Cvoice24.com


উত্তর জেলা/ শঙ্কায় ছাত্রদল, কেন্দ্রের অপেক্ষায় যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দল

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
উত্তর জেলা/ শঙ্কায় ছাত্রদল, কেন্দ্রের অপেক্ষায় যুব ও স্বেচ্ছাসেবক দল

সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা আর সাংগঠনিক কার্যক্রমে বেগবান করতে জেলা পর্যায়ে অঙ্গ সংগঠনের কমিটি পুর্নগঠনে হাত দিয়েছে বিএনপি। তবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের কারণে চট্টগ্রামে শুরুতেই হোঁচট খায় এ কার্যক্রম। ঘোষণার একদিন পরই স্থগিত করা হয় দক্ষিণ জেলা যুবদলের ১১ ইউনিটের কমিটি। এবার উত্তর জেলা বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন গোছাতে তোড়জোড় শুরু করেছে। দীর্ঘদিন পর সংগঠন পুর্নগঠনের কাজ শুরু হলেও খুশির চেয়ে অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে। ত্যাগী ও দলের নিবেদিত কর্মীদের বাদ দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের মূল্যায়নের আশঙ্কা রয়েছে-এমন অভিযোগ করেছেন অনেকে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের আর্শীবাদে টাকার বিনিময়ে পদ বাগিয়ে নেওয়ার কথাও তুলেছেন কেউ কেউ।

কমিটির সমন্বয় করতে গিয়ে জেলার নেতাদের বেগ পোহাতে হচ্ছে জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের আধিপত্য আর রোষানলে। তবে নেতাকর্মীদের পূর্বের সময়ের আন্দোলনের হিসাব কষে কমিটি পূর্নগঠনের কাজ চলছে বলে জানালেন এই ইউনিটের নেতাবৃন্দরা।


অন্যদিকে পাল্টাপাল্টি কমিটিতে ধুকছে যুবদল, কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল।

উত্তর জেলা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের তৃণমূল ও বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে কমিটি গঠনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

উপেক্ষিত ছাত্রদলের ত্যাগী নেতারা:

কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে জোড়ালো ভূমিকা রাখার জন্য জেলার আওতাধীন বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এসব কমিটি গঠনের মধ্যে দিয়ে তৃণমূল, দীর্ঘদিন ধরে পদ বঞ্চিত ও হামলা-মামলার শিকার নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে চায় দলটি। কমিটির কার্যক্রমে তদারকি করতে বিভাগভিত্তিক দায়িত্ব ও সময় বেধে দেওয়া হয়। বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বিগত সময়কার কর্মীদের আন্দোলন মূল্যায়ন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থান দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। তবে কমিটিতে ঘুরেফিরে জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের বলয়, কোন্দল ও ক্ষেত্রবিশেষে অর্থ দিয়ে পদ ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। ফলে কমিটির গঠনে বেগ পোহাতে হচ্ছে নেতাদের।

জানতে চাইলে হাটহাজারী কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়া উদ্দীন সিভয়েসকে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনার অংশ হিসেবে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের কাজ চলছে। জেলা পর্যায়ের ছাত্রদলের কমিটির নেতৃবৃন্দদের ২০০৩ সালের আগে (বয়স) হতে হবে, আর উপজেলা, কলেজ ও পৌরসভা নেতৃবৃন্দদের ২০০৫ সালের (বয়স) আগে হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, অনেকে দেখা গেছে রাতে আওয়ামী লীগে যোগাযোগ করে দিনে বিএনপির সাথে যোগাযোগ করছে। অনেকে দলকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে এজেন্ডা রক্ষায় কাজ করছে। এমন অনেককে আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সিনিয়র নেতারা তাদের কমিটিতে পদ দিতে চাচ্ছে। কমিটি গঠনের কাজ সঠিকভাবে না হওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা কাজ করছে বলে জানান এই নেতা।

ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রদলের এক নেতা নাম প্রকাশ করতে সিভয়েসকে বলেন, সিনিয়র নেতাদের দিক নির্দেশনাতেই ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। নেতারা যেদিকে বলবেন, কর্মীরা সেদিকে যাবেন। কিন্তু নেতারাই যদি বলয়ে থেকে গ্রুপিং সৃষ্টি করেন সেটা দলের জন্য ক্ষতিকর। যাতে করে হতাশা কাজ করবে এমনটাই স্বাভাবিক।

