হাটহাজারী হেলথ কমপ্লেক্স নিয়ে করোনা রোগীদের বিস্তর অভিযোগ
হাটহাজারী উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে ভর্তিকৃত করোনা রোগীদের নানা অভিযোগ।
রোববার (২ আগষ্ট) সরেজমিনে হেলথ কমপ্লেক্সে প্রতিবেদককে অভিযোগ তুলে ধরেন করোনা রোগীদের জন্য সদ্য অক্সিজেন সেন্ট্রাল লাইন স্থাপনকৃত ওয়ার্ডটিতে ভর্তিকৃত করোনায় আক্রান্ত তিন রোগী।
তারা জানায়, ভর্তির সাতদিন অতিবাহিত হলেও কোন মশারী দেয়া হয়নি। অনেক বলার পর এক সপ্তাহ পরে একবার ওয়ার্ডটি পরিষ্কার করেছে। বেডসিট পাল্টাতে বার বার বলা হলেও তারা কর্ণপাত করেনা। গরীব অসহায়দের ব্যয়ভার স্থানীয় সাংসদ গ্রহণ করলেও তাদের আকুতি আমলে না নিয়ে তাদের টাকায় ওষুধ সরবরাহের চাপ। ওয়ার্ডবয় কিংবা নার্সদের সাথে কথা বলাই দায়। করোনা রোগীদের ভাল চিকিৎসার ব্যাপারে যে প্রচার তা পুরোপুরি সঠিক নয় বলেও জানান তারা। তবে খাবারের বিষয়ে কোন অভিযোগ নেই রোগীদের।
উত্তর মাদার্শা এলাকার মো. ইলিয়াছ হোসেন (৭০) জানান, আমি গরীব মানুষ। ভর্তির প্রথমদিনই ডাক্তার নার্সদের জানিয়েছি। চমেকে পাঠালে গাড়ি ভাড়া দেয়ার ক্ষমতাও আমার নেই। আমার ওষুধপত্র যা লাগে তা আপনারা ব্যবস্থা না করলে আমার মরণ ছাড়া উপায় নেই। দুএকদিন তারা কিছু ওষুধ দিলেও একটা (সুঁই) ইনজেকশন আমাকে কিনে দিতে হয়। যার মূল্য চারশো টাকারও বেশী। গতকাল শনিবার সুঁইটি পুষ করার সময় তাদের আবারো জানাই আমার অক্ষমতার কথা কিন্তু সে (যে সুঁই পুষ করে) আবারো জানায় আমাকে কিনে দিতে হবে।
বেডসিট উঁচিয়ে রক্তের দাগ দেখিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা সুস্থ হতে ভর্তি হয়েছি কিন্তু রাতে খেতে হচ্ছে মশার কামড়। রুমে যে আসে তাকেই বলি মশারীর কথা কিন্তু কে শুনে কার কথা।
মির্জাপুর ইউনিয়নের বেনি বড়ুয়া বলেন, চিকিৎসার জন্য যাবতীয় ওষুধ আমার পরিবার কিনে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা মশার কামড়ে অতিষ্ট যদিও সার্বক্ষণিক পাখা চলছে। ওয়ার্ডের মেঝটি সহজে পরিষ্কার করা হয়না।
রাউজান থানার মানিক বড়ুয়া জানান, ৩০ জুলাই ভর্তি হয়েছি। ভর্তির প্রথমদিন ডাক্তার দেখলেও এ পর্যন্ত দেখাতো দুরের কথা কেমন আছি জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করেনি কেউ। ডাক্তার কথা বললেও আমাদের ভাল লাগতো।
রোগীদের সাথে কথা বলার সময় কয়েকজন নার্স ওয়ার্ডের দরজায় দাড়িয়ে রোগীদের অভিযোগ মিথ্যে বুঝানোর চেষ্টা করলেও মশারী, রুম পরিষ্কার না করা, ওষুধ কেনার সামর্থ নেই ইলিয়াছকে বাহির থেকে ওষুধ কেনার চাপ প্রয়োগের প্রশ্নে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
শিবু নামে এক ওয়ার্ডবয় মশারীর ব্যাপারে বলেন, তাদের মশারীর কথা আমাদের বলেনি কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে মশারীর জন্য বলতে হয় কিনা প্রশ্নে কিছু না বলে দ্রুত সটকে পড়েন।
রোগীদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ইলিয়াছ নামে এক রোগীকে আমরা ওষুধ দিচ্ছি সমাজ কল্যাণ সংস্থাও ওষুধ দিয়েছে তারপরও উনার অভিযোগটি খতিয়ে দেখব।
মশারী না দেয়া ও ওয়ার্ড অপরিষ্কারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু কর্মচারীর কারণেই আমাদের দুর্নাম হয়। রোগীদের সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
জানতে চাইলে নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, যদি মশারী না থাকে আমি মশারীর ব্যবস্থা করে দিব। বাকী অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, এসব ঘটনা সত্যি হলে খুবই দুঃখজনক। আমি টিএসও'র সাথে এসব বিষয়ে আলাপ করে সমাধানের চেষ্টা করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বি বলেন, আমি অবশ্যই টিএসও'র সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
হাটহাজারী প্রতিনিধি