Cvoice24.com


শিষ্টাচার/আদব/ভদ্রতা/সৌজন্য মানুষের বড় গুণ

প্রকাশিত: ১২:১৮, ২০ মার্চ ২০১৯
শিষ্টাচার/আদব/ভদ্রতা/সৌজন্য মানুষের বড় গুণ

সাঈদ আহসান খালিদ, সহকারি অধ্যাপক, চবি

শিষ্টাচার/আদব/ভদ্রতা/সৌজন্য-- যে নামেই ডাকি এটি একজন মানুষের বড় গুণ। সামাজিক জীবনে এই গুণের চর্চা অন্য প্রাণী হতে মানুষের স্বাতন্ত্র্য নির্দেশ করে। একটি দেশ কতটা সভ্য সেটির পরিমাপক হিসেবে সেই দেশের মানুষের সৌজন্যবোধ-কে বিবেচনা করা হয়। ভদ্র ব্যবহারে অন্যের হৃদয় জয় করা যায়, অনাকাঙ্ক্ষিত ঝগড়া এড়ানো যায় এবং পারিপার্শ্বিক সবার সাথে সম্পর্ক সৌহার্দপূর্ণ হয়ে উঠে। নিচে ৩০ টি সার্বজনীন সামাজিক শিষ্টাচারের উদাহরণ প্রদান করা হলো। আমি নিজে এই সৌজন্য আচরণ অনুসরণ করার চেষ্টা করব, আশা করি আমার পাঠকেরাও অংশ নিবেন। 

৩০ টি সামাজিক সৌজন্য 

১। টানা ২ বারের বেশি কাউকে কল করব না। যদি তিনি কল রিসিভ না করেন, বুঝতে হবে- আমার কল এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছুতে তিনি ব্যস্ত আছেন।

২। যদি কেউ হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়, ভুলে হাত থেকে প্লেট ফেলে দেয়, কারো পরিধানের কাপড় খুলে যায়- হাসবো না। এটি তাঁর অনিচ্ছাকৃত।

৩। এক সারিতে একাধিক ওয়াশরুম থাকলে যে ওয়াশরুমে লোক আছে ঠিক তার পাশের কক্ষটি পরিহার করব। অন্যথায় এটি উভয় ব্যবহারকারীর জন্য অস্বস্তিকর।

৪। ধার নেওয়া টাকা নির্ধারিত তারিখে বা তার আগে ফেরত দেবো। সেটি ১ টাকা হোক বা ১ কোটি। এমনকি ধারদাতা যদি ধার দেওয়ার কথা ভুলে যান- তবুও। এটি নিজের সততার পরিচয়। একই কথা প্রযোজ্য- ছাতা, কলম, ব্যাগ বা অন্য যে কোন জিনিস এ।

৫।  কারো ড্রেস বা জিনিস ব্যবহার করলে সেটি ধুয়ে ফেরত দেবো। কারো বাইক বা গাড়ি ব্যবহার করলে ফেরত দেওয়ার সময় খরচ করা জ্বালানি রিফুয়েলিং করে দেবো- এমনকি মালিক যদি নিতে না চান তবুও।

৬। কেউ লাঞ্চ/ডিনারে ট্রিট অফার করলে কখনো মেনুর দামি ডিশ অর্ডার করব না। সম্ভব হলে হোস্টকেই বলব- আপনি আমাকে কী খাওয়াতে চান!

৭। ঘনিষ্ঠ বন্ধু ব্যতীত কাউকেই এই প্রশ্নগুলো করবো না:
- আপনি কি বিবাহিত?
- আপনি বিয়ে কবে করছেন?
- আপনার কি বাচ্চা আছে?
- আপনার কি বাচ্চা হচ্ছে না?
- আপনার গাড়ি নেই?

৮। সবসময় পেছনের লোকের জন্য দরজা খুলে রাখবো, তিনি নারী- পুরুষ যেই হোক। কারো সাথে ভাল আচরণের জন্য কেউ ছোট হয় না।

৯। বন্ধু- সহকর্মীর সঙ্গে একত্রে খেতে বসে, জার্নি করে বা কোথাও সার্ভিস নেওয়ার পর বিল দিতে হলে নিজে আগে বিল প্রদানের উদ্যোগ নেবো। কোন বন্ধু আগেই দিয়ে দিলে পরেরবার অবশ্যই তাঁর বিল আমি দেবো।

১০। ভিন্নমত-কে সম্মান করবো, তর্ক করব না।

১১। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বেশি রাত বা বেশি সকালে কাউকে কল করব না। প্রয়োজন  হলে আমরা ধৈর্যধারণ করব।

