন, ছেলে কতজন। সব হিসাব ভাইয়াদের কাছে থাকে। একদিন ভাইয়াদের সাথে হালকা আড্ডায় মেতে উঠলাম। হঠাৎ করে একজন ভাইয়া বলে উঠে এবারে আমাদের ডিপাপর্টমেন্টে অনেক জন মেয়ে ভর্তি হয়েছে। আমরা আর কি বলব! শুনে চুপ করে থাকলাম। ওখানে সব বড় ভাইয়া। তাদের সামনে তো আর মনের কথা বলতে নেই। কারণ কিছু একটা ব্যাপার পেলে তো আর ছাড়বে না। তখন বন্ধবী খাদিজা আলম রাইসাকে বললাম, দোস্ত নতুন ব্যাচে নাকি অনেক জন মেয়ে ভর্তি হয়েছে। তখন সে বলে আমরা কি এখন বড় আপু হয়ে গেছি?  তখন আমিও একটু মজা করে বললাম, যখন সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি হলাম তখন তোমাদের উপর অনেক বড় ভাই ক্রাস খেয়েছিলো। তখন তোমরা অনেক মজা পেয়েছ। ক্লাস কখন, এসাইনমেন্ট কী ভাবে করতে হবে সব খবর ওরা রাখত। আর এখন সময় আমাদের। তোমরা যা নেয়ার প্রথম বছর নিয়েছো। এখন আমরা যতদিন ভার্সিটিতে আছি ততদিন মজা করতে থাকব। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যারা আসবে সবাই তো জুনিয়র, তোমরা তো জুনিয়রদের কাছে বড় আপু হয়ে থাকবে।  আমরা তো এখন দেখবো শুধু আর আনন্দ করব। তোমাদের সময় এক বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়স যখন এক বছর হয়ে গেছে তখন আমরাও বড় ভাই হয়ে গেছি। নতুন বড় ভাই হলাম অনভূতিটাও আসলে অন্য রকম। জুনিয়রদের সামনে একটু ভাব নিয়ে থাকতে হবে। এটা স্বাভাবিক নতুন কিছু না। 

এবার আসি অন্য ধাপে। আয়োজনে হল শিক্ষা সফরের। সবাইকে জানিয়ে দেয়া হল এবারের সফর হবে খাঁগড়াছড়ি। এই কথা শুনেতো অনেক খুশি হলাম। খুশির পিছনে কারণ টা হচ্ছে, পাহাড়ি অঞ্চলে হেটে চলতে অনেক ভালো লাগে। গাড়ি ছাড়বে খুব ভোরে। খবরটা পেয়ে খুব খারাপ লাগল। এতো ভোরে শহরের মানুষ ঘুম থেকে উঠে নাকি? এতো ভোরে গাড়ি ছাড়বে?  ভোরে না ছাড়লেও  হচ্ছে না। কারণ অনেক দূরে যাবে। যেতেও প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগবে। তাই আগেভাগে বের হলে অনেক জায়গায় বেড়ানো সম্ভব হবে।

না বল্লেই নয় যে শুরু থেকে একটা প্ল্যান ছিল। সেটা হচ্ছে নতুন ব্যাচের ছেলে-মেয়েদের সাথে ভাব নিয়ে থাকতে হবে। তাই থাকলাম। যে কথাটা আগে থেকে ভাবতাম। জুনিয়র মেদের সাথে তো আর ভাব নিয়ে বসে থাকা যায় না। নতুন ব্যাচের একটা মেয়েকে হঠাৎ অনেক ভালো লেগেছে। তা তো আর কাউকে বলা যায় না। বললে শনির দশা হবে। সবাই মিলে একটা একটা বলে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। সে ভয়ে আর কাউকে বলা হয়ে উঠে নি। যা কিছু ছিল তা সব মনের মধ্যে রয়ে গেল। অনেকদিন ধরে ফেসবুক প্রোফাইল ছবিটা পরিবর্তন করা হচ্ছে না। আবার এটাও চিন্তা করলাম যে এতো দূরে যাব সেলফি নিয়ে তো মোবাইলের মেমোরি লোড করে ফেলব। আশা করি ফেসবুকের প্রোফাইলের ছবি টা পরিবর্তন করতে পারব। আর অনেক দিনের জন্য ফেসবুকে ছবি আপলোড দিতে ছবি কোথায় পাব? এসব কিছু নিয়ে আর চিন্তা করতেও হবে না। কয়েকদিন পর একটা করে ছবি ফেসবুকে আপলোড দিব। গাড়ি ছাড়ার সময় একটা সেলফি ফেসবুকে দিয়ে দিলাম।

