Cvoice24.com


লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণে আল্লামা শফীর জানাযা সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৮:২৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
 লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণে আল্লামা শফীর জানাযা সম্পন্ন

ছবি: সিভয়েস

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সম্পন্ন হয়েছে দেশের শীর্ষ কওমি আলেম ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীর নামাজে জানাজা। জানাযায় ইমামতি করেছেন তার বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসূফ।

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ১০ মিনিটেতার নামাজে জানাযা সম্পন্ন হয়। দেশের শীর্ষ কওমি আলেমের জানাজায় শরীক হয় তাঁর লাখ লাখ ভক্ত ও অনুসারীরা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আলেমরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

মূলত, শনিবার ফজরের পর থেকেই হাজার হাজার আলেম, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জড়ো হয়েছিলেন।জানাজার সময় ঘোষণার পরে কুমিল্লা, লক্ষীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালীসহ আশপাশের জেলাগুলোর বহু কওমি মাদ্রাসা থেকে বিপুল শিক্ষার্থী ও আলেমরা জানাজায় অংশ নিতে আসেন।

জানাযায় আরও উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারীর এমপি ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, গাজীপুরের মেয়র এ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম, জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডি আইজি আনোয়ার হোসেন, জেলার এসপি রশিদুল হকসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এদিকে জানাযা আয়োজনকে ঘিরে হাটজারারী এবং এর আশপাশের এলাকাজুড়ে বাড়ানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয় হাটহাজারী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতে। এছাড়াও ৪ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন ৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন জানান, আল্লামা শফী হুজুরের নামাজে জানাযা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ঘটেনি। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করায় সবাইকে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

তিনি আরও বলেন, জানাযা-দাফন শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা পরিস্থিতির উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত হাটহাজারীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে বলেও তিনি জানান।

এর আগে, শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে আল্লামা শফীর মরদেহ পৌঁছায় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল হাটহাজারী মাদ্রাসায়। এরপর তার লাশ জনসাধারণের দেখার জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

১৯১৬ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তার বাবার নাম বরকম আলী এবং মায়ের নাম মেহেরুন্নেছা বেগম। তিনি দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক।

রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায় শিক্ষাজীবন শুরু হয় আল্লামা শফীর। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (পটিয়া জিরি মাদ্রাসা) পড়াশোনা করেন তিনি। পরে হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা এবং ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন।

১৯৮৬ সালে হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক (মুহতামিম) হিসেবে দায়িত্ব নেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। বৃহস্পতিবার একদল শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।

দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এবং বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে কওমি মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর শীর্ষ সংগঠন আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া, বেফাকুল মাদারিসের চেয়ারম্যান ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম নামে একটি ধর্মীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। যে সংগঠনের আমির হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তার আগে বৃহস্পতিবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের এম্বুলেন্স যুগে হেফাজত আমীরকে প্রথমে চট্টগ্রামের চমেক হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এয়ার এম্বুলেন্স যুগে ঢাকায় নেওয়া হয়। ঢাকায় নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আল্লামা আহমদ শফী।  

-সিভয়েস/এপি/এসসি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়