Cvoice24.com


রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রডের বদলে বাঁশের স্ল্যাব তৈরি

প্রকাশিত: ২০:১৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রডের বদলে বাঁশের স্ল্যাব তৈরি

ছবি: সিভয়েস

কক্সবাজরের উখিয়া টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে মানবিক সেবার নামে লোপাট। মানহীন সামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্ল্যাব। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং খাল খননের নামে চলছে পুকুরচুরি। রয়েছে টেন্ডারবিহীন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নামে-বেনামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে নিজেরাই কাজ করার অভিয়োগও। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করছে সাইট মেইনটেন্যান্স প্রকৌশল প্রজেক্ট (এসএমইপি)। বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবির অর্থায়নে খাল খননের কাজটি করে এসএমইপি এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২০ এক্সটেনশনে বেশ কিছু বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা হয় স্ল্যাব। একইভাবে খাল খননের পর ব্লক বসানোর নামেও হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম।

জানা গেছে, আইওএমসহ আইএনজিওগুলো ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র নিলেও রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে নিজেরাই কাজ করছে। এসএমইপি মূলত: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গাড়ি চলাচল উপযোগী সড়ক তৈরি, প্রয়োজনীয় উপকরণ সাপ্লাই, প্রাথমিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সাইট প্রস্তুতির কাজ করে থাকে। তারমধ্যে ডাব্লিউএফপি ব্যয়বহুল মেগা রোড, ব্রীজ, কালভার্টের কাজ করে। হাসপাতাল, সড়কের ছোট-খাট অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো সংস্কার করে থাকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। এছাড়াও বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবি’র অর্থায়নে ইউএইচসিআর এবং এলজিইডি যৌথ ভাবে ক্যাম্পে বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ করে।

এদিকে, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি স্ল্যাব ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে ধরা পড়ে লোপাটের বিষয়টি। রড এর পরিবর্তে স্ল্যাব তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের কাঞ্চি। দেওয়া হয়েছে উপরের অংশে সামান্য সিমেন্টের প্রলেপ। যার ফলে কাজ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে সব।

এলজিইডি উখিয়া’র সহকারী প্রকৌশলী সোহরাব আলীর কাছে স্ল্যাব তৈরির কাজে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহারের বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাইট মেইনটেন্যান্স প্রকৌশল প্রজেক্ট (এসএমইপি) এর নামে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডাব্লিউএফপি), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং ইউএইচসিআর যৌথ ব্যবস্থাপনায় রাস্তা নির্মাণ, সাইট রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার, নিষ্কাশন চ্যানেল পরিষ্কার, পুনর্বাসন অ্যাক্সেস, নিত্যপণ্য সরবরাহ করে থাকে।

এ প্রসঙ্গে এসএমইপি’র প্রকল্প প্রকৌশলী হাসান তারেক অফিসের বরাতে দিয়ে বলেন, শুরুর দিকে পরীক্ষামূলক বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ৫শ পিচ স্ল্যাব তৈরি করা হয়েছিল। যা গুণগত মান যাছাইয়ের পরে আর করা হয়নি।   

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো: রবিউল ইসলাম বলেন, এসএমইপি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সব কাজ নিজেরাই করে। এলইজিডি শুধুমাত্র খাল খননের কাজ করে থাকে। যা ইতোমধ্যে ৫০ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে খাল খননের পুরো কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবি’র অর্থায়নে খাল খননের কাজ গুলো এলজিইডি যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঠিকাদারের মাধ্যমে করে আসছে।

উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক পলাশ বড়ুয়া বলেন, কয়েকদিন পূর্বে উখিয়ার মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২০ এক্সটেনশনে বেশ কিছু বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ভাঙ্গা স্ল্যাব দেখা যায়। একই ভাবে খাল খননের পর ব্লক বসানোর নামেও হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। কেননা, উপরের অংশে সামান্য সিমেন্টের প্রলেপ দেয়া হয়েছে। যা কাজ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে। এভাবে কোটি কোটি টাকা দূর্নীতি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করছে এসএমইপি। বিশ্ব ব্যাংক এবং এডিবির অর্থায়নে খাল খননের কাজটি করে এসএমইপি এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এসএমইপি কোনো ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করে না। রোহিঙ্গা শ্রমিকদের দিয়ে নিজেরা কাজ করে এবং নিজেরাই মনিটরিং করে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাল খননের কাজে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান তারেক বলেন, ইউএনএইচসিআর, ডাব্লিউএফপি এবং আইওএম তিনটি সংস্থার অর্থায়নে যৌথ সমন্বয়ে এসএমইপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। খাল খননের বিষয়ে তাঁর কাছে কোন তথ্য নেই। এটা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডাব্লিউএফপি)র কাজ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যতীত স্থানীয়দের জনগোষ্টির কল্যাণে কাজ করে কিনা জানতে চাইলে হাসান বলেন, শুধুমাত্র রাজাপালং ইউনিয়নের ফলিয়াপাড়ায় একটি ব্রীজ ছাড়া অন্য কোথাও এ পর্যন্ত কোন কাজ করা হয়নি।

-সিভয়েস/এসসি

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়