Cvoice24.com


মুখেই ফ্রন্টফাইটার, জে. হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন 'বন্ধ' ৫ মাস

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২ জুন ২০২০
মুখেই ফ্রন্টফাইটার, জে. হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন 'বন্ধ' ৫ মাস

কোভিড হাসপাতাল ঘোষিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে চলেছেন এই হাসপাতালটির চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। যখন জরুরি কাজ ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘর ছেড়ে বের হচ্ছে না, তখন এসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজের জীবন বাঁজি রেখে মেতেছেন জীবন বাঁচানোর নেশায়। এদের মধ্যে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন অনেকেই।

প্রত্যেকের মনে পরিবারের কাছ থেকে বিদায় বেলায় জোটে সংশয়! এই বুঝি শেষ বিদায়? বিদায় বেলায় যুদ্ধে না যেতে মাথা নাড়ে কারো সন্তান, কারো মা-বাবা, কারো স্বামী অথবা স্ত্রী। তবু করোনা যুদ্ধের এই নির্ভীক সৈনিকেরা পিছু ফিরে তাকাই নি। অথচ যুদ্ধের এই ফ্রন্টফাইটাররা জানেন না নিজেদের শেষ গন্তব্য!

এরমধ্যে হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর বাড়তি চাপ। চোখের সামনেই করোনার বিষে ঝড়ে পড়ছে এক একটি তাজা প্রাণ। মনের দোলাচাল জানিয়ে দিয়ে যায় নরক যন্ত্রণার কথা! তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, করোনার কারণে ক'দিন কষ্ট হবে সবার, শান্তনা দিয়েছেন 'ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।' তবে কিছুই ঠিক হয়নি। এমনকি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বেতন-ভাতা। 

 

স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না হাসপাতালটির চর্তুথ শ্রেণির মোট ৩৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এরমধ্যে রয়েছে, ৮ জন ওয়ার্ড বয়, ১৩ জন পরিচ্ছন্নকর্মী, ১০ জন আয়া এবং ৫ জন বাবুর্চি। তার মধ্যে হাসিনা আক্তার (৬০) নামে এক পরিছন্ন কর্মী সোমবার করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। হাসিনার সহকর্মীরা জানান, করোনা ইউনিটের ফ্লু কর্ণারে পরিছন্ন কর্মী নিয়োজিত ছিলেন হাসিনা।

নিজেদের ন্যায্য পাওনা বুঝে না পাওয়ার ফলে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে নগরের 'কোভিড হাসপাতাল' হিসেবে পরিচিত জেনারেল হাসপাতালের আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া বাকি ৩৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে।

স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, করোনাকালে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আয় বন্ধ। বাকি জমা হয়েছে ঘরের ভাড়া। নাম উঠেছে চাল, ডাল আর মুদির দোকানের বাকির খাতায়। এরমধ্য থেমে নেই জীবন, দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এদিকে নিজেদের পাওনা না পেয়ে কারো চুলায় জ্বলছে না আগুন। আবার কারো সন্তানের সেমিস্টার ফি দিতে না পেরে অনুনয়-বিনয় করে নিতে হচ্ছে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি। এভাবেই চলছে মুখে মুখে সুনাম কুড়ানো ৩৫ স্বাস্থ্যকর্মী তথা 'কথিত' করোনা ফ্রন্টফাইটারের জীবন।

জানা যায়, করোনা চিকিৎসায় গঠিত সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও মেডিকেল অফিসারের সমন্বয়ে টিমগুলোতে কাজ করছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাই বেধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৬ দিন পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন তারা। এছাড়া টানা ১০ দিন দায়িত্ব পালন করে ১৪ দিনের একটি হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির একজন ওয়ার্ড বয় বলেন, 'চার -পাঁচ মাস বেতন নাই আমাদের। অনেকদিন বউ ছেলের মুখ দেখি না। দিন রাত এই হাসপাতালেই পড়ে থাকি। তবু বেতন না পেলে আমাদের চলে কীভাবে? তার ওপর এখন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি।' - এছাড়া গত ৫ বছর ধরে হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করলেও কখনো বোনাস- ভাতা পাননি বলে দাবি করেছেন তিনি।

 

হাসপাতালটির স্বাস্থ্যকর্মী রীনা দাশ (ছদ্মনাম) সিভয়েসকে বলেন, 'অনেক কাজের চাপ, ২ দিন হলো বাসায় ফিরতে পারছি। আমার ছেলের ভার্সিটির বেতন বাকি। শুনি সহকর্মী করোনায় মারা গেছে। কি হবে আমাদের?' - এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. শফিকুল ইসলামের জানতে চাইলে একজন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনায় মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করে সিভয়েসেকে বলেন, 'এই ৩৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত। তাই বেতন কন্ট্রাকচুয়্যালি হয়। কত মাসের বাকি আছে আমি বিস্তারিত জানি না।'

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়া হাসপাতালটির ৩৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ পেয়েছে 'অভি এন্টারপ্রাইজ' নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকার অভি বোসের নাম্বারে একাধিক বার কল করেও প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য জানা যায়নি।

জানা গেছে, ৩৬ কর্মচারীকে দিয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, অক্সিজেন সিলিন্ডার আনা নেওয়া, মৃতদেহ সরানো, খাবার সরবরাহ, রান্নায় সহযোগিতা, কোয়ারেন্টিনে থাকা চিকিৎসকদের নাস্তা খাবার পৌঁছে দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ করানো হয়।

যদিও হাসপাতাল সূত্র বলছে, এই ৩৬ জন পর্যাপ্ত নয়। এ জন্য কোভিড হাসপাতাল চালানোর জন্য নতুন করে আরও কয়েকজন কর্মচারী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে চেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু করোনা হাসপাতাল বলে কেউ কাজ করতে আগ্রাহী হচ্ছে না। যদি জরুরি ভিত্তিতে এই ৩৬ জনের বেতন ভাতা ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে চরম সংকটে পড়বে হাসপাতালটি। সেই সাথে করেনা চিকিৎসার প্রধান হাসপাতালটি সংকটে পড়লে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় নেমে আসতে পারে দূর্ভোগ।

এপি/এডি

আসিফ পিনন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়