Cvoice24.com

৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
চট্টগ্রামে কোন্দলে স্থবির বিএনপির কার্যক্রম!

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৩১ আগস্ট ২০২০
চট্টগ্রামে কোন্দলে স্থবির বিএনপির কার্যক্রম!

দলীয় অন্তঃকোন্দল, বিভেদ আর সাংগঠনিক স্থবিরতায় চলছে চট্টগ্রাম বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম। কোথাও নাম সর্বস্ব আহ্বায়ক কমিটি, কোথাও হাইকমান্ডের জন্য নেতাকর্মীদের অপেক্ষা, আবার কোথাও জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের আধিপত্যের বলয়ে চলছে কার্যক্রম। এতে চরম হতাশা ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে।

দল সংগঠিত না হওয়ায় সরকার বিরোধী কোন আন্দোলন চাঙ্গা করা যাচ্ছে না বলেও মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে সাংগঠনিক স্থবিরতার জন্য সরকারের ‌‘নগ্ন মনোভাব’কে দায়ী করছেন নেতারা।

সাংগঠনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। 

জ্যেষ্ঠ ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামী প্রহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সীমিত আকারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে দলটি। 

দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে গেছে দেশে অন্যতম বৃহৎ এ রাজনৈতিক দল। সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও কারচুপিরর অভিযোগ তুলে দলটি। আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও, দাবির সমর্থনে জোরাল কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি। উল্টো হামলা-মামলার জর্জরিত হয়ে পড়ে দলটির নেতাকর্মীরা। এর পেছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে ঘুরে ফিরে আসে বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতার বিষয়টি। এরপরও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা, মনোবল ও খোঁজ খবর নিতে সাংগঠনিক সফরে যান দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জেলা, উপজেলা, মহানগর ও ওয়ার্ড কমিটির দ্রুত গঠনের প্রতিশ্রুতি ছিল নেতাদের। এরপরও পূর্ণাঙ্গ হয়নি অধিকাংশ কমিটির কার্যক্রম। সেই সাথে করোনা সংক্রমণে বন্ধ হয়ে পড়ে দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম।

শীর্ষ পদ ছাড়াই চলছে উত্তর জেলা বিএনপি:

প্রায় ৬ বছর আগে আসলাম চৌধুরীকে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানকে সদস্য সচিব ঘোষণা করে ৯১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে অবস্থান করছেন আসলাম চৌধুরী আর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মারা যান সদস্য সচিব কাজী আবদুল্লাহ আল হাসান। ফলে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ এ দুই পদ শূণ্য ছাড়াই চলছে উত্তর জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম। এমনই পরিস্থিতিতে মাঠের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের তিন ইউনিট।

এছাড়া গঠন করা হয়নি উত্তর জেলার আওতাধীন উপজেলা কমিটিগুলোও। এতে করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এ জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম। কমিটি না হওয়ায় হামলা-মামলার শিকার তৃণমূলের কর্মীরা রয়ে গেছেন পদপদবি ছাড়া।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আবদুস শুক্কুর সিভয়েসকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ দুই পদের নেতৃত্বের অভাব বোধ করছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আপাতত কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ সমন্বয় করে বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় হাইকমান্ড আসলাম ভাইকে রাখবেন নাকি নতুন নেতৃত্ব বাছাই করবেন সে অপেক্ষা দীর্ঘদিনের। যার ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে বেগ পোহাতে হচ্ছে নেতাকর্মীদেরকে। দলীয় কোন্দলও এর পেছনে কাজ করছে বলেও জানান তিনি। 

দলীয় কোন্দলের বিষয়টি সিভয়েসের কাছে স্বীকার করে কমিটির কার্যক্রমে হতাশা প্রকাশ করেছেন উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ভিপি মোহাম্মদ নাজিম।

বিষয়টি স্বীকার করে দলটির উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার সিভয়েসকে বলেন, আসলাম কারগারে থাকায় সেখানে দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। আমরা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের কাছে বিষয়টি তুলে ধরব। তবে সরকার বিরোধী আন্দোলন গতিশীল করতে কাজ চলছে বলে দাবি করেন তিনি।

দক্ষিণে মানা হয়নি হাইকমান্ডের নির্দেশনা:

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট দক্ষিণ জেলার বিএনপির কমিটি অনুমোদন দেয় বিএনপি। প্রায় এক বছর আগে অনুমোদিত কমিটিকে তিন মাসে মধ্যে জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি করতে পূর্ণাঙ্গের সময় বেধে দেয়। এক বছরেও এই নির্দেশনা মানা হয়নি। এর পেছনে নেতারা দোষ চাপালেন করোনা সংক্রমণকে।

জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলার বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মইনুল আলম ছোটন সিভয়েসকে বলেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা রয়েছে। বিশাল এলাকা আর সবার সাথে মতবিনিময় করাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এই কারণে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে। করোনা শেষ হলে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রমে জোর দেবো। 

কমিটির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান সিভয়েসকে বলেন, সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে কোথাও আমরা একটা সভা-সমাবেশ করতে পারছি না। বিএনপির এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যার নামে একাধিক মামলা নেই। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা পূর্বের উপজেলা কমিটি ভেঙ্গে দিয়েছি। নতুন কমিটির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করে কমিটি দেওয়া হবে।

খালেদার মুক্তির দাবিতে সময় পার মহানগর 

খালেদার মুক্তির দাবিতে সরব ছিল নগর বিএনপি। দাবির স্বপক্ষে দলীয় কার্যালয়ে সভা-সভাবেশ করেছে নেতাকর্মীরা। নগর বিএনপির নেতাদের সরকার বিরোধী জোড়ালো কোন আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। প্রকাশ্যে তেমন কোন্দল দেখা না গেলেও ভেতরে ভেতর তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশা প্রকাশ করছেন। তবে সদ্য মহানগর ছাত্রদলের কমিটিতে বিবাহিত স্থান দেওয়া নিয়ে শীর্ষ নেতাদের রোষানলে পড়েন শীর্ষ নেতারা।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী সিভয়েসকে বলেন, নেত্রীর গ্রেফতারের পর থেকে আমাদের আন্দোলন চলছে। এছাড়াও দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে ইতিমধ্যে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৬ টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের 
কাজ শেষ হয়েছে। থানা কমিটির কাজ শেষ পর্যায়ে। সাংগঠনিক গতিশীলতা আগের চেয়ে ভালো রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সরকার বিরোধী আন্দোলন, দলীয় কার্যক্রমে ভাটা ও কোন্দলের বিষয়ে কথা বলার জন্য মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।

এদিকে বিএনপির সাংগঠনিক স্থবিরতার পেছনে সরকারকে দায়ী করেছেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর। তিনি সিভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রামে কেনো পুরো দেশে সরকার বিএনপির উপর স্টীমরোলার চালাচ্ছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর চলছে নির্যাতন। দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা। হয়রানি করা হচ্ছে। কেউ শান্তিতে এলাকায় থাকতে পারছেনা। কোথাও কোনো মিছিল, সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। আমরা জনসম্পৃক্ততার বিষয়ে রাজপথে নামতে পারছি না। বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলে কোন্দল, বিভেদ থাকলেও সেটা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রভাব পরবেনা বলে জানান তিনি।

মোহাম্মদ নাজিম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়