Cvoice24.com


একচুয়াল কোর্টে স্বস্তিতে আইনজীবীরা, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ৫ আগস্ট ২০২০
একচুয়াল কোর্টে স্বস্তিতে আইনজীবীরা, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

করোনাভাইরাসের কারণে ভার্চুয়াল থেকে দীর্ঘদিন পর আদালতের একচুয়াল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ বুধবার (৫ আগষ্ট) এ কার্যক্রম শুরু হয়। এতে স্বস্তি ফিরেছে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মাঝে। প্রথমদিনই আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের হাঁকডাকে মুখর ছিল পুরো আদালত পাড়া।

করোনাভাইরাস শুরুর পর গত ১০ মে আদালতে ভার্চুয়াল ব্যবস্থা শুরু হয়। লঘু মামলার জামিন শুনানি, রিমান্ড শুনানি ছাড়া আদালতের কার্যক্রম প্রায় বন্ধই ছিল। পরে অবশ্য বিভিন্ন মামলার আসামিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতেই উচ্চ আদালত ভার্চুয়াল কোর্ট ব্যবস্থা চালু করেন।

তবে আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩০ জুলাই উচ্চ আদালত ১৪ টি নির্দেশনাসহ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। সে প্রজ্ঞাপনে দেওয়ানী আদালত, ফৌজধারী আদালত ও ট্রাইবুনালসমূহে শারিরীক দুরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে একচুয়াল কোর্ট চালুর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেই সাথে বিলুপ্ত হয় গত ১০ জুলাই থেকে চলে আসা ভার্চুয়াল কোর্টের সকল ধরনের কার্যক্রম।

একচুয়াল কোর্ট পরিচালনায় উচ্চ আদালতের ১৪ নির্দেশনায় বলা আছে- শারিরীক ও সামাজিক দুরত্ব সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এজলাস সাক্ষীর ডক (উইটনেস বক্স) এবং কাঠগড়ার প্রয়োজনীয় অংশে গ্লাস দিয়ে পৃথক পৃথক প্রতিরোধক প্রকোষ্ঠ ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি আদালত ভবনের প্রবেশ পথে ও প্রকাশ্য স্থানে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা হিসেবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেসিন স্থাপনসহ সাবান পানির ব্যবস্থা করতে হবে। আদালত পাড়ায় আগত সকলকে মাস্ক ও হাতমোজা (গ্লাভস) পরিধান করতে হবে। আগতদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আদালত পাড়ায় আসা থেকে বিরত থাকতে হবে। ১ টি মামলার শুনানিতে প্রত্যেক পক্ষে সর্বোচ্চ ২ জন করে আইনজীবী অংশ গ্রহণ করবেন৷ এজলাস কক্ষে কোনোভাবেই ৬ জনের অধিক লোকের জনসমাগম করা যাবে না। প্রত্যেককে ৬ ফুট দুরত্ব অবশ্য নিশ্চিত করতে হবে এবং জামিন শুনানি ও আমলী আদালতে ধার্য তারিখের হাজিরার জন্য কারাগারে থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা যাবে না।

এদিকে বুধবার দুপুরে আদালত পাড়ায় সরেজমিনে গেলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। মাস্ক ও হাত মোজা ছাড়াও আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও আদালত কর্মকর্তাদের দেখা যায়। ৬ জনের কথা বলা হলেও আদালত কক্ষে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীতে ভরা ছিল। কয়েকটি ছাড়া কোনো এজলাস ও সাক্ষীর ডকে গ্লাস দ্বারা প্রতিরোধক প্রকোষ্ঠ দেখা যায়নি। তবে বেশ কিছু আদালতে কক্ষে গ্লাসের প্রতিরোধক প্রকোষ্ঠ প্রস্তুতির কাজ চলতে দেখা যায়।

এদিকে প্রথম দিনই একচুয়ালি ৫ টি মামলার শুনানি করেছেন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ১৫ টি মামলার শুনানি করেছেন মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং ২৫ টি মামলার শুনানি করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-৭। কিছু আদালত ছাড়া প্রায় সবকটি আদালতই এমন শুনানি করেছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল, সন্ত্রাস দমন ট্রাইবুনাল ও বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বুধবার কোনো রকম শুনানিই অনুষ্ঠিত হয়নি। সন্ত্রাস দমন ও দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল সূত্র জানায়, আগামী সপ্তাহ থেকে শুনানি শুরু হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বুধবার প্রথমদিন হওয়ায়  সেভাবে একচুয়াল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে শুরু হবে একচুয়াল কোর্টের যাবতীয় কার্যক্রম। একচুয়াল কোর্ট আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থে খুবই প্রয়োজন ছিল। এটি অবশ্যই স্বস্তির খবর। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কতৃপক্ষের কঠোর হতে হবে। অন্যথায় একচুয়াল কোর্টের বদৌলতে করোনার বিস্তার ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আইনজীবী আসাদুজ্জামান খান সিভয়েসকে বলেন, আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করেই জীবনযাপন করেন। দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেক আইনজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিষয়টি উচ্চ আদালত বিবেচনায় নিয়ে ভার্চুয়াল কোর্ট ব্যবস্থা তুলে নিয়ে একচুয়াল কোর্ট কার্যক্রম চালু করেছেন। এটি আইনজীবীদের জন্য অবশ্যই স্বস্তির বিষয়। এখন কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করলেই হবে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়া উদ্দিন সিভয়েসকে বলেন, আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রভাব পড়ে ছিল। সেই সাথে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আশা করি সবকিছু এখন ঠিক হয়ে যাবে। একচুয়াল কোর্টের বদৌলতে সকলের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসবে।

সিভয়েস/এসএইচ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়