Cvoice24.com


স্থগিতই থাকছে চসিক নির্বাচন; বহাল থাকবে বর্তমান পরিষদ?

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ৪ জুলাই ২০২০
স্থগিতই থাকছে চসিক নির্বাচন; বহাল থাকবে বর্তমান পরিষদ?

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত থাকা যশোর-৬ ও বগুড়া-১ আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে যাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। একই সময়ে স্থগিত হওয়া এই দুটি উপ-নির্বাচনের তারিখ শনিবার (৪ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের জরুরি বৈঠকে আগামী ১৪ জুলাই ঘোষণা করা হয়েছে। 

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় এ দুটি আসনের উপ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বাধ্য হলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না থাকার সুযোগে স্থগিতই থাকছে চসিক নির্বাচন। কেননা ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে চসিক নির্বাচন। তাই সেই রিস্ক নিতে রাজি নয় ইসি।এদিকে আগামী ৫ আগস্ট শেষ হবে চসিকের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ। এরপরও করোনার এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে না ইসি। ৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে নতুন করে তফশীল ঘোষণা করতে হবে চসিক নির্বাচনের। ইসির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এমনই জানিয়েছে। 

ফলে এখন চসিকে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন পরিষদই কি বহাল থাকবে নাকি প্রশাসক নিয়োগ হবে তা নির্ধারণ করবে স্থানীয় সরকার। তবে স্থানীয় সরকার আইনে দুই সুযোগ থাকলেও একটি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে  স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বলেছেন, বর্তমান পরিষদই বহাল থাকবে নতুন নির্বাচিত পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত।  

শনিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচন। স্থানীয় সরকার পরিষদের ভোটে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সেভাবে নেই। যার কারণে কমিশন ওই নির্বাচনের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। উপযুক্ত সময় বুঝে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে।’

ইসি সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সরকারের। তাই চসিকসহ অন্যান্য নির্বাচন সরকার যখন চাইবে, তখন করবে ইসি। সে অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এ বলা আছে, ‘এই আইনের অধীন কোন নতুন সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হইলে অথবা কোন সিটি কর্পোরেশন বিভক্ত করা হইলে অথবা কোন সিটি কর্পোৱেশন মেয়াদোত্তীর্ণ হইলে, সরকার, সিটি কর্পোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত উহার কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে, একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ প্রদান করিতে পারিবে।’

আরও বলা হয়েছে, ‘সরকার, প্রয়ােজনবােধে যথাযথ বলিয়া বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়ােগ করিতে পারিবে। প্রশাসক এবং কমিটির সদস্যবৃন্দ, যদি থাকে, যথাক্রমে মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করিবে।’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনেই সরকারকে দুদিকেই সুযোগ দিয়েছে। সরকার চাইলে বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে (৫ আগস্ট) নতুন করে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে আবার সরকার চাইলে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন পরিষদকেই বহাল রাখতে পারে।

তবে এ করোনাকালে সরকার দ্বিতীয় সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷ এরকম ইঙ্গিতও মিলেছে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলাল উদ্দীন আহমদের বক্তব্যে। তিনি সম্প্রতি একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এখন যেহেতু নির্বাচন করার কোনও পরিবেশ নেই। তাই নতুন করে আরেকটি পরিষদের কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান যে পরিষদ তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।’     

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচনে সাধারণত মিটিং হয় মিছিল হয়, গণজমায়েত হয়। এসবতো সাধারণত রিস্কি। হয়তো দেখছি যে করোনা যাচ্ছে না। আমাদের করোনা নিয়েই থাকতে হবে তাহলে নির্বাচন পেছাতে হবে।’

এবার স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম। নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে ২৬৯ জন প্রার্থী রয়েছেন।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ছিল ২৭ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই হয়েছে ১ মার্চ। আপিল ২ থেকে ৪ মার্চ, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৮ মার্চ। আর প্রতীক বরাদ্দ হয় ৯ মার্চ। ভোটগ্রহণের কথা ছিল ২৯ মার্চ। তবে ভোটারসহ প্রতিদ্বন্দ্বী ৬ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম বাদে অন্য পাঁচ প্রার্থী একযোগে নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়েছিলেন। পরে সমালোচনার মুখে নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন।  

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করেছিল ইসি। এ সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট। বর্তমান মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়