Cvoice24.com


মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই গণপরিবহন-রেস্টুরেন্টে

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ১২ আগস্ট ২০২০
মাস্ক ব্যবহারে উদাসীনতা, স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা নেই গণপরিবহন-রেস্টুরেন্টে

সারাবিশ্বে এখনও কমেনি করোনার সংক্রমণ। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। এ করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হচ্ছে। করোনা মহামারির প্রকোপে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা এখন সুস্থ জীবনযাপনের এক অন্যতম প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করলেও তা মানতে নারাজ কিছু মানুষ। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত ৭ জুলাই সর্বস্তরের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে আদেশ জারি করা হলেও, সাধারণ মানুষের মাঝে তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। গণপরিবহন থেকে শুরু করে অফিস আদালতেও কেউ মাস্ক ব্যবহারে সচেতন নয়। দিনের পর দিন প্রচার-প্রচারণা, এমনকি কঠোর আইন করেও নিশ্চিত করা যায়নি। এখনও এ ব্যাপারে উদাসীন রয়েছেন অনেকেই। করোনার বিস্তার রোধে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তত পক্ষে ঘরে তৈরি কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করেও এ করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।

তবে এ ব্যাপারে ব্যবহারকারীদের দাবি, মুখে মাস্ক পরে বেশিক্ষণ হাঁটা-চলা করতে অসুবিধা হয়। একদিকে রোদের তাপ অন্যদিকে মাস্ক। এতে নিজেদের দম বন্ধ হয়ে যায়। এমন কি কারো সাথে কথা বলতে গেলে, মুখে মাস্ক থাকায় একঘেয়েমিও লাগে। দীর্ঘক্ষণ মাস্ক ব্যবহারের ফলে হাইপোক্সিয়া, শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি ও ক্লান্তি দেখা দেয় বলেও দাবি করছেন ব্যবহারকারীদের অনেকে।

আজ বুধবার সরেজমিনে গণপরিবহন ও বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষের মুখে নেই মাস্ক৷ গণপরিবহন ও রেস্টুরেন্টের চিত্র দেখে বোঝাই যাচ্ছিল না যে, দেশে করোনার সংক্রমণ আছে৷ সবাই সবার মতো আড্ডায় মেতে উঠছে। নেই কোনো স্বাস্থ্যবিধির মানার নিয়ম-বালাই। সিরিয়াল গ্রিলার নামক রেস্টুরেন্টে দেখা যায় মানুষে ভরপুর, নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব। 

মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপারে সিরিয়াল গ্রিলারে খেতে আসা সাবরিন নুজা বলেন, এ রেস্টুরেন্টে সিস্টেম ভাল থাকলেও আজকে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারটা আমিও খেয়াল করলাম। বেশি মানুষ হওয়াতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। আর স্মোকিং জোন থেকে খুব উদ্ভট গন্ধও পাচ্ছি।

স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিরিয়াল গ্রিলারের ইনচার্জ শাওন বলেন, আমাদের রেস্টুরেন্টে দায়িত্বরত সবাই মাস্ক পরিধান করে। এছাড়াও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়ে থাকে। আজকে আমাদের রেস্টুরেন্টে একটা গেট টুগেদার পার্টি ছিল। যার কারণে বেশি মানুষ ছিল।

মাস্ক ব্যবহারে সরকারি সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত আছেন জানিয়ে ‘ক্যাফে আল বাইক'র এমডি টিপু আমজাদি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমার জানা আছে। ভবিষ্যতে আমরা মাস্ক ব্যবহারে আরও সচেতন হবো। এতে করেই করোনা সংক্রমণ থেকে কিছুটা রেহাই পাবো।

এদিকে ক্যাফে আল বাইক নামক রেস্টুরেন্টের অবস্থাও ছিল লক্ষ্যণীয়। ম্যানেজার ও খাবার পরিবেশকদের কারো মুখেই নেই মাস্ক। এই রেস্টুরেন্টে ভিড় কিছুটা কম থাকলেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। 

অন্যদিকে গণপরিবহণে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে মানুষ ওঠে পরছেন গাড়িতে। চালক ও চালকের সহায়কের মুখেও নেই মাস্ক। বেশিরভাগ যাত্রীর মাস্ক থাকলেও তা মুখে নয় লাগিয়ে রেখেছিল থুতনিতে।

মাস্ক পড়ার নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে গণপরিবহনে মাস্ক না পড়া মাসুদুল শাহীর বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তা আমার জানা আছে। আমি সবসময় মাস্ক ব্যবহার করি। তাড়াহুড়া করে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে ভুলে ফেলে এসেছি।

তিনি তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান এবং আরও বলেন, গণপরিবহনে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি, তারপরও আমি ভুলে মাস্ক পড়িনি। ভবিষ্যতে আর এমন হবে না।

মাস্ক না পরে গাড়ি চালানোর কথা জানতে চাইলে বাস চালক মোহাম্মদ হারুন বলেন, সারাদিন গাড়ি চালাই, মাস্ক পড়ে থাকলে দম বন্ধ হয়ে যায়। রোদের তাপ বেশি যার কারণে মাস্ক বেশিক্ষণ পড়ে থাকতে পারিনা। তবে যাত্রীদের সবার উচিত মাস্ক পড়া। কিন্তু অনেকে পড়ে না কেন তা আমি জানি না।

বাড়তি ভাড়া নিয়েও স্বাস্থ্যবিধি না মানার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সিংগেল সিট হিসেব করে মানুষ অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছি। কিন্তু অনেকে জোর করে উঠে যায়। তারা নিজেদের ভাল না বুঝলে আমাদের কি করার আছে!

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা শুধু স্বাস্থ্যবিধি মানার নিয়ম-কানুনগুলোর  বার্তা পোঁছে দিতে পারি। এছাড়া এসব নিয়ম মানার ব্যাপারে দেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।

এ বিষয়ে জানতে কথা হয় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। আজকেও বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের টিম গণপরিবহন ও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে জনসাধারণের সুবিধার্থে মাস্ক বিতরণ করছে।

তিনি আরও বলেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় কেউ যদি মাস্ক ব্যবহারে অনিয়ম করে তাহলে তাদেরকে শাস্তিস্বরূপ জরিমানাও দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

মিনহাজ মুহী ও রিমন সাখাওয়াত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়