Cvoice24.com


করোনায় বিধ্বস্ত চসিকের রাজস্ব খাত

প্রকাশিত: ১০:০০, ৭ জুলাই ২০২০
করোনায় বিধ্বস্ত চসিকের রাজস্ব খাত

বিধ্বংসী করোনায় মাটিতে মিশেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব খাত। চসিক বাজেট ২০১৯-২০ এবং ২০১৮-১৯ দুটি অর্থ বছরের মার্চের শেষ সময় থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ৩ মাসের তুলনামূলক চিত্রে চসিকের রাজস্ব আদায় কমেছে প্রায় ২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অথচ ব্যয় থেমে নেই, শুধু থমকে গিয়েছে আয়। 

এমন বাস্তবতার শেষ পরিণতি কি হতে পারে তার হিসাব মিলাতে রিতীমত ঘাম ছুটছে কর্মকর্তাদের। করোনার আঁচে যেন ক্ষত-বিক্ষত পুরো চসিক!

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক বছরের শেষ সময়ে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ৪ মাসে মূলত বাৎসরিক রাজস্ব আদায় হয় চসিকের। কিন্তু চলতি অর্থ বছরের এই ৪ মাসের শুরুর দিকেই পড়ে করোনার থাবা। ফলে আদায় হয়নি কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব। 

চসিক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম সিভয়েসকে বলেন, ‌‘করোনার কারণে চলতি অর্থ বছরে আয় বঞ্চিত হয়েছে চসিক। সাধারণত অর্থ বছরের শেষের দিকে চসিকের রাজস্ব আদায় ভালো হয়। কিন্তু এই বছর ওই সময়ে করোনা থাবা পড়েছে।’

রাজস্ব আদায়ের বিভিন্ন খাত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত অর্থ বছরের তুলনায় আয় বাড়ার কথা থাকলেও উল্টো কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। পৌরকর, ভূমি হস্তান্তর এস্টেট,  কিংবা ট্রেড লাইসেন্স খাতের মত মোটা দাগের এক একটি খাত করোনার আঁচে ছিন্ন ভিন্ন হয়েছে। 

গত অর্থ বছরের শেষের দিকের তুলনায় (মার্চের শেষ থেকে জুন) চলতি অর্থ বছরের শেষের দিকে এক একটি খাতের অর্থ আদায় কম হয়েছে ২ থেকে ৩ গুণ। রাজস্ব আদায়ের তিনটি খাত (প্রমোদ কর, যানবাহন অযান্ত্রিক খাত ও রিক্সা লাইসেন্স) থেকে করোনাকালীন সময়ে আয় হয়নি কোন অর্থ। 

গত অর্থ বছরের উল্লেখিত সময়ে পৌরকর খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ৩৮ কোটি ৮৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা। কিন্তু চলতি অর্থ বছরে উল্লেখিত প্রায় ৩ মাসে (করোনাকালীন সময়ে) আয় হয়েছে প্রায় ২৭ কোটি ২ লাখ ১৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ করোনার দুই অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনামূলক চিত্রে চলতি অর্থ বছরে আদায় কমেছে প্রায় ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। 

একইভাবে ভূমি হস্তান্তর খাতে উল্লেখিত সময়ের তুলনামূলক চিত্রে আদায় কমেছে প্রায় ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা, এস্টেট খাতে আদায় কমেছে প্রায় ৬ কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার টাকা, ট্রেড লাইসেন্স খাতে আদায় কমেছে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। বিজ্ঞাপন কর খাতে আয় কমেছে প্রায় ২৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং যানবাহন (যান্ত্রিক)  খাতে উল্লেখিত সময়ের তুলনামূলক কম আদায় হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

সব মিলিয়ে বলতে গেলে গত অর্থ বছরের এপ্রিল-১৯ থেকে জুন-১৯ (৩ মাসে) এইসব খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল প্রায় ৬৫ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু চলতি অর্থ বছরের এপ্রিল-২০ থেকে জুন-২০ (করোনা কালীন ৩ মাসে) রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত বছরের উল্লেখিত সময়ের তুলনায় চলতি বছর রাজস্ব আদায় কম হয়েছে প্রায় ২৯ কোটি ৩৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা। 

রাজস্ব আদায় খাতের এমন জীর্ণ দশায় শঙ্কা প্রকাশ করে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘করোনার উদ্ভুত পরিস্তিতে চসিকের অবস্থা খুবই নাজুক। এমন অবস্থায় প্রতি মাসে কর্মকর্তাদের বেতন দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্তিতির শেষ পরিণতি কি হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আসলে এখন তো কিছু করার নেই। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আমরা চিঠি দিয়েছি। চসিকের বকেয়া কর পরিশোধে অনুরোধ জানিয়েছি। এখন সরকারি খাত থেকেই মোটা দাগে কিছু অর্থ আদায় হচ্ছে। সাধারণ খাতের অবস্থা খুবই নাজুক।’

-সিভয়েস/এপি/এসএইচ/এমএম

আসিফ পিনন

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়