Cvoice24.com


আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ!

প্রকাশিত: ১০:৪১, ১৯ জুন ২০২০
আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ!

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সারা বাংলাদেশে একাধারে প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন কার্যক্রম চালু করে এবং তার সফলতাও অর্জন করে। যার ফলশ্রুতিতে জামাত-বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো সাধারণ মানুষের কাছে প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে ফেলে। এখন মাঠে আর বিরোধী দলের ভূমিকায় জামাত-শিবির বিএনপির দরকার নেই আওয়ামী লীগই যথেষ্ট! কথাটা অপ্রিয় হলেও নিতান্তই সত্য। 

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীনকে দিয়ে শুরু করি। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে দেখলাম দিনরাত পরিশ্রম করতে। সরকারি ও নিজস্ব অর্থায়নে সাধারণ মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে যা এখনো চলমান, নিঃসন্দেহে সরকার তথা ব্যক্তি আ.জ.ম নাছির উদ্দীন প্রসংশা পাওয়ার যোগ্য। সাধারণ মানুষ প্রসংশা করলেও হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছেন চট্টগ্রামের এমপি মন্ত্রী মহোদয়গণ।

হীনমন্যতা বলেছি এ কারণে- যদি প্রকৃতপক্ষে আপনি আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন তাইলে সরকারের সকল সফল উদ্যোগ অবশ্যই আপনি আপনার স্যোসাল মিডিয়ায় প্রচার করতেন। কিন্তু একটি বারের জন্যও আপনি বা আপনারা করেননি কারণ ছবিতে আ.জ ম নাছির উদ্দীন আছে। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম জলে যাক তারপরও প্রচার করা যাবে না। এর অর্থ একটাই হীনমন্যতা বা আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ।

চট্টগ্রামে একজন স্বঘোষিত কর্মবীর আছে যিনি নমিনেশন ঘোষণার আগমুহূর্ত পর্যন্ত মিটিং মিছিলে ব্যস্ত ছিলেন কিন্তু নমিনেশন হাতছাড়া হওয়ার পর তাঁকে আর পাওয়া যায়নি, ধরে নিলাম তাঁর অপারগতার কারণে মহামারিতে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে পারেননি। কিন্তু তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে ব্যক্তি আ.জ.ম নাছির উদ্দীন মানুষের দ্বারে দ্বারে সরকারি ও নিজস্ব ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন তা যদি একবার কর্মবীরের ওয়ালে শোভা পেতো, তা হলে আমজনতা বুঝতে পারত তিনি কিংবা তাঁরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না। চট্টগ্রামের কোন এমপি-মন্ত্রীর ওয়ালেও চট্টগ্রাম মহানগরীর সরকারি ত্রাণ বিতরণের ছবি প্রচার করেননি। এটি ব্যক্তি আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি বরং বর্তমান সময়ে সরকারের ত্রাণ বিতরণকে তারা সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করতে অনীহা দেখিয়েছেন!

মূলত তাঁরা চট্টগ্রাম মহানগরীর কার্যক্রম গণভবনে পৌঁছাক এটা চায়না! চট্টগ্রামের মাঠ পর্যায়ের তথ্য নেত্রী পর্যন্ত কি পৌঁছুতে পারছে? নেত্রীর চারপাশে চট্টগ্রামের কারা আছেন? যারা আছেন তাদেরই দায়িত্ব চট্টগ্রামের সঠিক তথ্য পৌঁছানো, যদি তা না করেন তবে চট্টগ্রামের মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক জবাব দিবে এতে কোন সন্দেহ নেই। একজন আ.জ.ম নাছির উদ্দীনকে ল্যাঙ মারতে গিয়ে পুরো চট্টগ্রাবাসীকে ল্যাঙ মারছেন নাতো? চট্টলার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন নাতো? কথায় কথায় মানববন্ধন করে কাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন? আ.জ.ম নাছির উদ্দীনকে! না-কি আওয়ামী লীগকে? সবিনয়ে প্রশ্ন রাখলাম আপনাদের কাছে।

