Cvoice24.com


চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৭ আগস্ট ২০২০
চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী

চট্টগ্রামে আবারও উর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সামাজিক দূরত্ব,  গণপরিবহনে স্বাস্থ্য বিধি না মানা এবং কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যাপক জনসমাগমের কারণেই ধীরে ধীরে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমিত হয়েছে ১২৮ জনের শরীরে। চলতি মাসে এক দিনে সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি একটি রেকর্ড। চট্টগ্রামের ৭টি ল্যাবে ৮১২টি নমুনায় ১২৮ জনের করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। এই নিয়ে চট্টগ্রামে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৮৭৪ জন। এদের মধ্যে নগরীতে ১০ হাজার ৪৪৮ জন। চলতি মাসে বিগত ছয়দিনে ৪২৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। যদিও এরমধ্যে গত ২ আগস্ট শুধু রোগী শনাক্ত হয় নয়জন। 

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। ৩ এপ্রিল প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৭২ জন। এরপর গত মাসের ৩০ জুন পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছায় ৮ হাজার ৮৫২ জনে। এর মধ্যে শুধু জুনের ২৯ দিনে শনাক্ত হয় ৫ হাজার ২শজন রোগী। এরপর ১ জুলাই ২৭১ জন শনাক্ত হয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ১২৩ জনে দাঁড়ায়। এর গত জুলাই মাসে শনাক্ত হয় ৫ হাজার দুইশ এর অধিক।

এদিকে, গত ১ আগস্ট ঈদুল আযহার দিন চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে ২৭৬ জনের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করে ৩০ জনের পজেটিভ পাওয়া যায়। যদিও এরপর দিন ২ আগস্ট ওই দুই ল্যাবে ১০৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এদের মধ্যে শুধুমাত্র নয়জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়। এরপর ৩ আগস্ট ১৪০ টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭টি পজেটিভ আসে। এরপর চট্টগ্রামে চারটি ও কক্সবাজারে একটি ল্যাবে ৪ আগস্ট নমুনা পরীক্ষা হয় ৬৮০টি। এরমধ্যে পজেটিভ আসে ১১৯ জনের। ৫ আগস্ট পজেটিভ আসে ১২১ জন। সর্বশেষ আগস্ট পজেটিভ আসে ১২৮ জনের।

এভাবে ঈদ পরবর্তী প্রতিদিন রোগী বাড়ায় শঙ্কিত চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমিত হয়েছে উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ঈদে যেহেতু পশু কোরবানীতে লোক জড়ো হয়েছে, সেখানে সংক্রমিত হয়েছে। শহর থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে শহরে মানুষের আসা যাওয়া হয়েছে। এর আগে পশুরহাটে গিয়েছে অথছ স্বাস্থ্যবিধি মানেনি। তাই সবমিলিয়ে উপসর্গহীন পজেটিভ রোগীর সংর্স্পশে এসেছে নন কভিডরা। অনেকে উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করাইনি, কোয়ারেন্টাইন না মেনে ঘুরেছে। তাই আবার রোগী বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বিপদ। এখন উচিত লক্ষণ মনে হলেই পরীক্ষা করানো উচিত। তাতেই ঝুঁকি কমবে। 

সিভিল সার্জন কার্যালয় হতে প্রাপ্ত করোনা শনাক্তকরণ প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় করোনায় এই পর্যন্ত মারা গেছে ২৪০ জন। এদের মধ্যে নগরীর ১৬৭ ও বিভিন্ন উপজেলার রয়েছে ৭৩ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় জেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে জেলায় সুস্থতার হার বাড়ছে। 

চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ঈদকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলায় আমাদের মধ্যে একটি আশংকা আছে সংক্রমণ বাড়ার। তবে সুস্থতার হারও ভালো। গত ২৪ ঘন্টায় ১২৮ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। এই পর্যন্ত চট্টগ্রামে হাসপাতাল থেকে ছাড়প্রাপ্ত রোগী সংখ্যা ২ হাজার ৯৫৬ ।

তিনি বলেন, ঈদ পরবর্তী ১৪ দিন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এই সময়ে হোম আইসোলেশন মেনে চলতে হবে। যদিও আমাদের হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা প্রস্তুত আছে। বর্তমানে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল মিলে ৬০ শতাংশ শয্যা খালি আছে। এখন সবার উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।  

এদিকে গণপরিবহন ও রাস্তাঘাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সংক্রমণ বাড়ছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম জেলার সাবেক সিভিল সার্জন মুক্তিযোদ্ধা ডা. সরফরাজ খান বাবুল বলেন, ঈদ পরবর্তীতে কোন স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না গনপরিবহনে। এক সিটে গা ঘেষাঁঘেষি করে অন্যযাত্রী বসাচ্ছে। জেলার দূরপাল্লার যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেই স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রীবহন করছে। এসব কারণেই করোনা সংক্রমণ ছাড়াচ্ছে। 

তিনি বলেন, সামাজিক দুরত্ব বজায় না থাকলে এবং গনপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে রোগের বিস্তার হবে। হাটবাজার অলিগলিতে আগের মতো চলছে সব। ঈদ পরবর্তী প্রতিদিন রোগী বাড়ছে, এভাবে সবকিছু অমান্য করলে কভিড প্রতিরোধ সম্ভব হবে না

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়