Cvoice24.com


পেঁয়াজের ডামাডোলে মূল্য বাড়ছে চাল ডাল তেল চিনির

প্রকাশিত: ১৫:০১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০
পেঁয়াজের ডামাডোলে মূল্য বাড়ছে চাল ডাল তেল চিনির

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া ও রিমন সাখাওয়াত

সবাই যখন পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মশগুল, তখনই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালো ভোগ্য ও ভোজ্য পণ্যের। পেঁয়াজের মতো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ সকল পণ্যের বাজার। 

রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে ও প্রশাসনকে চাপে ফেলে তাদের এ মূল্যবৃদ্ধির কৌশলকে কাজে লাগিয়ে সুকৌশলে মূল্যবৃদ্ধির কৌশল কাজে লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যেটিকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের টার্গেট বিজনেস বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। আর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সরবরাহ কম থাকা ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।

আজ সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে সরেজমিনে দেখা যায়, পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সাধারণ মানের আতপ চাল কেজি প্রতি ৩ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকায়, সাধারণ মানের সিদ্ধ চাল কেজি প্রতি ২ টাকা বেড়ে ৪৮ টাকায়, পামঅয়েল মণ প্রতি ৭৯০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৪০ টাকায়, সয়াবিন তেল মণ প্রতি ২৬০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৪৬০ টাকায়, চিনি মণ প্রতি ৪০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার কেজি প্রতি সাধারণ মানের মসুর ডাল ৬ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায়, ভালো মানের মসুর ডাল ৭ টাকা বেড়ে ১০৪ টাকায়, সাধারণ মানের মুগ ডাল ৪ টাকা বেড়ে ৯৫ টাকায়, ভালো মানের মুগ ডাল ৩-৪ টাকা ১১২ টাকায়, দেশি হলুদ ৬ টাকা বেড়ে ১০৫ টাকায় ও ভারতীয় হলুদ ৩ টাকা বেড়ে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ খান মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস সিভয়েসকে বলেন, 'আজ (সোমবার) ভারতের বাজার খুলেছে। গত শনিবারে ১০০ গাড়ির মত পেঁয়াজ আসলেও পঁচা পেঁয়াজ থাকায় অনেক ব্যবসায়ী তা নেয়নি। বাজারে যারা আমদানিকারক, তারাই আবার রপ্তানিকারক। ভারত নির্ভরতা আমাদের বাজারকে গরম করে রেখেছে। আমরা যদি অন্যান্য দেশ যেমন- মিশর, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে পারি অস্থিতিশীল বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে।'

চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম সিভয়েসকে বলেন, 'দেশি চালের পাশাপাশি আমদানি করা সব প্রকারের চালের দাম বেড়েছে। সরকার শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত না নিলে চালের দাম কমার সুযোগ নেই।'

চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতা সোলাইমান বাদশা সিভয়েসকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে এখন সব পণ্যের দাম বাড়তি। করোনায় ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কিছুটা স্বাভাবিক করার জন্য তারা হয়তো দাম বাড়িয়েছে। ফলে এর প্রভাব আমাদের উপর পড়ছে। এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়াটা সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভর করছে।'

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের  কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, 'যেকোন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলেও, ব্যবসায়ীরা যদি সৌজন্যতা না দেখায় কোনভাবে দাম কমানো সম্ভব হবে না। ব্যবসায়ীরা ২৫ টাকায় কেনা পেঁয়াজ বিক্রয় করছে ৬০ টাকায়। এই তিনগুণ মুনাফার আশায় তারা বাজার দর বৃদ্ধি করে রেখেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখন সব পণ্যবাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও প্রশাসনকে চাপের মুখে রেখে এসব করছে। আমরা দেখেছি, পণ্যের দাম বাড়ার ঠিক পূর্বমুহূর্তে খাতুনগঞ্জে জেলা প্রশাসনের অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে প্রশাসন সফলভাবে অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি। ফলে দাম বাড়ার পরেও জেলা প্রশাসনকে খাতুনগঞ্জে কোন অভিযান পরিচালনা করতে দেখিনি।'

বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলা হয় একুশে পদক বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলামের সাথে। তিনি সিভয়েসকে বলেন, 'এটা ব্যবসায়ীদের একটা কৌশল। তারা পন্য অনুযায়ী সিন্ডিকেট করে টার্গেট বিজনেস করার চেষ্টা করছে। পেঁয়াজের দাম কিছুদিনের মধ্যে কমে আসলেও চালের দাম কমতে আরো সময় লাগবে। তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে এবং বাড়তি দামে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুট করছে।'

-সিভয়েস/এডি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়