Cvoice24.com


ব্যবসায়ী অপহরণে রানাসহ আসামি ৫, গ্রেফতার নেই এখনও

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ১৭ অক্টোবর ২০২০
 ব্যবসায়ী অপহরণে রানাসহ আসামি ৫, গ্রেফতার নেই এখনও

অপহরণের পর পুলিশি তৎপরতায় মুক্তি পেয়েছেন ব্যবসায়ী সাইফুল। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নওশাদ মাহসুদ রানা নামে একজনের সাথে আর্থিক লেনদেনের জেরেই মূলত এ অপরণ। সেকারণে ভিকটিমকে উদ্ধারের পাশাপাশি থানায় রানাসহ ৫ সহযোগির বিরুদ্ধে মামলাও রেকর্ড হয়েছে। এরপরও ওসি বলছেন মামলার সত্যতা পেলে তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অজামিনযোগ্য ধারার এই মামলার আসামিদের পুলিশ ঘটনার দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার করতে পারেনি। 

সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলামকে (৪০) ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণেই করা হয়েছিল অপহরণ। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক নওশাদ মাহমুদ রানার নেতৃত্বেই এ অপহরণ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাতভর নানা নাটকীয়তার পর ওই ব্যবসায়ী মুক্তি পেলেও আটক হয়নি কেউই। 

পুলিশ বলছে, তদন্ত করা হচ্ছে এ মামলা তারপর সত্যতা পেলেই গ্রেফতারসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অথচ আইনজীবীরা বলছেন, অপরণের মামলায় মামলা রেকর্ডের সঙ্গে সঙ্গেই আসামিদের গ্রেফতারের এখতিয়ার রাখে পুলিশ। আর এটি অজামিনযোগ্য ধারাও বটে। কিন্তু এরপরও কেন জানি পুলিশ রহস্যজনকভাবে অপহরণ মামলার এজহার নামীয় পাঁচ আসামিকে গ্রেফতারে অনীহা দেখাচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে শনিবার সন্ধ্যায় সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর ও উপ কমিশনার (পশ্চিম) ফারুখ উল হককে বারবার কল করা হলেও কল রিসিভ না করায় সিএমপির বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে হালিশহর থানার ওসি বলেছেন, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন কিন্তু আসামি কেন গ্রেফতার করা হয়নি তার সদুত্তর দেননি। 

শুক্রবার রাতে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলামের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস হালিশহর থানায় একটি মামলাটি করেন। মামলার এজহারে নওশাদ মাহমুদ রানা ছাড়াও চারজনের নাম উল্লেখ রয়েছে। তারা হলেন- পাপ্পু (৪৫), মো. মাসুদ প্রকাশ পাগলা মাসুদ (৩৫), মো. ইকবাল (৩৬) ও মো. সাখাওয়াত (৩২)। এরা ছাড়াও মামলায় আরও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে তাকে তার বাসার কাছে খুলশীর কনকর্ড টাওয়ার এলাকায় গাড়িযোগে এনে ছেড়ে দেন। তারও আগে দুপুরে পরিবারের সামনে থেকে হালিশহরের বৌবাজার এলাকার দুলহান কমিউনিটি সেন্টার থেকে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে অস্ত্রের মুখে গাড়ী তুলে অপহরণ করা হয়।

তবে ঘটনার ৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কিংবা মামলা দায়ের একদিন পার হলেও কোনো আসামিকেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তবে পুলিশ শুক্রবার রাতে যে সাঁড়াশি অভিযান করেছিল মূলত তা ভিকটিম সাইফুলকে উদ্ধারের জন্যই। বিষয়টি শুক্রবার রাতে স্বীকার করেছেন উপ কমিশনার ফারুখ উল হকও। 