এক্ষেত্রে আ.জ.ম নাছির উদ্দীন নমিনেশন না পেলেও আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নেত্রীর নির্দেশনা মান্য করে যা ইতিহাস রচিত করেছে চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয়ে। একজন মানুষ কতটুকু উদার হলে, কতটুকু নির্লোভ হলে, কতটুকু মানবিক হলে, কতটুকু হাইকমান্ডের নির্দেশ মানলে এতবড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারে! এই উদারতা তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের কাছে আগামী দিনের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো।

ধরেই নিলাম আ.জ.ম নাছির উদ্দীন ব্যর্থ, কিন্তু সফলতার দৌঁড়ে একজন এমপি-মন্ত্রী বা কর্মবীরকে তালিকায় রাখতে পারলোনা সর্বসাধারণ। মূল কথা হচ্ছে কাজ না করা মানুষগুলোর সমালোচনা অনেক সুন্দর হয়।

১৮৪০ সালে জেনারেল হাসপাতাল এবং ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পর চট্টগ্রামে আজ পর্যন্ত আর কোন সরকারি হাসপাতাল হয়নি। চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতের এই নাজুক পরিস্থিতির জন্য কারো কি কোন দায় নেই? মেয়র ছাড়াও চট্টগ্রামে আছেন ৩ মন্ত্রী, ১৬ এমপি ১ হুইপ ছাড়াও দল ও প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বিভিন্ন নেতাকর্মী। তাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার দায়ভার কেন চট্টগ্রামবাসী নিবে? এই ক্রান্তিকালে যাদের এই নিশ্চুপ নীরবতা, নির্বিকার ভূমিকা তারাই সময়ে সময়ে নিজেদের বীর হিসেবে জাহির করতে মরিয়া হয়ে পড়েন।

এবার সদ্য জন্মানো রহস্যের কথা বলি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, তৃণমূল পর্যায় হতে উঠে আসা একজন জনপ্রিয় নেতা। দীর্ঘ এ পথচলার মধ্যে আজ পর্যন্ত বিন্দুমাত্র কেলেঙ্কারি তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি, হঠাৎ মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হওয়ার পর থেকে লক্ষ্য করলাম গণমাধ্যমের চেয়েও অনেক বেশি সোচ্চার আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু নেতাকর্মী। যারা হুলুস্থুল প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত, যা আমাকে রীতিমতো হতবাক করেছে।

এরা কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে লেখার সাহস পায় কিভাবে? কাদের ইন্ধনে এসব প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে?  যদিও আমিন ভাই মূল রহস্য উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি তাঁর হলেও চুক্তিভিত্তিক একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন যার সম্পূর্ণ দায়বদ্ধতা নিয়োগকৃত ব্যক্তির যা সাধারণ মানুষের কাছে প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে আমার বিশ্বাস। তবে স্পষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে সে-সব নেতাকর্মীদের কাছে যারা প্রথম থেকে সোচ্চার ছিল তারা এখনো আগের মতো অপপ্রচার চালাচ্ছে যা আমার কাছে একধরণের অশুভ সংকেত। এরা কেন? কি কারণে? কোন উদ্দেশ্যে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে? বড় কোন নেতার ছায়া না থাকলে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা কখনো এতবড় দুঃসাহস দেখাবেনা এটা নিশ্চিত!

যে নেতাকর্মী একজন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে লিখার সাহস পায় সে নিশ্চয় আমার নেত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে বিন্দুমাত্র চিন্তা করবেনা এতে কোন সন্দেহ নেই। আমার সাধারণ জ্ঞানে যা বুঝলাম এসব নেতাকর্মীদের ইন্ধন বা পেট্রোনাইজ করছে কেন্দ্র থেকে, এ-ই যদি হয় মাঠের অবস্থা! তাইলে গণভবনে যাতায়াত করা মানুষগুলোর কাছে আমাদের নেত্রী কতটুকু নিরাপদ? 

