Cvoice24.com


সাধারণ কাশি-জ্বরে এন্টিবায়োটিক, নষ্ট হচ্ছে শরীরের এন্টিবডি

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ১১ জুন ২০২০
সাধারণ কাশি-জ্বরে এন্টিবায়োটিক, নষ্ট হচ্ছে শরীরের এন্টিবডি

বিশ্ব মহামারী নভেল করোনা (সার্স কোভ-২) ভাইরাস প্রতিরোধে এখনও কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। এমনকি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি এ ভাইরাসের চরিত্র। ফলে সকলেই এ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কগ্রস্থ। সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বরকে এ করোনার আক্রমণ ভেবে সকলেই নিচ্ছেন অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ। সঠিক কারণ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে মানব শরীরের এন্টিবডি। ফলে মানুষ পরবর্তী অন্য যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারার আশঙ্কা লক্ষ্য করছেন বিশেষজ্ঞসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সাম্প্রতিক মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এমন ওষুধ সেবন করছেন। আবার অনেক চিকিৎসকরা বিভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে করোনার উপসর্গ বিবেচনায় অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ সেবন করছেন। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজনীয়তা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা জানিয়েছেন ভাইরোলজি ও ওষুধ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নতুবা আগামীতে ওষুধ সংকটে স্বাস্থ্য সেবার বিপর্যয় লক্ষ্য করছেন।

সংস্থাটি তাদের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারী অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ ও ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। যা শেষ পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়ার টিকে থাকার হার বাড়িয়ে দেবে। এর ফলে চলমান এই মহামারির সময় এবং এর পরে রোগ ও মৃত্যুর বোঝা বাড়াবে।’

অ্যান্টিবায়োটিক সেবন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রথমত আমাদের জানতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াল ইনফ্যাকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। কিন্তু কোভিড একটি ভাইরাস। এর সাথে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো সম্পর্ক নাই। এখন অনেকে এক-দুই দিনের জ্বর কাশিতে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন। কিন্তু এটি খুব বড় রকমের সমস্যা সৃষ্টি করবে, যখন আমাদের সত্যিকারভাবে এ অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শরীর অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে পরিচিত হয়ে যায়, তখন এ অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে কোনো সুফল পাওয়া যায় না। আর আমাদের শরীরের কিছু ব্যাকটেরিয়ার আছে, যারা অন্য ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। আমরা যদি অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে সে ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলি, তাহলে তা অবশ্যই আমাদের জন্য ক্ষতি।’

অধ্যাপক ডা. জাহেদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজন নিজেদের সুরক্ষিত থাকা। এরপরেও কোভিডসহ বিভিন্ন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে পারে। এখন আমরা যদি আতঙ্কিত হয়ে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করি, সেক্ষেত্রে আমাদের দুইটা ক্ষতি হবে। একটা হলো- সাময়িকভাবে বাড়তি টাকার অপচয় ও দ্বিতীয়টি হলো- শরীরকে অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে পরিচিত করে ফেলা। আমাদের শরীর যদি অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে পরিচিত হয়ে যায়, তাহলে নির্দিষ্ট রোগের প্রয়োজনে ওই অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করে না।’ 

‘এছাড়াও এটি বুঝতে হবে যে, বিশ্বের কোথাও কোভিডের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। শুধু পরীক্ষামূলক ব্যবহার হচ্ছে। আর অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর সাইড ইফেক্ট (পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া) আছে। ফলে এসব খেয়ে হিতের বিপরীতও হতে পারে।’-যোগ করেন এ চিকিৎসক।  

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষ জ্বর-কাশিতে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিন-চার দিনের বেশি জ্বর-কাশি থাকলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ বা টেলিমেডিসিনে পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে পারেন। এছাড়া প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর হলে প্যারাসিটামল ও কাশি হলে এন্টি-হিস্টামিন সেবন করতে পারেন। কোনোভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষমতা নষ্ট করা যাবে না। এছাড়া সবকিছুর উর্ধ্বে সবার মনোবল শক্ত রাখতে হবে।’

-সিভয়েস/এসজেবি/এডি/এমএম

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়