তবে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ বলছেন ভিন্ন কথা। তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সিভয়েসকে বলেন, 'খুন অপহরণ ধর্ষণ এসব মামলা থানায় রেকর্ড হলেই আসামিকে ধরতে আইনি কোনও বাধা নেই। এসব মামলার ধারাগুলো অজামিনযোগ্য ধারায় হয় বলে সাধারণত পুলিশ আসামিদের সাথে সাথে ধরে ফেলে।' 

মামলার বাদী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, শুক্রবারে দুলহান কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে সাইফুলসহ আমরা সবাই ছিলাম। হঠাৎ বিকাল তিনটার দিকে 'আওয়ামী লীগ নেতা' নওশাদ মাহমুদ রানা ও তার সহযোগীরা জোরপূর্বক ও অস্ত্রের মুখে একটি নোহা গাড়িতে তুলে  সাইফুলকে অপহরণ করেন।

সাইফুল ইসলাম একজন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। তার প্রতিষ্টানের নাম আর.এস কর্পোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক অংশীদার ছিলেন নওশাদ মাহমুদ রানা। রানার আর্থিক অনিয়ম দৃষ্টিগোচর হলে শালিশী মাধ্যমে সাইফুল ইসলাম তার সাথে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন। সে সাথে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত নওশাদ মাহমুদ রানার যাবতীয় পাওয়া বুঝিয়ে দেয়া হয়। মূলত এসব কারণেই নওশাদ মাহমুদ রানা দলবল নিয়ে সাইফুল ইসলামকে দিনে দুপুরে অপহরণ করেন। থানায় করা মামলার এজহারে এসব বিষয় তুলে ধরেন সাইফুল ইসলামের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।

এদিকে এ ঘটনায় করা মামলায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেননি পুলিশ। পুলিশ বলছে, তারা মামলাটি তদন্ত করছেন। দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম সিভয়েসকে বলেন, 'বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। পর্যোলচনা করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

আসামিরা আওয়ামী লীগ বা যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলেই কি গ্রেফতার করা হচ্ছেনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, 'তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

অথচ দিন দুপুরে সিনেমা স্টাইলে অপহরণের পর পুলিশই ভিকটিম উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে। থানায় মামলাও রেকর্ড করেছে। কিন্তু এখনও ঘটনার সত্যতা পাবার কথা বলে দায় এড়াচ্ছে পুলিশ।

ভিকটিমের জবানবন্দি 

এদিকে অপহরণের পর ব্যবসায়ী সাইফুলকে নোহায় করে প্রথমে রানার বাপের বাড়ি চান্দগাঁওয়ের গোলাম আলী নাজির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুই ঘণ্টা নির্যাতন করার পর একটা স্ট্যাস্পে ৭০ কোটি টাকা ৬ মাসে রানাকে দিতে হবে এমন প্রতিশ্রুতি নিতে চাপ দেওয়া হয়। এরপর সেখানে পুলিশি অভিযানের খবর পেয়ে ব্যবসায়ী সাইফুলকে বলিরহাটের একটি বাসায় নিয়ে রাত পর্যন্ত রাখা হয়। সেখানেও বারবার পিটানো হয় স্ট্যাস্পে সাইন করতে৷ পরে পুলিশের তৎপরতায় ও এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় সমঝোতা বৈঠকের পরই মধ্যরাতে প্রথমে তাকে ওই নেতার বহদ্দারহাটের বাসায় আনা হয়৷ সেখান থেকে রাত আড়াইটার দিকে চোখ বেঁধে মোটর সাইকে করে তার বাসার কাছে খুলশীর কনকর্ড টাওয়ার এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। রানার এসব অপকর্মে জড়িত ছিলেন ১৫ থেকে ২০ জন সহযোগি। অপহৃত ব্যবসায়ী সাইফুল নিজেই এসব তথ্য জানিয়েছেন। একই সাথে রানার শাস্তির দাবির পাশাপাশি নিজের পরিবার ও নিজের জীবননাশের হুমকি পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

সিভয়েস /এডি/এসএইচ

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়