আরেকটু সহজ করে বলি এতদিন যারা আ.জ.ম নাছির উদ্দীনকে নিয়ে প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েছে তারাই নতুন ভাবে আমিনুল ইসলামকে অপরাজনীতিতে যুক্ত করেছে। ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। জামাত-বিএনপির তকমা লাগিয়ে দিচ্ছে এক আওয়ামী লীগ অন্য আওয়ামী লীগকে আর দূর থেকে এসব দেখে হাসছে আসল জামাত-বিএনপি। জামাত-বিএনপি একজন আরেকজনকে বলে দেখ দেখ আমাদের উপস্থিতি না থাকলেও আমাদের নাম বেঁচে আছে আওয়ামী লীগের মাঝে।

আমাদের সবার ধারণা জামাত-বিএনপি কিংবা অনান্য বিরোধী দলগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে! ধারণা একেবারেই ভুল ওরা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত প্রতিনিয়ত, হায়েনার দল চুপ করে আছে কিন্তু বসে নেই, এরা আওয়ামী লীগের ভেতরেই আছে, চিহ্নিত জামাত-বিএনপি আওয়ামী লীগে প্রবেশ না করলেও আওয়ামী লীগের ভেতরে খন্দকার মোশতাকের অনুসারীদের দিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যার জীবন্ত প্রমাণ সদ্য গ্রেফতার হওয়া রকি বড়ুয়া। পূর্বপুরুষ ত্যাগী আওয়ামী লীগার হলে হবে না, দলের প্রতি তার ত্যাগ কি তা খতিয়ে দেখা দরকার এবং দলের প্রতি তার অবস্থান নিশ্চিত করাও সময়ের দাবি।

নগর হতে গ্রামে কিংবা ওয়ার্ড পর্যায়ে এখন আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। প্রবীণ নেতা বাধ্য হয়ে জীবন বৃত্তান্ত দিচ্ছে দলের প্রতি তার ত্যাগের কথা উল্লেখ করে। এখানে কারও উদ্দেশ্য শুধু নতুন প্রজন্ম বা আগামীর বাংলাদেশকে জানিয়ে রাখার জন্য আবার কারও উদ্দেশ্য এলাকায় প্রভাব বিস্তারের প্রয়োজনে। উদ্দেশ্য যা-ই হোক দলের প্রতি ত্যাগের কথা উল্লেখ করে আগামী প্রজন্মকে জানিয়ে রাখা নিঃসন্দেহে ভালো দিক, যাতে আগামীতে দেশের জন্য, দলের জন্য অবদান রাখতে অনুপ্রাণিত হন। তবে যদি কোন প্রবীণ নেতা নতুনদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে দলের ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরেন তবে তা রাজনীতিবিদদের জন্য খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাজনকও বটে।

সুবিধাভোগীরা সবসময় সুবিধা ভোগ করে বিদায় নেয়। তাদের নামে বাংলা অভিধানে আলাদা শব্দ চয়ন হয়েছে সুবিধাভোগী। তাই এদের নিয়ে বেশি চিন্তা করার দরকার নেই, এদের কাজ হলো ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে সুবিধা হাতিয়ে নেওয়া। ভাবনার বিষয় একটাই আওয়ামী লীগ সেজে যারা আওয়ামী লীগের ক্ষতি করছে তাদেরকে চিহ্নিত করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিহ্নিত করতে হবে তাদেরকে যারা আওয়ামী পরিবারে ভাঙ্গন সৃষ্টি করছে, যারা আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে অথচ আওয়ামী লীগের অপপ্রচারে লিপ্ত তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। তা না হলে যেকোন সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় আছি, এ শঙ্কা শুধু একা আমার নয় পুরো সচেতন মহলের। তাই দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন আপনার আশেপাশে থাকা এবং গণভবনে আসা-যাওয়া করা মানুষগুলোর গতিবিধি লক্ষ্য করুন, যে বা যারা মাঠের সঠিক তথ্য আপনার কাছে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত করছে তাদেরকে দ্রুত চিহ্নিত করুন, তা না হলে সোনার বাংলার অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে যেকোন মূহুর্তে।

লেখক: লায়ন এম আইয়ুব- সমাজকর্মী ও কলামিস্ট।

লায়ন এম আইয়ুব

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়