Cvoice24.com


মালিক-শ্রমিকের জেদে দেশের ক্ষতি কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২২ অক্টোবর ২০২০
মালিক-শ্রমিকের জেদে দেশের ক্ষতি কোটি টাকা

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে সারাদেশে নদীপথে নৌ-যান শ্রমিকরা বেতন-ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে ধর্মঘট করছে। ধর্মঘটে ৫৪ টি জাহাজ অচল পড়ে থাকায় প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে ৫ লাখ ৪০ হাজার থেকে ৮ লাখ ১০ হাজার ডলার জরিমানা। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হওয়া প্রায় ২১ লাখ টন ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আটকে থাকায় অস্থির হতে পারে দেশের বাজার ব্যবস্থা। এরপরেও শ্রমিক সংগঠন দাবি আদায়ে যেমন অনড়, তেমনি মালিকপক্ষও এ সংকট নিরসনে তৎপর নয়।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় বহির্নোঙ্গরে অলস বসে আছে ৫৪ টি মাদার ভেসেল। এসব জাহাজের মধ্যে খালাসরত ৪০ টি জাহাজে পণ্য রয়েছে প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন। বড় জাহাজগুলোতে শস্যদানা, গম, চিনি, ডালজাতীয় খাদ্যপণ্য ছাড়াও সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, চুনাপাথর ও জিপসাম, পাথর ইত্যাদি পণ্য রয়েছে। বন্দরে অলস বসে থাকার কারণে ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার হিসেবে প্রতিদিন ৫৪ টি জাহাজের জন্য প্রায় ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ ডলার জরিমানা গুনতে হচ্ছে শিপিং এজেন্টদের।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি শফিকুল আলম জুয়েল বলেন, প্রতিটি মাদার ভেসেলের আকার অনুযায়ী একদিনের জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার ডলার ডেমারেজ চার্জ গুনতে হয়। নৌযান শ্রমিক এবং মালিক পক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের শিপিং সেক্টর। এভাবে চলতে থাকলে মাদার ভেসেলগুলো আর বাংলাদেশে আসতে চাইবেনা। এর কারনে শিপিং সেক্টরে বাংলাদেশে সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।

লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল সূত্রে জানা যায়, ধর্মঘটের কারণে ক্লিংকারবাহী ১০ টি জাহাজে ১,৪৮,২১১ মেট্রিক টন, স্ল্যাগবাহী ১ টি জাহাজে ২৯ হাজার মেট্রিক টন, লাইম স্টোনবাহী ৩ টি জাহাজে ১,০০,৪৬৫ মেট্রিক টন, জিপসামবাহী ১ টি জাহাজে ৪৫,৯০০ মেট্রিক টন, বল ক্লে বাহী ৩ টি জাহাজে ৭,৬৬০ মেট্রিক টন, চিনিবাহী ১ টি জাহাজে ৪৩,১৯০ মেট্রিক টন, স্টোন বাহী ১ টি জাহাজে ১৭০০ মেট্রিক টন কয়েলবাহী ২ টি জাহাজে ৩০,৫৮০ মেট্রিক টন, গমবাহী ৮ টি জাহাজে ২৫৫৮৭৪ টন এবং ১০ টি জাহাজে  বিভিন্ন ২,৩২,৭৬০ টন বিভিন্ন পণ্য আটকা পড়ে আছে। এছাড়া ৩ টি জাহাজ বার্থিংয়ের ১১ টি জাহাজ পণ্য খালাসে নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর এবং বিভিন্ন ঘাটে অবস্থানরত জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। তবে বন্দরের জেটিতে কনটেইনার জাহাজে পণ্য ওঠানামা অব্যাহত আছে।

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট কর্মসূচিকে অযৌক্তিক এবং বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশেনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক। তিনি বলেন, তাদের দাবি মানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ধর্মঘট প্রত্যাহার না করলে আমরা শ্রমিকদের সাথে বৈঠকে বসবো না। 

চট্টগ্রাম জেলা নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি মো. নবী আলম বলেন, 'নৌযান শ্রমিকদের খাদ্য ভাতা, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা সরঞ্জাম, নিয়োগপত্র প্রদান, নৌপথে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৯ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ধর্মঘট চলছে। মালিক পক্ষ এসব দাবি বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। উল্টো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি পূরণ করা হবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে। আমাদের দাবি না মানা হলে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।'

প্রসঙ্গত, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের  ১১ দফা দাবি আদায়ে গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এ কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।

-সিভয়েস/এসবি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়