Cvoice24.com


বন্দরের উদ্বৃত্ত অর্থ যাচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে, স্বকীয়তা নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৯ আগস্ট ২০২০
বন্দরের উদ্বৃত্ত অর্থ যাচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানে, স্বকীয়তা নিয়ে প্রশ্ন

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরের কোষাগারে উদ্ধৃত অর্থ দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে অর্থের পরিমাণ নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অর্থের পরিমাণ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে প্রতুত্তরের অপেক্ষায় কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, সরকার স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমা দেয়ার আইন পাস করেছে। ফলে রাষ্ট্রের ৬১টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানকে অর্থ জমা দিতে হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। চট্টগ্রামে উল্লেখযোগ্য উপার্জনকারী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে চবক থেকে তিন হাজার কোটি টাকা মন্ত্রণালয়ে এবং পায়রা বন্দর ড্রেজিংয়ের জন্য ৪৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা চাওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, 'সবগুলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমা দেয়ার আইন করা হয়েছে। তাই স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকেও মন্ত্রণালয় টাকা চেয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এখনও কোনো টাকা পাঠানো হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থের পরিমাণ প্রসঙ্গে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এখন তাদের রিপ্লাইয়ের (প্রত্যুত্তর) অপেক্ষা করছি।’

চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্বৃত্ত টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্বৃত্ত টাকার পরিমাণ ৩ হাজার ৪৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। মন্ত্রণালয় আমাদের কাছ থেকে তিন হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। অন্যদিকে পায়রা বন্দরের ড্রেজিংয়ের জন্য অনুদান হিসেবে চাওয়া হয়েছে ৪৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আমরা কত দিব, তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এটা নিয়ে দেন-দরবার হতে পারে। আলোচনার প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। 

এদিকে উদ্বৃত্ত সব অর্থ সরকারকে দিলে বন্দরের নিজস্বতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করলে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা হারাবে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থের জন্য সরকারের উপরই নির্ভরশীল হতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর তার সমস্ত উদ্বৃত্ত টাকা যদি সরকারকে দিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে বন্দরের আর কিছুই করার থাকবে না। এরপরে চট্টগ্রাম বন্দর কোন ধরনের প্রকল্প নিতে চাইলে তখন তাকে সরকারের উপর নির্ভরশীল হতে হবে। সুতরাং এমন সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য সহ সকল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে।’


তার কথায় সুর মিলিয়ে সিভয়েসের প্রতিবেদককে বললেন ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘বন্দরের কাছে কত টাকা আছে, তা স্বাভাবিকভাবে আমরা জানি না। কিন্তু সরকার যদি বন্দরের উদ্বৃত টাকা নিয়ে যায়, তাহলে বন্দর কিভাবে চলবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।’

বন্দরের অর্থ ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবে কিনা জানতে চাওয়া হয় অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলামের কাছে। 

তিনি বলেন, ‌‘ঢালাওভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া মোটেই ঠিক হয়নি। এটি সেন্ট্রালাইজড (কেন্দ্রীয়করণ) করার একটা টেন্ডেন্সি (প্রবণতা)। এটি করার ফলে এখানে আরো রাজনীতি শুরু হবে। এছাড়াও সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থের উপর হস্তক্ষেপ করার ফলে স্বায়ত্তশাসনটা আর থাকলো না।'

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রসঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো নিবে তা সম্পূর্ণ সঠিক হবে, এমন কোনো কথা নেই। তাই সরকারের সব প্রকল্প দেশের উন্নয়নের জন্য হবে, এমনটা নয়। যেমন- রূপপুর প্রকল্প। এটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে। এ প্রকল্পটি সরকারের একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরের টাকা দিয়ে পায়রা বন্দরের কাজ হচ্ছিল। এবং সরকার চাইলে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এভাবে অর্থ নিয়ে উন্নয়ন কাজ করতে পারতো। কিন্তু তা না করে ঢালাওভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৫ আগস্ট) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেওয়ার বিষয়টি নথিভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশের ৬১টি স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও স্বশাসিত সংস্থার ব্যাংকে থাকা বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমার বিধান করা হয়। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। তবে বিলটি পাসের তীব্র বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

সিভয়েস/এসএএস

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়