Cvoice24.com


মিরসরাইয়ের অপরূপ নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা

প্রকাশিত: ০৮:১২, ১৫ নভেম্বর ২০১৯
মিরসরাইয়ের অপরূপ নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা

পাহাড়ি সবুজ অরণ্যে ঝর্ণার পানি আছড়ে পড়ার অনুভূতি মিরসরাইয়ের নাপিত্তাছড়া না গেলে বুঝা যাবে না। ঝর্ণার ধেয়ে আসা পানি বড় বড় পাথরের পথ অতিক্রম করে গড়িয়ে পড়তে দেখলেই মন আনন্দে মেতে উঠবে। এখানে মূলত তিনটি ঝর্ণা রয়েছে। এগুলো হলো কুপিকাটাকুম ঝর্ণা, মিঠাছড়ি ঝর্ণা এবং বান্দরকুম বা বান্দরিছড়া ঝর্ণা। তবে আরেকটি ঝর্ণা আছে যেটির নাম জানা নেই।

অপার সৌন্দর্য্যের স্বাদ পেতে সম্প্রতি ঘুরে এলাম নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা থেকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে নাপিত্তছড়া ঝর্ণায় যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা। চট্টগ্রাম শহর থেকে ঝর্ণার উদ্দেশ্যে সকাল ৮টা বাজে রওনা হলাম। যানজটমুক্ত অবস্থায় এ.কে.খান মোড় থেকে মিরসরাই পৌঁছাতে সময় লাগল প্রায় এক ঘন্টা। ৯টায় বাস থেকে নামলাম। বাস থেকে নেমে রাস্তার পাশে বেলতলা মোড় থেকেই নাপিত্তাছড়া যাওয়ার রাস্তা। সকালে সামান্য বৃষ্টি হয়েছিলো। বৃষ্টি হলে ঝর্ণার প্রবাহ বাড়ে। তবে আমরা যখন পৌছলাম তখন ঝকঝকে রোদ। দর্শনার্থী ছাড়া স্থানীয় মানুষের আনাগোনা খুব একটা নেই। ঝর্ণায় যাওয়ার সময় কিছু দোকান আছে। সেখানেই দুপুরের খাবার অর্ডার করে গেলাম। আর ঝর্ণায় গিয়ে খাওয়ার জন্য কিছু রুটি এবং কলা নিলাম। একটু যেতে না যেতেই বেয়ে আসা ঝর্ণার ঠাণ্ডা পানির স্রোত চোখে পড়লো। ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে মনটা শীতল হয়ে গেল। আশেপাশে সবুজের সমোরহ আর বিশাল পাহাড়ের উপর গাছগাছালির দৃশ্য মনোমুগ্ধকর।

হাটতে হাটতে কয়েকজন স্থানীয় মানুষের সাথে দেখা হলো। তারা পাহাড় থেকে কাঠ আর ছোট বাঁশ বোঝাই করে নিয়ে আসতেছে। এখানে দর্শনার্থীদের বাঁশের চাহিদা প্রচুর। বড় বড় পাথর আর পাহাড়ের পিচ্ছিল পথ বেয়ে উঠার ক্ষেত্রে এ বাঁশই একমাত্র সহায়। প্রায় ৪৫-৫০ মিনিট পর দেখা মিলল প্রথম ঝর্ণা কুপিকাটাকুমের। দুর্গম আঁকাবাঁকা পথ অতিক্রম করে কুপিকাটাকুমের দেখা পেয়ে মন খুশিতে ভরে গেল। বিশাল বিশাল পাথর ধাপে ধাপে সাজানো ছলছল শব্দে প্রবাহিত হচ্ছে স্বচ্ছ পানি। তার উপরের দিকে ছোটে ছোট বেশ কয়েকটা স্তর বেয়ে ধেয়ে আসছে জল স্লোত। ঝর্ণার ছলছল শব্দ মনকে নাড়া দিলো। ঝর্ণার ঠাণ্ডা পানি মনকে শীতল করলো নিমিষেই। এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দ্বিতীয় ঝর্ণায় উঠার জন্য প্রস্তুতি নিলাম।

কুপিকাটাকুম ঝর্ণার বামপাশের পাহাড় বেয়ে উপরে উঠলেই দেখা মিলবে নাম না জানা ঝর্ণাটির। এ ঝর্ণায় না নামা ভালো। তবে ঝর্ণার পাশে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করলে ঠাণ্ডা পানির হাওয়া মনটা শীতল করবেই। এবার হাতের বামপাশের উঁচু পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে।

পাহাড় বেয়ে উঠেই ছোট্ট একটি ভ্রাম্যমাণ দোকান। এখানে লেবুর শরবত, আমড়া, চিপস্ পাওয়া যায়। একই পথ ধরে হাঁটতে থাকলাম। প্রায় ৩০ মিনিট পর দেখা যাবে মোড় বা তেমাথা। যার ডানপাশে গেলে মিঠাছড়ি আর সোজা গেলে বান্দরকুম বা বান্দরছিড়া ঝর্ণা। মিঠাছড়ি যেতে মোড় থেকে পাঁচ মিনিট লাগবে। আর বান্দরকুম যেতে ২০-২৫ মিনিট লাগবে। মিঠাছড়ি ঝর্ণাটি সবচেয়ে সুন্দর। আর বান্দরকুম সবচেযে উঁচু থেকে প্রবাহিত হয়।

সবকটি ঝর্ণা দেখার পর এবার ফিরে আসার পালা। প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে গেল। এতক্ষণ ঝর্ণার কলকল ধ্বনি আর ঠাণ্ডা পানির প্রবাহে হারেয়ে গিয়েছিলাম। যেতে হবে ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভ্রমণ আর পরিবেশের সৌন্দর্য্য অসাধারণ। বিকেলের ঝলমলে রোদ খেলা করছে। সূর্য ফিরে যাচ্ছে তার কক্ষপথে আর আমরা আমাদের গন্তব্যের পথে।

চারিদিকে সবুজের আস্তরণ। আর সেই ঝর্ণার স্রোত আমাদের আগ বাড়িয়ে বিদায় দিচ্ছে। স্বল্প খরচে মনে হবে এটাই সবচেয়ে ভালো ভ্রমণ। এ ভ্রমণটা আজীবন আমাদের স্মৃতিতে তরতাজা হয়ে থাকবে।

সিভয়েস/এএইচ

কালাম সাকিব

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়