১২। অন্যেরা কথা বলার মাঝখানে কথা বলে ব্যাঘাত ঘটাব না।

১৩। কাউকে 'টিজ' করলে, 'ফ্লার্ট' করলে- যদি মনে হয় সে এটি পছন্দ করছে না, তখনি থামতে হবে।

১৪। কারো সাহায্য পেলে সাথে সাথে 'ধন্যবাদ' (Thank You) বলব, কাউকে কষ্ট দিলে সাথে সাথে 'দু:খিত' (Sorry) বলবো।

১৫। অন্যের প্রশংসা করবো প্রকাশ্যে, সমালোচনা ব্যক্তিগতভাবে।

১৬। কথা বলার সময় যদি দেখি- শ্রোতা চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নিচ্ছে, শরীর আমার দিকে আর ঝুঁকে নেই, উশখুশ করছে, বারবার ঘড়ি দেখছে, এক কথায় উত্তর দিচ্ছে-- বুঝতে হবে এখনই কথা শেষ করার সঠিক সময়।

১৭। কারো শারীরিক বৈশিষ্ট্য- ওজন, চেহারা, উচ্চতা, গায়ের বর্ণ নিয়ে মন্তব্য করবো না। এসবের উপর ওই ব্যক্তির কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কাউকে গায়ে পড়ে এই বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তনের পরামর্শ দেবো না- যদিনা সে আমার মতামত চায়।

১৮। দীর্ঘ ভ্রমণে যাওয়ার আগে ও পরে শাওয়ার নেবো। সুগন্ধি মাখবো। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বিধি মেনে চলবো। এটি সহযাত্রী ও রুমমেট এর জন্য স্বস্তিকর।

১৯। কেউ মোবাইলে বা পিসিতে কোন ছবি দেখাতে চাইলে শুধু সেটিই দেখবো- ডানে বা বামে ক্লিক করবো না। পরের ছবিতে কী আছে আমরা কেউ জানি না।

২০। কারো ব্যক্তিগত ব্যাগ ও পার্সে কখনোই হাত দেবো না।

২১। কেউ যদি বলে- 'আজ ডাক্তার দেখাতে যাবো', তাঁকে কখনো ডাক্তার দেখানোর কারণ জিজ্ঞেস করবো না। কারো ব্যক্তিগত রোগের বিবরণ সে নিজে জানাতে চাওয়া ছাড়া জিজ্ঞেস করবো না।

২২। শুধু ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি নয়, নিজের অধীনস্ত ব্যক্তি বিশেষত ক্লিনার, পিয়ন ও সেবা প্রদানকারীদের সাথে সম্মানের সাথে কথা বলবো। তুই-তোকারি করবো না।

২৩। কারো সেবা নিলে তাঁকে বখশিশ বা টিপস দেবো।

২৪। কেউ আমার সাথে সরাসরি কথা বলার সময় ফোন টেপাটেপি করবো না- এটি অভদ্রতা।

২৫। কোন কক্ষে ঢুকার সময় দরজা বন্ধ পেলে 'নক' করব, ঢুকার অনুমতি পেলে ঢুকবো। কোন দরজা বন্ধ পেলে ঢুকে বন্ধ রাখবো, খোলা পেলে খোলা রাখবো।

২৬। যে কানে হেডফোন লাগিয়ে আছে- তাঁর সাথে কথা বলার চেষ্টা করবো না।

২৭।  কারো স্যালারি, ইনকাম সোর্স এবং বয়স জানতে চাইবো না।

২৮। কেউ খাবার অফার করলে, যদি খেতে না চাই, সোজা বলবো- 'দু:খিত, খাবো না'। কিন্তু খাবার টেস্ট করে বা শুঁকে দেখে 'খাবো না' বলা অভদ্রতা। এটি রান্নাকারীর জন্য অপমানকর। কোন দাওয়াতে খাবার খেয়ে সেটির খুঁত ধরা খুবই অভদ্র আচরণ।

২৯। অন্যের বাচ্চা-কে ছুঁয়ে আদর করা যাবে না, চুমু দেওয়া অনুচিত।

৩০।  'নিজের চরকায় তেল দেবো', অন্যের বিষয়ে কিছুতেই 'নাক গলাবো না' যদি না সেটি সরাসরি আমাকে যুক্ত করছে।

এবং একটি ফ্রি: জামাই এর হয়ে বউ এবং বউ এর হয়ে কোন জামাই ফেসবুক আইডি চালাবো না। এতে জনতা বিভ্রান্ত হয়।

সাঈদ আহসান খালিদ, সহকারি অধ্যাপক,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সাঈদ আহসান খালিদ, সহকারি অধ্যা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়