Cvoice24.com

এজহারে অভিযোগ
ওসি প্রদীপের নির্দেশে মেজর সিনহাকে গুলি করেন লিয়াকত

প্রকাশিত: ০৯:১০, ৫ আগস্ট ২০২০
ওসি প্রদীপের নির্দেশে মেজর সিনহাকে গুলি করেন লিয়াকত

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসের নির্দেশে সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করেছেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। এমনকি ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলেওআসেন। তিনি এসেই তখনও জীবিত থাকা মেজর সিনহাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার শরীরে লাথি মারেন! মৃত্যু নিশ্চিত হলেই একটি 'ছারপোকা গাড়ি'তে তুলে মেজর সিনহাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।

বুধবার (৫ আগস্ট) দুপুরে টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে এসব অভিযোগ করেন বাদী সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। মামলার শুনানীকালে তিনি হতবিহ্বল, শোকাহত অবস্থায় ছিলেন। 

গত ৩১ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১০ টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছরা পুলিশ চেকপোস্টে মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।

ওই মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নাম্বার আসামি করা হয়েছে। 

অন্যান্য আসামীরা হলেন- বাহারছরা তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা। তবে ওই মামলায় মোট ৯ আসামির তালিকায় পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের নাম নেই।

মামলাটি 'ট্রিট ফর এফায়ার' হিসেবে আমলে নিয়ে ৩টি আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের দেয়া আদেশে পুলিশকে বলা হয়েছে, মামলাটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে। দ্বিতীয় আদেশে বলা হয়, মামলাটি রেকর্ডের পর এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র‌্যাব) মামলাটি তদন্ত করবে। তৃতীয় আদেশে বলা হয়, আগামি ৭ কার্য দিবসের মধ্যে মামলার অগ্রগতি আদালতকে অবহিত করতে হবে।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ‘৩১জুলাই রাতে একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে রাত আনুমানিক সাড়ে টার দিকে মেজর (অব) সিনহা মো. রাশেদ খান নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পৌছলে ১নং আসামি লিয়াকত ও ৩নং আসামি এস আই নন্দ দুলাল রক্ষিত গাড়ি গতিরোধ করলে মেজর সিনহা পরিচয় দেন। এরপরও সিনহার সঙ্গে থাকা ক্যামরাম্যান সিফাতকে টানা হেচড়া করে গাড়ী থেকে নামিয়ে ফেলে পুলিশ সদস্যরা। এসময় সিফাত দুই হাত উচু করে গাড়ীতে বসে থাকা সিনহার পরিচয় দেন। পরিচয় দেয়ার পরও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন পুলিশ সদস্যরা। 'তোর মত অনেক মেজর দেখেছি' বলে সিনহাকেও গাড়ী থেকে নামিয়ে ফেলে তারা। এরপর মুহুর্তেই কয়েক রাউন্ড গুলি করলে সিনহা মাটিতে লুটিয়ে যায়। এসময় মেজর সিনহা জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা তাকে চেপে ধরে পুনরায় মাটিতে ফেলে দেয়। 

মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ১নং আসামি পরিদর্শক লিয়াকত আরও এক রাউন্ড গুলি করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করে টেকনাফ থানা পুলিশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। 

সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি ধাপাচাপা দেয়ার জন্য ইয়াবা, গাজা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনে দুটি মামলা দায়ের করা হয় বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। 

আদালত থেকে বেরিয়ে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, ‘ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নির্দেশনা মতে পরিদর্শক লিয়াকত ঠান্ডা মাথায় গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। পরে আমার ভাইয়ের শরীরে ও মুখে বিভিন্ন জায়গায় পা দিয়ে লাথি মেরে মুখ বিকৃত করার চেষ্টা করে। এসময় অন্যান্য আসামিরা তাদের সহযোগিতা করে। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমি চাই আমার ভাই রাশেদের হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসুক। দোষীদের শাস্তি কামনা করছি।'

বুধবার দুপুরে (৫ আগস্ট) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে
কক্সবাজারের এসপির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবার মতো কিছু পায়নি মন্ত্রণালয়। বিষয়টি তদন্তাধীন, তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। 

মেজর সিনহার বোনের মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ যদিও বর্তমানে সেনা প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশ প্রধান বেনজির আহমদ কক্সবাজার পরিদর্শনেে আছেন।  

ঘটনার দুদিন পর টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলিসহ ২০ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। 

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডে  মেজর সিনহা তাঁর কক্সবাজারমুখী প্রাইভেট কারটি নিয়ে টেকনাফের বাহারছরা শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের চেকপোস্টে পৌঁছালে গাড়িটি পুলিশ থামিয়ে দেয়। 

তখন তিনি উপর দিকে তার হাত তুলে তার প্রাইভেট কার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলী পরপর ৩ রাউন্ড গুলি করে হত্যা করে বলে সেনা সদর থেকে গণমাধ্যমে প্রেরিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়।

ঘটনা তদন্তে গত ২ আগস্ট চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোঃ মিজানুর রহমানকে আহবায়ক করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্ত্বা বিভাগ। ৪ আগষ্ট থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে।

-সিভয়েস/এমএম

ইমাম খাইর, কক্সবাজার

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়