শিক্ষা সফর খাঁগড়াছড়ি। যাত্রা শুরুতে সবাই মিলে শুরু করে দিল গান আর গান। গাইতে গাইতে চলতে চলতে পোঁছে গেলাম গন্তব্যস্থান খাঁগড়াছড়ি। সেখানে গিয়ে সবাই দাঁড়ালাম খাঁগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক। সেখানে সবাই অনেক আনন্দ করি। শুরুতে সেলফি নিয়ে বাজিমাত। যত সব অত্যাচার ক্যামেরার উপর। আবার পরে স্যার সবাইকে ডাকলেন। প্রতিবারের মত নতুনদের নিয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান কর হবে। 

প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিল নতুনদেরকে লটারি দেয়া হবে লটারির কাগজটার মধ্যে যা লেখা থাকবে সেটা করে দেখাতে হবে। শুরু হলো প্রতিযোগিতা। নাম ধরে ডাকা হলো একজন মেয়েকে, সে আসলো। লটারির কাগজ নিজ হাতে উঠালো। কাগজে লেখা ছিল তার যে কোন একটা গোপন কথা সবার সামনে বলতে হবে। আসলে কি কারো গোপন কথা সবার সামনে বলা যায়?  অনুষ্ঠানের আগেই বলা ছিল কাগজে যা লেখা থাকে সেটা করতে হবে। অবশেষে মেয়েটি বলে দিল।

সে বলল,  “আমার জীবনে কোন প্রেম করি নাই। আমি আমার একলা জীবন নিয়ে খুব ভালো আছি।” এ কথা মুখ থেকে বের করার সাথে সাথে সিনিয়র ভাইদের মুখে অজস্র হাসি। বুঝে উঠতে পারলাম না ভাইদের মুখে এতো হাসির কারণ। ডাকা হলো আরো একজনকে। সেও এসে কাগজ উঠালো। কাগজে লেখা ছিল অদ্ভুদ কথা। অভিনয় করতে হবে হিজরাদের। মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর ছিল। সে হিজরাদের মতো করে হাঁটলে মনে যেন মডেলিং করছে।  অনুষ্ঠানের শেষে সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে একটু সস্তি  বোধ করবে এমন সময় নতুনদের মধ্যে একজন মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্যার ম্যাম সবাই মিলে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে বেশি অবদান ছিল আমাদের ব্যাচের শামসুদ্দীন ইমতিয়াজের। সে নিজে কোলে করে অসুস্থ মেয়েটাকে মেডিকেল নিয়ে যায়। অবশেষে দু ঘন্টা পর মেয়েটি সুস্থ হয়। আবারো সবার মাঝে ফিরে আসে। সে দু ঘন্টা সময়ে ভার্সিটির মার্স্টাসের ভাইয়াদের দেয়া হয় বিদায়ী ক্রেস্ট। এই থেকে শুরু করে আরো যত সব দায়িত্বে ছিলেন তিনি (সানাউল্লা হাসান স্যার)। ফিরে আসার সময় সবাই  ১০ মিনিটের জন্য চলে গেলাম চেরাঙ্গা পাহাড়ে। অনেক সুন্দর ছিল। আসার আগে মাত্র ১০ মিনিটের জন্য এমন সুন্দর জায়গায় যেতে হবে ভেবে মনটা কেমন জানি হয়ে গেল। তবু ভালোই লাগলো। একদিনের সফর হিসেবে অনেক ভালো লাগলো। সবাই অনেক আনন্দ করেছে। আবারও আসিব ফিরে এই মেঘ পাহাড়ের রাজ্যে। সব শেষে ফিরে আসার পালা । সবাই তখন ক্লান্ত। মাঝ পথে এসে জুয়েল দাশ স্যার নিজের কন্ঠে গান শুনিয়ে সবাইকে আবার চাঙ্গা করে দিল।  শিক্ষা সফরটা আসলে অনেক মজার ছিল।

সিভয়েস/এএসএস

মো. আজমউদ্দীন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়