চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল
অনাদরে থাকা হাসপাতালটিই এখন শেষ ভরসাস্থল
হাসাপাতাল সড়কেই গাড়ির লম্বা লাইন, মূল ফটকে প্রতিদিন ভেসে বেড়ায় ময়লার ভাগাড়, জরুরি বিভাগে বসে শুনতে হয় গাড়ির তীব্র হর্ণ! সেই সাথে বিনা বাধায় যে কেউ প্রবেশ করতে পারেন এই বিভাগে। সমস্যা শুধু অবকাঠামোগত নয়! বিল বকেয়া থাকার কারণে বিছিন্ন হয়েছিল গ্যাস লাইনও। বছর জুড়ে এত কাণ্ড ঘটে যাওয়া চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি দেখে বুঝার উপায় ছিল এটিও একটি হাসপাতাল!
নামেই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চট্টগ্রামের এই জেনারেল হাসপাতাল সারাবছর জর্জরিত থাকে চিকিসৎক নার্স, স্থায়ী বার্বুচি, প্রহরী সংকটসহ চিকিৎসা উপকরণ সংকটে। চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্র আন্দরকিল্লায় অবস্থিত এই জেনারেল হাসপাতালের অবকাঠামো রোগীবান্ধব না হওয়ায় রোগী ও স্বজনদের আক্ষেপের সুর বারবার হয়েছে পত্র-পত্রিকার শিরোনাম।
অথচ করোনাকালে চট্টগ্রামের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় রাখছে অগ্রণী ভূমিকা। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়েও ‘গরীবের হাসপাতাল’ এখন হয়ে উঠেছে ধনী-গরীব এবং মধ্যবিত্তের শেষ ভরসাস্থল। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে যেতেই হচ্ছে এই হাসপাতালে। পুলিশ থেকে সাধারণ মানুষ যারই করোনার উপসর্গ দেখা যাচ্ছে তিনিই আসছেন এই হাসপাতালের সেবা নিতে। বাদ যাননি দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ এস আলম পরিবারের সদস্যরাও। এমনকি সারা বছর অনাদরে থাকা গরীবের এই হাসপাতালের বেডেই মারা যান এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলমের।
তবে সব সংকট সমাধান না হলেও করোনাকালে যেন বদলে গেছে এই হাসপাতালটির গুরুত্ব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় এ হাসপাতালে প্রস্তুত করা হয় ১০০ শয্যা। মিলেছে দীর্ঘদিন কাট-খড় পুড়িয়ে নাগাল না পাওয়া বহুমূল্যর আইসিইউ। যদিও সংখ্যায় মাত্র ১০ শয্যার আইসিইউ। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে আরও। ফলে ক্রমে রোগীদের আস্থা ও নির্ভরতা তৈরি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির ওপর।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ মার্চ জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসা শুরু হয়। ইতিমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১৫১ জন। বর্তমানে করোনা পজিটিভ ভর্তি আছেন ১৩২ জন, করোনা সন্দেহের রোগী রয়েছেন ৭ জন। তাছাড়া সাধারণ বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১২৩ জন রোগী। তবে হাসপাতালটিতে মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৪২ জনের নাম। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ রয়েছেন ২৬ জন।
অন্যদিকে, আইসোলেশন ওয়ার্ডে সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের নিয়ে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও মেডিকেল অফিসারের সমন্বয়ে নয় জনের তিনটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিম টানা ১০ দিন দায়িত্ব পালন করে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন চিকিৎসকরা। এরপর ছয় দিন বাসায় থাকার পর কাজে যোগ দিচ্ছেন তারা।
একইভাবে ছয় সদস্য করে নার্সেরও তিনটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারাও ১০ দিন কাজ করে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন। চিকিৎসক-নার্সদের কোয়ারেন্টাইনে সরকারি আঞ্চলিক লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১২ ও বেসরকারি দুটি হোটেলে ৩৭টি কক্ষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। খাবারও দেওয়া হচ্ছে সরকারি খরচে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব সিভয়েসকে বলেন, ‘নিজেদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসরা। করোনার চিকিৎসার যথা নিয়ম মেনে কাজ করে চলেছে একাধিক চিকিৎসক ও নার্স টিম।’
অন্যদিকে হাসাপাতালে স্থায়ী কোন প্রহরী না থাকার কারণে করোনাকালে ভবঘুরে মানুষ-জনের হাসপাতালের ভেতর নির্বিগ্নে যাওয়া আসা ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের। ভবঘুরেদের আসা-যাওয়া বন্ধ করে অতি স্পর্শকাতর এই রোগের সংক্রমণ রোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রহরী নিয়োগের জোর দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।
-সিভয়েস/এমএম
আসিফ পিনন