Cvoice24.com


পাইকারিতে কমছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

প্রকাশিত: ১২:১৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
পাইকারিতে কমছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

ভারতে থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা আসার সাথে সাথে পেঁয়াজের মজুদ থাকার পরও ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি করে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ালেও আজ (বুধবার) দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জ ক্রেতাশূন্য। 

এছাড়া স্থল বন্দর বেনাপোল থেকে আজ পেঁয়াজ আসার কথা জানিয়ে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা পেঁয়াজের বাজারে আবার স্বস্তির সুবাতাস বইবে বলে আশ্বস্ত করেছে।

আজ বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, সকালে পেঁয়াজের দাম ৬৫ টাকা থাকলেও ক্রেতাশূন্য থাকায় দাম কমতে থাকে। দুপুর গড়াতে গড়াতে পেঁয়াজের দাম পড়ে ৫৫ টাকায় গড়ায়। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম আরও কমবে বলে আশা করছে। 

পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হওয়া প্রসঙ্গে কথা বলা হয় খাতুনগঞ্জের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের মার্কেট হামিদ উল্যাহ খান মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিসের সাথে। তিনি বলেন, 'বাজার আজ (বুধবার) সন্ধ্যা থেকে স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আজ বেনাপোল থেকে সাড়ে তিনশতের অধিক ট্রাকে করে পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে আসবে। আমরা নিষেধাজ্ঞা আসার আগেই পেঁয়াজ কিনে রেখেছিলাম। পেঁয়াজগুলো বেনাপোল বর্ডারে আটকে ছিলো। আজ সন্ধ্যা নাগাদ পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলো পৌঁছাবে বলে আশা করি। পেঁয়াজগুলো পৌঁছালেই দাম কমে যাবে।'

ভারতের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণে কি করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'গতবছরও এই সময়ে এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন আমরা মায়ানমার, চীন, মিশর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেছি। কিন্তু আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম দীর্ঘদিন বাড়তি ছিল। এবার আমরা সে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করবো না। তবে এজন্য সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ শুধু ব্যবসায়ীদের উপর বাজার ছেড়ে দিলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সহযোগিতা সরকারকেই করতে হবে।'

পেঁয়াজের মজুদ থাকার পরেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ভারতের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ আমদানিকারক দেশ হল বাংলাদেশ। বাংলাদেশও ভারতের পেঁয়াজের উপর নির্ভর করে থাকে। সে কারণে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরপরই বাংলাদেশের ক্রেতারা অস্থির হয়ে পড়ে। ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এখন সরবরাহ ঠিক থাকলে পেঁয়াজের দাম আর বাড়বে না।'

দুইদিন বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রির পর ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিচ্ছেন পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল হওয়ার। এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, 'ব্যবসায়ীরা সবসময়ই লাভ করতে চাইবে। তাই বলে ক্রেতাদের ঠকিয়ে লাভ করতে চাওয়া ও পারাটা মোটেই শুভ লক্ষণ নয়। সরকারের এ বিষয়ে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় বাজারিরা দেশটাকেও এরকম ছলা-কলায় বিক্রি করে দিবে।'

তিনি আরও বলেন, 'পেঁয়াজের দাম গত বছর একই সময়ে বেড়েছে। এছাড়া আমরা আরও আগে থেকে দেখে আসছি ভারতের পেঁয়াজ চাষ হওয়া রাজ্যে বৃষ্টি-বন্যায় সমস্যা হয়েছে। ফলে তাদের উৎপাদন কম হয়েছে। এরপরেও সরকার পেঁয়াজের জন্য শুধু ভারতের উপর নির্ভর করেছিলো। অর্থাৎ সরকার বাজার এনালাইসিস (পর্যবেক্ষণ) করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের যে পরিমাণ পেঁয়াজের মজুদ থাকার কথা, তাতে ভারতের রপ্তানি বন্ধ করার প্রভাব সাথে সাথে পড়ার কথা না। কিন্তু সরকার এ জায়গায় উদাসীন। প্রশাসন যদি ব্যবসায়ীদের সাথে পেরে উঠতো, তাহলে বাজার মনিটরিংয়ে কড়াকড়ি থাকতো। ব্যবসায়ীরা তাদের মর্জি মতো ক্রেতাদের জিম্মি করতে পারতো না।'

উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের পরিচালক ড. মো. আজহার আলী বলেন, বাজার বিশ্লেষণের কাজটা আমরা করি না‌। তবু এটি বলতে পারি, পেঁয়াজের দাম বাড়তি থাকবে না। কারণ চট্টগ্রাম অফিস থেকে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত বিশ্বের পাঁচটি দেশ থেকে ১০ হাজার ৯১ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে ২৪টি প্রতিষ্ঠান। এই পাঁচটি দেশ হলো চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিশর ও তুরস্ক। এর বাইরে চট্টগ্রামের ট্রেড ইমপ্যাক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকার উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্র থেকে ২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে। সব মিলিয়ে এ মাসের শেষ থেকে ১২ হাজার টন পেঁয়াজ দেশে আসতে শুরু করবে। পেঁয়াজ যেহেতু পচনশীল, তাই ব্যবসায়ীরা অসৎ আচরণ না করলে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকবে।'

-সিভয়েস/এসবি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়