তবে দলীয় শৃঙ্খলাবিধি অনুসরণ করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ছাত্রদলের কমিটি দেওয়া হবে বলে জানান উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জাহিদুল আফছার জুয়েল। তিনি সিভয়েসকে বলেন, এটি রাজনীতির একটি চলমান প্রক্রিয়া। নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে মনোবল দৃঢ় করতে কমিটি করা হচ্ছে। সিনিয়র নেতাদের পরামর্শের পাশাপাশি বিগত দিনের আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে এমনদের খুঁজে বের করা হবে। নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফরম জমা দিচ্ছেন। বিএনপির মতো বৃহৎ একটি দলে নেতা কিংবা অনুসারীদের মাঝে পক্ষ-বিপক্ষ থাকলেও কমিটি গঠনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।

পাল্টাপাল্টি কমিটিতে ধুকছে যুবদল:

দলীয় কর্মকাণ্ড কিংবা সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেয়ে পাল্টাপাল্টি কমিটি, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করে তিক্ততা বাড়িয়েছে যুবদলের নেতাকর্মীরা। ফলে বৃহৎ ইউনিটের যুবদলের নেতাকর্মীরা জোড়ালো কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। কমিটি না হওয়ায় সিনিয়রদের নেতাদের সাথে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় কমিটির কাজ চললেও, সেখানে অর্থের প্রলোভনে পদ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছে অনেকে।

মো. ইলিয়াস নামে উপজেলা যুবদলের এক নেতা সিভয়েসকে বলেন, প্রায় নয় মাস ধরে কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই ঠাণ্ডা। এর মধ্যে পাল্টাপাল্টি কমিটি হয়েছে, আবার ভেঙ্গে গিয়েছে। দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি করা আর নিজ নিজ অবস্থান থেকে করা সম্পূর্ণ আলাদা। বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে এখানে অনেকে সুযোগ নিতে চায়। সেক্ষেত্রে দলীয় পদ পদবির ক্ষেত্রে অবশ্যই বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে নির্যাতন সহ্য করেছেন তাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এখন তো অনেকে টাকার জোরে নেতা হয়ে যাচ্ছেন, পদ পদবি ভাগিয়ে নিচ্ছেন। এমনটা না হোক সেটা আশা করছি।

এ বিষয়ে উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান মো. জসিম সিভয়েসকে বলেন, আগের মতো করে যুবদলের কমিটি করা হচ্ছে না। নির্দেশনা মোতাবেক নেতাকর্মীদের কাছে ফরম বিতরণ করেছি। এখন জেলার নেতারা কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাবেন। যারা বিগত দিনের মিছিল সভা-সভাবেশ করেছেন, যাদের সম্পৃক্ততা দেখেছি তাদের অগ্রাধিকার দিব। সে প্রস্তাবনার বিষয়টি যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে পাঠানো হবে। বিভাগীয় কমিটির প্রস্তাবনা পাওয়ার পর দলীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কমিটি দিবেন।

জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দের আধিপত্যের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনীতি একটি চলমান ও ধারাবাহিক বিষয়। সবাইতো চাইবে, নিজের পছন্দসই লোকজন আসুক। এখানে কেউ পাঁচ বছর সক্রিয় রাজনীতি করবেন, কেউ আবার নিশ্চুপ হয়ে যাবে এমনটা না। আর যারা অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে পদ চাইছেন তাদের কোনো দলীয় আর্দশ নেই। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করতে।

কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক দল:

সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ দলের গঠনতন্ত্র সুসংহত করতে ছাত্রদল, যুবদলের কমিটির কাজ এগিয়ে গেলেও, থমকে গিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দলের কার্যক্রম। সাংগঠনিক স্থবিরতায় অনেকটা নিশ্চুপ সময় পার করেছেন সংগঠনের নেতারা। কেন্দ্রের নির্দেশনার অপেক্ষায় দলটির নেতা-কর্মীরা।

জানতে চাইলে উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোহাম্মদ মোরসালিন সিভয়েসকে বলেন, আমরা বিরোধী দলে রয়েছি, সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। বিরোধী দল থেকে রাজনীতি করে উপভোগ করা যায়। জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলা যায়। কিন্তু বর্তমানে সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাচ্ছে। কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। একাধিক মামলা নেই এমন কোনে নেতাকর্মী পাওয়া যাবে না। এমন অবস্থার মধ্যেও আমরা নেত্রীর মুক্তি চেয়ে আন্দোলন করেছি, জনগণের কাছে গিয়েছে। পূর্বের মতো রাজপথে থাকতে 

সংগঠনের গতিশীলতা আনতে দ্রুত কমিটির নির্দেশনা আসবে বলে মনে করছি। করোনার কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও, সাংগঠনিক কার্যক্রম আগের চেয়ে বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

সিভয়েস/এমএন

মোহাম্মদ নাজিম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়